ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বিতর্কিত স্ট্যাটাস সরিয়ে নিলেন মলয় রায়চৌধুরী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৪৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭
বিতর্কিত স্ট্যাটাস সরিয়ে নিলেন মলয় রায়চৌধুরী কবি মলয় রায়চৌধুরী

ঢাকা: বাংলাদেশের প্রকাশকদের মৌলবাদী বলে ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাস প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ‘হাংরি জেনারেশন’র মূল রূপকার কবি মলয় রায়চৌধুরী।

সারাবিশ্বে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শত শত বাঙালি কবি, লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী ও প্রকাশকের সমালোচনা এবং ভৎর্সনার মুখে প্রবীণ এ কবি নিজের অবস্থান বদল করতে বাধ্য হলেন।

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে দেওয়া বিতর্কিত স্ট্যাটাসটি সরিয়ে শুক্রবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টায় দিকে মলয় রায়চৌধুরী তার ফেসবুক পেজে লেখেন, “ঠিকই, বাংলাদেশে আমার বইয়ের পাঠক সম্পর্কে উৎসাহ দেখানো উচিত ছিল না।

এ নতুন স্ট্যাটাসে রাজশ্রী ঘোষ নামে একজন মন্তব্য করেছেন, “দুই বাংলাই এখন মৌলবাদীদের পদানত। চরম নোংরামি চলছে। আপনি দুঃখ পাবেন না। হেসে উড়িয়ে দিন। ”

আব্দুল কাইয়ুম নামে আরেকজন মন্তব্য করেন, “মলয়দা, আমরা যারা অভিনিবেশী পাঠক, আপনাকে জানি সেই হাংরির জন্মকাল থেকেই। কিন্তু এপার বাংলায় ব্যাপক সাধারণ পাঠক আপনার সৃষ্টিকর্ম সম্পর্কে পরিচিত হওয়ার তেমনটা সুযোগ পায়নি। তাই ব্যবসায়িক মুনাফার দিকটি লক্ষ্য করেই হয়তো এবারে প্রকাশক আপনার সাথে এই ব্যবহারটি করলো। যা হোক, এটা আমাদেরই লজ্জা। ”

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে মলয় তার ফেসবুকে  প্রথম পোস্টে অভিযোগ করেন, “কথা দিয়েও বাংলাদেশি প্রকাশকরা আমার বই ছাপেননি’।

তার এই স্ট্যাস্টাসের পর মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় ফেসবুক ব্যবহারকারী বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাংলাভাষী পাঠকদের মধ্যে। এখানে বাংলাদেশি তরুণ প্রকাশক ও ভাষাচিত্র প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী খন্দকার সোহেল উষ্মা প্রকাশ করে প্রবীণ এই কবির কাছে জানতে চান ‘কয়জন প্রকাশক?’

এরপরই মলয় রায়চৌধুরী তার ফেসবুক ওয়ালে আবার লেখেন, ‘বাংলাদেশের বইমেলায় আমার বই নেই। সেখানকার প্রকাশকরা মৌলবাদী। ’

এই মন্তব্যের পরই ফেসবুকে ঝড় তোলেন দুই দেশের বাংলা ভাষাভাষী কবি, লেখক, প্রকাশক ও পাঠকরা।  

মলয় রায়চৌধুরী তার ফেসবুকে নতুন স্ট্যাটাসে লেখেন, “ঠিকই, বাংলাদেশে আমার বইয়ের পাঠক সম্পর্কে উৎসাহ দেখানো উচিত ছিল না। ”এই স্ট্যাটাসে কমেন্ট করে কবি কাজী নাসির আলী মামুন লেখেন, “ঢালাও মন্তব্য আশা করি না, মলয় দা। বাংলাদেশের পাঠক এবং প্রকাশকরাও যথেষ্ট উদার। বাংলাদেশের বই গ্রহণে পশ্চিমবঙ্গই এখনো উদার হতে পারেনি। আশা করি বিষয়টি বিবেচনা করবেন। ”

প্রায় এমন তীর্যক মন্তব্য করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কবি শামীম রেজা, দীপু মাহমুদ, পশ্চিমবঙ্গের কবি নীলাঞ্জন সাহা, কবি গৌতম গুহ রয়, কবি সৈকত দে প্রমুখ। তাদের তীব্র সমালোচনা ও ভর্ৎসনার মুখেই মলয় রায়চৌধুরী তার অবস্থান বদলাতে বাধ্য হলেন।

১৯৬১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হাংরি আন্দোলন শুরু করেন মলয় রায়চৌধুরী, তাঁর বন্ধু দেবী রায়, বড় ভাই সমীর রায়চৌধুরী ও কবি শক্তি চট্টোপ্যাধ্যায়। পরবর্তীকালে উৎপলকুমার বসু, বিনয় মজুমদার, সুবিমল বসাক, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়, ফাল্গুনী রায়, ত্রিদিব মিত্র এবং তার বান্ধবী আলো মিত্র, সুভাষ ঘোষ, বাসুদেব দাশগুপ্ত, শৈলেশ্বর ঘোষ, প্রদীপ চৌধুরীসহ আরো অনেকে এ আন্দোলনে জড়িত হন। ১৯৬৪ সালের হাংরি বুলেটিনে মলয় রায় চৌধুরী’র ‘প্রচণ্ড বৈদ্যুতিক ছুতার’ কবিতা প্রকাশিত হয় এবং ‘হাংরি বুলেটিন ১৯৬৪’ প্রকাশের পরে ভারতীয় আদালতে হাংরি আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।

১৯৬৪ সালের ২রা সেপ্টেম্বর হাংরি আন্দোলনকারীদের ১১ জনের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ড বিধির ১২০বি (রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ), ২৯২ (সাহিত্যে অশ্লীলতা) ও ২৯৪ (তরুণদের বিপথগামী করা) ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়; এদের ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৫ সালের মে মাসে অন্য সবাইকে রেহাই দিয়ে কেবল মলয় রায়চৌধুরী’র বিরুদ্ধে ২৯২ ধারায় চার্জশিট দেওয়া হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানার কারণে উৎপলকুমার বসু অধ্যাপকের চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। প্রদীপ চৌধুরী বিশ্বভারতী থেকে বহিষ্কৃত হন। সমীর রায়চৌধুরী সরকারি চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। সুবিমল বসাক ও দেবী রায়কে কলকাতা থেকে মফঃস্বলে বদলি করে দেওয়া হয়।

গ্রেফতারের সময়ে মলয় রায়চৌধুরীকে হাতকড়া পরিয়ে, কোমরে দড়ি বেঁধে দুই কিলোমিটার হাঁটিয়ে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৯৬৬ সালে ব্যাংকশাল কোর্ট মলয় রায়চৌধুরীকে দু’শো টাকা জরিমানা, অনাদায়ে একমাসের কারাদণ্ড দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে মলয় রায়চৌধুরী কলকাতা হাইকোর্টে আপিল করেন। ১৯৬৭ সালের ২৬ জুলাই হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় নাকচ করে দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭
আরএম/এইচএ/

আরও পড়ুন
** বাংলাদেশি প্রকাশকদের মৌলবাদী বললেন মলয় রায়চৌধুরী

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।