ঢাকা: আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নাট্যকার ও শিল্প সমালোচক প্রয়াত সাঈদ আহমদ স্মরণে শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (২৮ মে) সাঈদ আহমদ ফাউন্ডশেন ফর কালচার অ্যান্ড আর্টস (সাফকা) এর আয়োজনে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।
সেমিনারে সাঈদ আহমদের নাটক 'মাইলপোস্ট' এর উপর মূল প্রবন্ধ 'অ্যাবসার্ড যেখানে বাস্তবতার বহুধা পরত দ্বারা প্রবিষ্ট' উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার ও পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফখরুল আলম।
দ্যা মাইলপোস্ট নাটকটির রচনাকাল ১৯৬২ থেকে ১৯৬৪ সাল। এটি পরবর্তীতে আতাউর রহমানের হাতে মাইলপোস্ট নামে বাংলায় অনূদিত হয় এবং ১৯৬৫ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকা শহরে সাতরং সৌখিন নাট্যসংস্থার প্রযোজনায় বাংলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রথম মঞ্চায়িত হয়।
এ নটাকে মূলত দুর্যোগ অথবা সঙ্কটপূর্ণ অবস্থায় মানুষ কেমন আচরণ করে তা অ্যাবসার্ড বর্ণনায় তুলে ধরেছেন নাট্যকার। দুর্ভিক্ষ অথবা ধ্বংসযজ্ঞের মুখে মানুষ কীভাবে একে অপরের দেখানো ভুল পথে চালিত হয় তা উপস্থাপনের মাধ্যমে মাইলপোস্ট নাটকটি মানুষের জন্য একটি হাতিয়ার হিসেবে প্রতীয়মান। আজকের বাংলাদেশের বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার সঙ্গেও প্রাসঙ্গিক নাটকটি।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, সাঈদ আহমদ পূর্ব বাংলা/পূর্ব পাকিস্তানে আঘাত হানা দুর্ভিক্ষ, বন্যা, মহামারি, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার 'বাস্তবতা'র নির্বাচিত টুকরো ছবি পুনর্বিন্যাসের মাধ্যমে তার অ্যাবসার্ড নাট্য নির্মাণ করেন।
সাঈদ আহমদ তার শৈল্পিক দক্ষতা প্রয়োগের মাধ্যমে ১৯৫০ এর দশকের পূর্ববঙ্গের দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের বস্তুগত দৈনন্দিন জগত ও জীবনের প্রকৃত অবস্থা অথবা সত্য তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন। বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, মাইলপোস্ট নাটকটি স্পষ্টতই দুর্ভিক্ষকবলিত বাংলা/পূর্ব বাংলা/পূর্ব পাকিস্তানের বস্তুগত 'বাস্তবতা' আবাহন করে। এই আবাহনের কারণে অ্যাবসার্ড রীতির প্রতি মাইলপোস্ট নাট্যের আনুগত্য ক্ষুণ্ণ হয় না। কারণ নাট্যকার দৈনন্দিন জীবন উপলব্ধ 'সত্যের' অধিক তীক্ষ্ন ও গভীর অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন 'সত্য' জ্ঞাপনে সক্ষমতা অর্জনের উদ্দেশ্যে অ্যাবসার্ড নাট্যকৌশল গ্রহণপূর্বক দুর্ভিক্ষের বস্তুগত 'বাস্তবতা'র এক নির্বাচিত ও পুনর্বিন্যাস্ত রূপ উপস্থাপন করেছেন।
‘সাঈদ আহমদের অ্যাবসার্ড দর্শন স্বতন্ত্র। কারণ তিনি নাট্যকৌশল প্রয়োগ করেন এমন কল্পলোক নির্মাণের উদ্দেশ্যে যা দুর্ভিক্ষ, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বিপর্যয় এবং রাজনীতির বহুধা পরত বিশিষ্ট বাস্তবতা প্রবিষ্টে সক্ষম। ’
সেমিনারে মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার ও পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শাহমন মৈশান এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কামালউদ্দিন কবির।
সাঈদ আহমদের জন্ম ঢাকায়, ১৯৩১ সালের ১ জানুয়ারি। বাবা মির্জা এফ আহমদ ও মা জামিলা খাতুন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেন। পরে স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রি নিয়েছেন লন্ডনের স্কুল অব ইকোনমিক্স থেকে।
নানামুখী প্রতিভার অধিকারী হলেও সাঈদ আহমদ মূলত নাট্যকার হিসেবেই খ্যাতিমান ছিলেন দেশে-বিদেশে। ষাটের দশকে তিনি আমাদের দেশের নাট্যচর্চায় আধুনিকতার সংযোজন করেছিলেন ইউরোপীয় ধারার ‘অ্যাবসার্ড’ নাট্যরচনার মাধ্যমে।
১৯৭৪ সালে দেশে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৯৩ সালে ফ্রান্সের সম্মানজনক ‘অফিসিয়ার ডেস আর্টস ডেস লেটারার্স পুরস্কারসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক এবং পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি তার জীবনাবসান হয়। নাট্যকলায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৭৩১ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১৬
এএ