সাংবাদিক ও গবেষক মফিজ ইমাম মিলনের তথ্যানুযায়ী, “নজরুল প্রথম যেবার ফরিদপুর এসে কবিতা পড়লেন, সেই মঞ্চে বসা ছিলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুভাস চন্দ্র বসু, মওলানা আবুল কালাম আজাদ, সরোজিনী নাইডু প্রমুখ সর্বভারতীয় নেতৃবৃন্দ। নজরুলের স্বাদেশিক কবিতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন জাতীয় নেতারা।
মফিজ ইমাম মিলন আরও উল্লেখ করেন, ১৯২৫ সালে ফরিদপুরে নজরুলের আরেকটি ঐতিহাসিক ও স্মৃতিময় ঘটনা। সে বছর ফরিদপুরে বাংলার মুসলমানদের অবিস্মরণীয় একটি উদ্যোগ রূপায়িত হয়েছিল। অল বেঙ্গল মুসলিম কংগ্রেস কনফারেন্স, অল বেঙ্গল স্টুডেন্ট কংগ্রেস কনফারেন্স এবং অল বেঙ্গল কংগ্রেস কনফারেন্স, এই তিনটি অনুষ্ঠান এক সাথে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ফরিদপুরের টেপাখোলায়। কবি নজরুল তাঁর অবিস্মরণীয় গান ও কবিতায় মাতিয়ে রেখেছিলেন হাজার হাজার জনতাকে। চারদিকে তখন নজরুলে প্রশংসা ও জয়ধ্বনি।
উল্লেখ্য, সেদিনের আয়োজনে কবি জসীম উদদীন স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। নজরুল একজন বামপন্থি নেতাসহ চারজনের একটি দল নিয়ে কবি জসীম উদদীনের বাড়িতেও আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। তখন ফরিদপুর রেলস্টেশন নির্মিত হয় নি। অম্বিকাপুর নেমে পায়ে হেঁটে পল্লিকবির বাড়ি যেতে হয়েছিল নজরুলের নেতৃত্বে আগত দলটিকে। সেখানে অবস্থানকালে নজরুল অভ্যাস মতো চা এবং পানের বায়না ধরলে গ্রামবাসীকে বেশ বিপাকেই পড়তে হয়। পান-সুপারি সহজলভ্য হলেও তৎকালের পশ্চাৎপদ গ্রামবাংলায় চা নামের পানীয়টি তখনও বলতে গেলে মানুষের কাছে অচেনাই ছিল। বেশ কষ্ট করে সে সময় নজরুলের চা তেষ্টা মেটাতে হয়েছিল।
ফরিদপুরে কবি নজরুলের নানা স্মৃতিময় ঘটনা গবেষক মফিজ ইমাম মিলন দীর্ঘদিনের চেষ্টায় খুঁজে খুঁজে বের করেছেন। ‘ফরিদপুরে নজরুল’ নামের একটি গ্রন্থে তিনি সেসব কথা ও কাহিনী সবিস্তারে বর্ণনাও করেছেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় নজরুলের ভ্রমণ ও নানা স্মৃতি উন্মোচিত হলে বর্ণিল নজরুল জীবনের অনেক অজানা অধ্যায় জানা সম্ভব হবে। একটি পূর্ণাঙ্গ ও সম্পূর্ণ নজরুল জীবনী রচনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নজরুল-স্মৃতি বিশেষভাবে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
জেডএম/