১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয়ের পরে ২১ ডিসেম্বর থেকে আমি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির অফিসে বিভিন্ন পদে কর্মরত ছিলাম। বঙ্গভবনে বিভিন্ন সময়ে ছয়জন রাষ্ট্রপতির এবং ১৯৯৯ সালে প্রথম কেয়ার টেকার সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি শাহাবুদ্দীনের সময় অর্থাৎ ১৯৯১ সাল পর্যন্ত আমি বঙ্গভবনে উচ্চপদে বহাল ছিলাম।
শিরোনাম ‘১৫ আগস্ট ট্রাজেডি ও বঙ্গভবনের অজানা অধ্যায়’ একটি বইয়ের নাম। বইটির ভূমিকার শুরুতেই লেখক মুসা সাদিক উল্লিখিত লাইনগুলো লিখেছেন। ভূমিকার বাকি অংশে আরও বিস্তারিত বলেছেন। কিন্তু শুধু এই লাইনগুলো পড়েই বই ও বইয়ের লেখক সম্মন্ধে ধারণা করা যায়। সেইসঙ্গে এই সিদ্ধান্তেও আসা যায়, বইটি অবশ্য পাঠ্য।
বইটি অমর একুশে গ্রন্থমেলায় (২০১৭) প্রকাশ পেয়েছে। শিবু কুমার শীলের প্রচ্ছদে ১২৮ পৃষ্ঠার এ বইটি আগামী প্রকাশনী প্রকাশ করে। এর গায়ের দাম ৩০০ টাকা।
১৫ আগস্ট ট্রাজেডি ও বঙ্গভবনের অজানা অধ্যায় উৎসর্গ করা হয়েছে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান, ৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম. মনসুর আলী, এ. এইচ. এম. কামারুজ্জামান ও রুহুল কুদ্দুস এবং ৭৫ পরবর্তী দণ্ডপ্রাপ্ত সব সামরিক-বেসামরিক অফিসারসহ মুক্তিযুদ্ধের পতাকাবাহী ছাত্র-জনতার উদ্দেশ্যে।
সন্দেহ নেই, পূর্ব পাকিস্তান থেকে ধীরে ধীরে বাংলাদেশ হয়ে ওঠার সময়গুলো লেখক নিজে উপস্থিত এবং প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সব কুশীলবদের সাঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়েছেন। তিনি নিজেও একজন দায়িত্বশীল অফিসার হিসেবে মূখ্য ভূমিকা রেখেছেন। কাজেই তার অভিজ্ঞতার জায়গা থেকে যখন তিনি এরকম একটি বই লিখবেন, সেটি অবশ্যই আর বই থাকে না- হয়ে ওঠে সময়ের দলিল।
লেখক সেই দিকটিও সযত্নে পূরণ করেছেন। সেই সময়কার গুরুত্বপূণ দলিলাদি তিনি বইয়ে সংযুক্ত করছেন। যা খুবই দুর্লভ এবং স্বাধীন বাংলার ইতিহাসের জন্য অতি প্রয়োজনীয়। যখন বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইতিহাস বিকৃতির বিষয়টি সামনে আসে এবং ঘটে চলেছে। মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের জন্মলগ্নের ঐতিহাসিক বিভ্রান্তি থেকে নতুন প্রজন্ম দিশা পাবে অবশ্যই। পরবর্তীতে এ সংক্রান্ত গবেষণা কাজেও বইটির তথ্য ও নথি ভীষণভাবে কাজে আসবে।
১৫ আগস্ট ট্রাজেডি ও বঙ্গভবনের অজানা অধ্যায় ছাড়াও লেখকের রয়েছে আরও তিনটি বই- মুক্তিযুদ্ধে হৃদয়ে মম, বাংলাদেশ উইস ফ্রিডম (বাংলা) বাংলাদেশ উইনস ফ্রিডম (ইংরেজি)।
মোহাম্মদ মুসা, লেখক নাম- মুসা সাদিক ১৯৭১ সালের ৩০ অক্টোবর সাতক্ষীরায় জন্ম নেন। বাবা মরহুম মৌলভী আহমেদ আলী অবিভক্ত বঙ্গের একজন ইসলামী চিন্তাবিদ, ইমাম ও শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে মুসা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। ২৬ মার্চ চট্টগ্রামে ঐতিহাসিক কালুরঘাটে ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’ চালু হলে তিনি সেখানে যোগদান করেন। পরে তার পূর্ব অভিজ্ঞতার কারণে তিনি মুজিবনগর সরকারের তথ্য ও প্রচার মন্ত্রাণালয়ের অধীন স্বাধীন বাংলা বেতারের ‘রণাঙ্গন সংবাদদাতা’ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। বিভিন্ন রণাঙ্গণে তার অভিজ্ঞতা ও মুক্তাঞ্চল সফরের ওপর স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে তিনি ‘রণাঙ্গনে ঘুরে এলাম’ ও ‘মুক্তাঞ্চল ঘুরে এলাম’ শিরোনামে সপ্তাহে দুটি নিয়মিত কথিকা মুসা সাদিক নামে স্বকণ্ঠে প্রচার করতেন। সেই থেকে তার লেখক নাম মুসা সাদিক। পরবর্তীতে কাজ করেছেন বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে।
অবসরপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ মুসা বর্তমানে বিসিএস মুক্তিযোদ্ধা ও মুজিবনগর অফিসার-কর্মচারী কেন্দ্রীয় কল্যাণ সমিতি’র মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেইসঙ্গে চলছে দেশি-বিদেশি পত্র-পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ও অন্যান্য পেশাগত বিষয়ের উপর লেখালেখি।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৭
এসএনএস