ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | উজান

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৯ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | উজান প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প

কবি উজান পেশায় শিক্ষক। নেশা- ঘুরে বেড়ানো, ছবি তোলা।

বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগের বিশেষ আয়োজন ‘প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প’র এবারের পর্বে থাকছে, কবি উজানের নিজের লেখা প্রিয় পাঁচ কবিতা ও সেগুলো লেখার পেছনের গল্প।  


প্রিয় পাঁচ কবিতা

দৈব
        ঢাকের
সমস্ত আগে ও পরে বিষাদ
আগুনের
সমস্ত আগে ও পরে রাত
দেবীর
সমস্ত আগে ও পরে নিস্তেজ
নাস্তিকের
  কোন আগুপিছু নেই

অস্ত্রের
সমস্ত আগে ও পরে অন্তিম
অন্তিমের
সমস্ত আগে ও পরে নিঃশেষ
ভাগ্যের
সমস্ত আগে ও পরে উন্মাদ
উন্মাদের
  কোন আগুপিছু নেই

তোমার
সমস্ত আগে ও পরে শূন্য
আমার
সমস্ত আগে ও পরে শূন্য
আমাদের
সমস্ত আগে ও পরে ঈশ্বর
প্রেমিকের
  কোন আগুপিছু নেই

অন্যদিকে যাওয়ার যখন
অন্যদিকে যাবে বলেও 
তুমি এসে পড়েছ সেই ঘন চরিত্রে,
বিশ্লেষণ করা যাবে না জেনেও
ভাঙছ ভাঙছ ভাঙতে থাকো-

আকাশ ডাকো পাখি ডাকো,
একই সাথে রোদ ভাঙ‍া জল,
একই সাথে সামলে রাখো ছাইটি ও ছল

একেই কিন্তু শীতল বলে,
একেই বলে শীতল শীতল ঝর্ণাপতন,
একেই আবার হাসতে পারার সাহস বলে ;
সাহস কি আর আগের মতো তেমন গোপন?

অন্যদিকে যাবে বলেও
তুমি হঠাৎ দৌড়ে এলে শীতল দেশে-
এবার এসো, চুমু খেয়েই বেড়াতে বেরই;
বেড়ানোটুকুই বীজ ও ফসল... শীতল দেশে... রৌদ্র বপন

অন্য দিকে যাওয়ার হলেও সাহস করো;
সাহস কি আর আগের মতো তেমন গোপন? 

উড়ান
দেখ আমাদের নরম শরীর থেকে গেরুয়া ছায়া উঠে এসে
দেখা করছে হিজিবিজি ভিড়ে...
ভিড়!
অযথা মানুষের দল যেন গাছ হয়ে আছে;

ট্রেন আসবার আগে, স্টেশনের কিনারায় ফাঁকা বেঞ্চটিকে নৌকো ভেবে
আমার ছায়াটি লাফিয়ে উঠেছে তাতে-
তোমার ছায়ায় লাগে দোল, 
যাত্রা শুরু বুঝে গেলে ছায়াদের লাগে না বাকল

কী আর ঢাকবার আছে?
ছায়াদের দুঃখ নেই কোন,
ঢেকে রাখবার মতো চোখ মুখ আর গাঢ় অন্ধকার,
অথবা শরীরের বক্র আকার-
কিছুই তো নেই;
দ্বিধাময় শরীর খুলে রেখে যে ছায়া আদর করেছে তোমায় প্রবল গতিতে প্রেমিক তো সেই

শোন, এক্ষুনি ট্রেন এসে যাবে;
তার আগে শুধু মিশে যেতে হবে আলোর পিছনে- 
আলো এসে তুলে নেবে এক অঙ্গ শ্বাস,
যাত্রা শুরুর পরে স্টেশন ফিকে হয়ে আসে..
ট্রেন নিয়ে যায় দুই নয় দুই নয়, নারীহীন পুরুষহীন এক বিশ্বাস

সমর্পণ
আমি রানীর অবাধ্য সেনা- 
যতবার তার হয়ে লড়ি,
অনুমতি নিতে গিয়ে পলক পড়েনা !

এইভাবে কত যুদ্ধ বাকী...
এইভাবে ঘোড়া থেকে নেমে 
    রানী দেখান অতল সমর্পণ ;
আমি তার বেখেয়ালি সেনা-
ভুলে যাই যুদ্ধ দিনক্ষণ

মাঠ শুধু ভালো লাগে,
   ঘোড়ার ক্ষুর আর রঙিন পতাকা...
আমি তার নতজানু সেনা-
তরোয়াল পদতলে রাখা ।

ক্রীড়া 
ধরো কি? ছাড়ো কি? ভাঙো কি? শেষ?
শেষ কি? শুরু কি? সকলই প্রবেশ

ঢুকে যাও ঢুকে যাও, বেরনো বারণ
ফলাফল উঠে থাকে ডুবিয়ে কারণ

ডুবে যাক ডুবে যাক...সাঁতারবিহীন
বিশ্বাস যত দৃঢ়, তারও চেয়ে দীন

কোনো এক শুরু বাছো, কোনো এক শেষ
ঈশ্বর হয়ে ওঠা তোমার অভ্যেস 


কবিতার পেছনের গল্প
দৈব: একসময় আমি ছিলাম প্রবল নাস্তিক। ঈশ্বর-ধারণার বিরোধিতা করতে অস্ত্রধারণ করেছি বহুবার স্বপ্নে ও মস্তিষ্কে। বহু অবান্তর পথে ঘুরেছি নিরন্তর। কিন্তু থেমেছি একসময়। যখন দেখা হলো এক অদ্ভুত মায়ার সঙ্গে। লোকে তাকে প্রেম বলে ডাকে। আবার দৌড়। অসাধারণ এক ক্ষুধা আমাকে বারবার দেখিয়েছে শূন্যের মায়া, এক বিমূর্ত দেবীর ধারণা, সাধারণ নারীর অবয়বে ফেলে দেখতে গিয়ে পৌঁছে গেছি শূন্যের কাছে...তবে শূন্য আমাকে তখন বুঝিয়েছিল, একমাত্র সত্য এই ঘোর...বিমূর্ত প্রেমের এই নেশা...তখন তাকেই মেনেছি ঈশ্বর বলে। সেই ঈশ্বরের কথা লিখতে গিয়ে এই কবিতাটির খোঁজ পাই।

অন্যদিকে যাওয়ার যখন: আঘাত মানুষকে সাহসী করে তোলে। উজান কবে সাহসী হয়ে উঠেছিল মনে নেই। তবে মনে আছে, সাহসী হয়ে উঠতে উঠতে এক ভীতু, ডানাওয়ালা আলোকময় দেবীর মতো দেখতে মানবীর গুটিয়ে রাখা সমর্পণের প্রতি এটুকুই বলার ছিলো তার। যদিও সে তখনও দৈব সঙ্গমের ভাষা জেনে ওঠেনি।

উড়ান: এরপর এলো এক ম্যাজিক সময়। আমি বিশ্বাস করি, প্রেমের কোনো লিঙ্গ হয় না, সময় অসময় হয় না। সমস্ত আগাছা মানুষের ভিড় ঠেলে নগ্নভাবে প্রেম এসে পড়ে শূন্যের ভিতর পূর্ণতার ধারণা দিতে। ঘোর নাস্তিক আমি ঈশ্বরে বিশ্বাসী হয়ে উঠি যেদিন, সেই ভীতু ডানাওয়ালা মানবী আমাকে ছুঁয়ে দেয় দেবীর মতো। বিমূর্ত ঈশ্বর এক প্রবল বিশ্বাসী সঙ্গমে নেমে আসে। আর আমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেয় শব্দগুচ্ছ...নিঃশব্দে।

সমর্পণ: বহু যুদ্ধের পরে আমার শুধু হেরে যেতে ভালো লাগে। প্রেমের কাছে, ঈশ্বরের কাছে। আড়ালে রানীকে যখন রাঙ্গাবউ বলে ডাকি, তখন দেখেছি কতো রঙিন পতাকা ওড়ে পিছনে। বিস্তৃত এক মাঠের মাঝে দাঁড়িয়ে তার কাছে শুধু নতজানু হতে ভালো লাগে। নতজানু হতে গিয়ে লেখা এই কবিতাটি।

ক্রীড়া: আসলে জীবন এক বিশ্বাসের খেলা। ‘আমি বিশ্বাস করি’র মধ্যে আমার জীবন, আমার যাপন লুকিয়ে থাকে। আর আমি বিশ্বাস করি প্রেমে। আমি বিশ্বাস করি প্রেম আমাকে মৃত্যু দেয়, প্রেমই আমাকে জন্ম দেয়, প্রেমেই আমি ঈশ্বর দেখি। আর প্রেমেই আমি উজানকে দেখি। এমন জরুরি নয় যে তুমিও প্রেমে বিশ্বাস রাখবে। তবে এমনটার সম্ভব যে ‘বিশ্বাসে’ তুমি ঈশ্বর দেখবে। আর সে ঈশ্বর তুমি নিজে। আমি নিজে। এই বিশ্বাসই কবিতাটির জন্মদাতা।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৭
এসএনএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।