চিন্তা শুধু বিনয়কে ঘিরে। সেই বিনয় হঠাৎ বিড়ি খেতে খেতে ছুড়ে দিলেন হাতের জ্বলন্ত দেশলাই মশারির গায়ে।
সত্তর দশকের কাছাকাছি যখন গোবরা মানসিক হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তখন পাশে পেয়েছিলেন কিংবদন্তী চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটককে। সেখানে ঋত্বিক ঘটকের লেখা “জ্বালা” নাটকে প্রধান চরিত্রে অভিনব অভিনয় করেছিলেন। সেখানে বসেও নাকি বিনয় পত্রিকা বের করেছিলেন। ঋত্বিক ঘটক বিনয় মজুমদার সম্পর্কে বলেছিলেন, “আমি সাম্প্রতিক কালের এক কবির সম্পর্কে আশা রাখি, যিনি কবিতার জন্য যথার্থ জন্মেছেন। আমার মনে হয়, একালে বাংলাদেশে এতো বড় শক্তিশালী শুভবুদ্ধিসম্পন্ন কবি আর জন্মাননি। তিনি হলেন বিনয় মজুমদার। ঋত্বিক ঘটক সমালোচনায় বন্ধুকৃত্য করে না। নিজে যা ভালো বোঝে তাই লেখে”।
মানসিক হাসপাতালে থাকা যে খুব একটা সুখের ছিলো না তা তার একটি চিঠি থেকে ভালো বোঝা যায়। চিঠি লিখছেন হাসপাতালে বসে মহকুমা শাসককে। তাতে উল্লেখ করছেন বাড়ির লোকেরা না চাইলেও তিনি এখন বাড়ি ফিরতে চান। সে ব্যবস্থা করা হোক। কারণ, ডাক্তারদের মত অনুযায়ী তিনি এখন সুস্থ। জীবন তাকে হাসপাতাল আর বাড়ি এই চক্রে ঘুরিয়েছে। বাড়ি ফিরে এসে দেখেছেন, তার বাড়িতে হয়ে গেছে ডাকাতি। অভাব, ভালোবাসা, নিকট মানুষের কাছ থেকে পর্যাপ্ত অনুভূতি নিয়ে তার ভেতরে এক শিশুসুলভ অভিমান তারই বেঁচে থাকাকালীন কথায় টের পাওয়া যায়। বিনয় বলছেন, টাকার অভাব আমার বিয়ে না করার কারণ। সারাদিন টাকার চিন্তায় আমার সময় কাটে। অর্থের অভাবেই আমার জীবন মরুভূমি হয়ে গেলো। আমার অতি পরিচিতরাই আমাকে ঠকিয়েছে। আত্মীয়দের থেকে মানসিক রোগীর যোগ্য প্রয়োজনীয় সহানুভূতি পাইনি।
এই কারণেই এক সময় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দেশ ছাড়বেন। ধর্ম ছাড়বেন। ইসলাম ধর্ম নেবেন। পালালেন পূর্বপাকিস্তান, পাসপোর্ট ছাড়াই। সেখানে নাকি বেশ কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন। তারপর হঠাৎ কী মনে হলো নিজেই সেখানে গিয়ে থানায় হাজির হলেন। যেচে গিয়ে বললেন, আমার পাসপোর্ট-ভিসা কিছুই নেই কিন্তু আমি এদেশের নাগরিক হতে চাই। অমনি সর্বনাশ। তাকে জেলে আটক করা হলো। পরে অবশ্য বনগাঁ সীমান্তে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিনয় বলেন এই তার জীবনে আরেক সর্বনাশ হলো। তার বাম চোখ আর বাম কান নষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি অভিযোগ করেন। এই শেষ বয়সে মানুষ সম্পর্কে সন্দেহ এসেছিল তার। সহজে তার সঙ্গে মেশা যেত না। তাকে ঘিরে যেনো রহস্য দানা বেঁধেছিল চারিদিকে। ঠাকুরনগরে তার মায়ের নামে তৈরি যেই বাড়িটিতে থাকতেন। নাম ছিলো বিনোদিনী কুঠি। এই বিশাল জমিঘেরা বাড়িতে একা এক কবি তথা রুশভাষাবিদ বাস করেন। আশেপাশে সবাই হয়তো বোঝেননি কে এই বিনয়! শোনা যায়, শিশুরা শেষ দিকে তাকে ভয় পেত। তার বাড়ির মস্ত উঠোনে তারা সন্তর্পণে খেলত। তার শেষজীবনের এক তরুণ সঙ্গীকে তিনি বলেছিলেন, দমদমে থাকাকালীন বাচ্চারা তার গায়ে নাকি পাথর ছুঁড়ত আর বলত, “পাগল যায়, পাগল যায়”। এই ঘটনাগুলো তাকে যে কী পরিমাণ ব্যথিত করত তা তার কথা থেকেই বোঝা যায়। অথচ এই মানুষটি তার বাড়ির এক অংশ স্কুল তৈরির জন্য দিয়ে দেন। মানুষ তথা সমাজকে একদিকে আর প্রকৃতি ও সময়কে আরেকদিকে রেখেছিলেন বিনয়। তাই বোধহয় শুধু বন্ধু বা প্রকাশকদের হাতেই নয় নিজের বাড়ির নিচেও নাকি পুঁতে রেখেছেন তার পাণ্ডুলিপি। মা আর বাবার মৃত্যুর পর বোধ করি তীব্র একা হয়ে যান বিনয়। শোনা যায়, বাড়ির যেখানে তার বাবা ও মাকে দাহ করা হয়েছিল সেখানে জন্মানো খেজুর গাছের দিকে তাকিয়ে অবসর কাটত। তাদের বাড়ির আশ্রিতা মেয়েটির মুখে শোনা যায়, তাকে সে বহুসময় একা একা কথা বলতে দেখেছে। অথচ কী অদ্ভুত! সে কথা কবি নিজেই বলছেন তার কবিতায় “একা একা কথা বলি”। ঠাকুরনগরের ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে বসে কবিতা লিখেছেন, অঙ্কের সূত্র লিখেছেন, এঁকেছেন অজস্র উপপাদ্যরূপী জ্যামিতি। তার জীবিতাবস্থায় তা নিজেই ব্রিটিশ মিউজিয়ামে পাঠিয়েছিলেন সেগুলো তারা নিয়ে সংরক্ষণ করে রেখেছেন, এর কিছু কপি বিনয়ের চেষ্টাতেই ন্যাশনাল লাইব্রেরিতেও সংরক্ষিত রয়েছে। কিন্তু এই অবধিই, তার কতো অঙ্কের সূত্র সম্পর্কে মানুষের মত হতে পারে, সেগুলো অঙ্ক অথবা পাগলামি। আর্কিমিডিস যখন গভীর সূত্র নিয়ে কী যেনো করছিলেন খাতায়, রাজার পেয়াদা তা বুঝতে না পেরে, তার প্রশ্নের জবাব না দেওয়া মানুষটিকে তলোয়ারের এক কোপে মেরেছিলেন। আর্কিমিডিস হারিয়ে যাননি। আমরা হারিয়ে ফেলেছিলাম অজস্র সূত্র। কে বলতে পারে যাকে আমরা পাগলামি বলেছি তা হয়তো আশ্চর্য এক সূত্র! আচার্য সত্যেন্দ্রনাথ বসু বিনয় মজুমদারের একটি গবেষণাপত্র দেখে এতোই অবাক হয়েছিলেন যে, সেটিকে তিনি মহাফেজখানায় রাখার সুপারিশ করেছিলেন। শিবপুর ইঞ্জিনিয়ার কলেজের কৃতী ছাত্র বিনয় বি.ই ডিগ্রি পাওয়ার পর অজস্র ভালো ভালো চাকরি, অধ্যাপনার কাজ বারবার ছেড়েছেন কারণ, কবিতা তাকে পেয়ে বসেছিল। যে মানুষ কখনও ভাবেনি সে কবিতা লিখবে। তিন বলছেন, ১৯৫৯ সাল তার চিন্তা-ভাবনা করে শুয়ে শুয়ে কেটে গেলো। ১৯৬০ সালে তিনি ঠিক করলেন, শুধুমাত্র কবিতাই লিখবেন। প্রকাশ পেলো তার প্রথম কবিতার বই “নক্ষত্রের আলোয়”। না ঠিক তেমন আলো পেলো না সেই বই। এরপর যখন “ফিরে এসো, চাকা” প্রকাশ পেলো কলকাতার সাহিত্য সমাজ বিনয়কে চিনে নিলেন। শোনা যায়, ঠিক এই সময়ে তিনি কফিহাউসে গায়িত্রী চক্রবর্তীকে দেখেছিলেন। তিনি ছিলেন তখন প্রেসিডেন্সি কলেজে ইংরেজি সাহিত্যের কৃতী ছাত্রী। গায়িত্রী চক্রবর্তীকে নিয়েই বিনয় বেশ কিছু কবিতা লিখেছিলেন। তারপর গায়িত্রী চক্রবর্তী বিদেশে চলে যান বিনয় বোধহয় সেই অনুভূতিতেই লিখেছিলেন “ফিরে এসো চাকা”। চাকা মানে চক্রবর্তী।
দুষ্টু বুদ্ধিতেও বিনয়ের জুড়ি মেলা ভার! বিলেতফেরত এক বন্ধু তার চক্রবর্তী উপাধিটি অফিসের সামনে ‘চাক’ নামে লিখেছিলেন। বিনয় ভাবলেন, চক্রবর্তীর চাক যদি পুংলিঙ্গ হয় চাকা তবে স্ত্রীলিঙ্গ, তাই “ফিরে এসো, চাকা”। অনেকে ভাবেন, বিনয়ের জীবনে গায়িত্রী বোধহয় এক নায়িকা কিন্তু শোনা যায়, প্রথম জীবনে বিনয়ের এক সহপাঠীর বোন শ্যামলী ঘোষের সঙ্গে তার প্রেম ছিলো। জাতিগত কারণে এই বিয়ে বন্ধ হয়। এটা বিনয়ের জীবনে একটা দাগ হয়ে থেকে যায়। অবিবাহিত জীবনের অন্ধগলিতে তিনি হয়তো-বা শরীর পেয়েছেন নারীর, প্রেমিকা পাননি। তাই শোনা যায়, শেষজীবনে আধুনিক মেয়েদের দেখলেই নাকি তীব্র বিরক্ত হতেন। সহ্য করতে পারতেন না! গায়িত্রী চক্রবর্তী যিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী, তিনি বিনয়কে বাংলার দান্তে বলে মেনেছেন।
বিনয়কে প্রশ্ন করা হলে উড়িয়ে দিয়েছেন কোনো প্রেমের কথা কিন্তু কবিতাতে লিখেছেন
“আমরা দুজনে মিলে জিতে গেছি বহুদিন হলো। /তোমার গায়ের রং এখনো আগের মতো, তবে/তুমি আর হিন্দু নেই, খৃষ্টান হয়েছো। /তুমি আর আমি কিন্তু দুজনেই বুড়ো হয়ে গেছি। /আমার মাথার চুল যেরকম ছোটো করে ছেঁটেছি এখন/তোমার মাথার চুল সেইরূপ ছোট করে ছাঁটা,/ছবিতে দেখেছি আমি দৈনিক পত্রিকাতেই; যখন দুজনে/যুবতী ও যুবক ছিলাম/তখন কি জানতাম বুড়ো হয়ে যাব? /আশা করি বর্তমানে তোমার সন্তান, নাতি ইত্যাদি হয়েছে। /আমার ঠিকানা আছে তোমার বাড়িতে,/তোমার ঠিকানা আছে আমার বাড়িতে,/চিঠি লিখব না। /আমরা একত্রে আছি বইয়ের পাতায়”। আর কখনও কখনো গভীর প্রশ্ন করা হলে বলতেন, সে কথা গোপন থাক!
বিনয়ের বিভিন্ন লেখায় দুই বিশিষ্ট বন্ধুর নাম বারবার এসেছেন তারা হলেন, জ্যোতির্ময় দত্ত ও অমিয় দেব। জ্যোতির্ময় দত্ত না থাকলে বিনয়ের যে কী হতো তা সম্পর্কে বিনয় সন্দেহ প্রকাশ করেছেন!
তারা বিভিন্ন সময় নিজের কাছে এনে বিনয়কে রেখেছেন, হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। ইন্টারপোলেশন সিরিজের যে সূত্র বিনয় আবিষ্কার করেছেন তার ব্যাখ্যা তিনি করে গেছেন। মানুষ যেখানে সেকেন্ড ও থার্ড ডাইমেনশন অবধি ভাবতে পারে বিনয় সেখানে যুক্তি সহকারে ফোর্থ ডাইমেনশন অবধি ভেবে গেছেন। এই বিনয় দুর্দান্ত ব্রিজ খেলতেন বলে জানা যায়। সঙ্গীদের সঙ্গে ঠাট্টা করতেন বেশ। কেউ যদি জিজ্ঞাসা করত, আগে তো সিগারেট খেতেন এখন বিড়ি খান কেন? বলতেন, সিগারেট প্যাকেটে স্মোকিং কিলস লেখা থাকে, বিড়ির গায়ে লেখা থাকে না তাই! এই কবি যখন “বাল্মিকীর কবিতা” লিখলেন সমাজে হয়ে গেলেন ব্রাত্য। অশ্লীলতার দায়ে তাকে না জানিয়েই ছিঁড়ে ফেলা হলো তার লেখা বইয়ের কিছু পৃষ্ঠা। লালবাজার থেকে নির্দেশ এলো পৃষ্ঠা পুড়িয়ে ফেলার। অশ্লীলতার দায়ে তাকে কবিতা পড়তে দেওয়া হলো না গোর্কি সদনে। কবি “ঠাকুরনগরের নির্বাসিত কবি” হয়ে রইলেন। পরবর্তী সংকলনে নিজেই বাদ দিলেন সেই কবিতা। অভিমানে বললেন বাঙালি জাতি যেনো ভুলে যায় আমি ৬০টির বেশি কবিতা চাঁদ ও ভুট্টা নিয়ে লিখেছি।
এক সাক্ষাৎকারে কবি বলছেন, “ফিরে এসো, চাকা” এই একখানিই তার কবিতার বই। এরপর নাকি সব পয়মাল! নিজের কবিতা সম্পর্কে এতো শক্ত মন্তব্য ক’জন করতে পারেন। জীবন তাকে অসহায়তা থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছিল আরও। কাঁপা হাতে নিজেই নিজের ঘরের তালা খুলতেন কেউ সাহায্য করতে এলে তা নিতেন না। শেষে মিডিয়ার মানুষদের দেখলে লাঠি নিয়ে তাড়া করতেন। মাঝে মধ্যে ঘরে নিজেকে বন্দি করে রাখতেন আর কেউ ডাকলে বলতেন, “আমি আমার অন্ধকার মায়ের কোলে ন্যাংটো হয়ে শুয়ে আছি, দরজা খুলব না”।
এই হলেন বিনয় যার ভেতর জুড়ে ছিলো এক মিহিন শিশুমন। আকাশবাণী থেকে ঠিক করা হলো তাঁকে নিয়ে আসা হবে। বিনয়ের কবিতাজীবনের কিছু চিহ্ন থাকুক সেখানে। বিনয় তখন তীব্র মিডিয়াবিমুখ। তাই আকাশবাণী তাদের চিহ্ন আড়াল করে গাড়ি পাঠালেন। ঠাকুরনগর থেকে তাকে কলকাতায় আনা হলো চোখ দেখানোর নাম করে। কিন্তু আকাশবাণীর গেট দেখেই ভয়ঙ্কর রেগে গেলেন। কিছুতেই তাকে নিয়ে যাওয়া যায় না। তারপরে সেসময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তারা তাকে অনেক বুঝিয়ে কৌশলে নিয়ে গেলেন রেকর্ডিংয়ের ঘরে। সেখানে বিনয় তখন সম্পূর্ণ এক কবি। এতোক্ষণের যা বিরোধ সব তার কেটে গেলো কবিতার পাঠে। কথায় মগ্ন হয়ে গেলেন। শুধু কবিতা পড়তে পড়তে মাঝে বলে উঠলেন, খিদে পেয়েছে। আমি এখন খাব। ক্যান্টিন থেকে খাবার আনানো হলো। বিনয় খাবার খেলেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো আবার যদি কবিতা পড়তে ডাকা হয় উনি আসবেন কিনা। উত্তরে বাংলার বিনয় বলছেন, যদি এভাবে ভাত খেতে দাও আবার আসব কবিতা পড়তে। ভাতের বদলে কবিতার বিনয় বেঁচেছিলেন এভাবেই। অথচ জীবনের প্রারম্ভেই যাকে বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন থেকে গণিতের অধ্যাপনা আর জাপান থেকে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য চাওয়া হয়েছিল। সেই তিনি যিনি ন্যাশনাল বুক ট্রাস্টের আওতায় রুশ সরকারের টাকায় করেছেন অনুবাদ। সেই বিনয় কবিতার বদলে চেয়েছেন শুধু ভাত। ছেলেটাকে সবাই টু বলে ডাকে। দারুণ ছবি আঁকে ছেলেটা, সঙ্গে অভিনয় করে তাক লাগিয়ে দেয় মানুষজনকে। সারাদিন কিছু পড়াশুনা করে না। বড়রা চিন্তায় থাকে, এই না শাস্তি পায়। অথচ ম্যাজিশিয়ান ছেলেটা সব পেরে যায় স্কুলে গিয়ে। ছেলেটার ডাক নাম মংটু। জন্ম ১৯৩৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর মায়ানমারে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় ছেলেটি বাবার সঙ্গে পায়ে হেঁটে পাহাড়-জঙ্গল পেরিয়ে অবিভক্ত ভারতে আসে। কলকাতায় যখন তাকে স্কুলে ভর্তি করার জন্য আনা হলো তার আগে সে বাংলাদেশে নবম শ্রেণিতে পড়ত কিন্তু মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউশনে ভর্তি করার সময় হেডমাস্টার তাকে অষ্টম শ্রেণীতে চাইলেন। তাই করা হলো। কিন্তু আত্মপ্রত্যয়ী সেই ছেলে রাস্তায় আসতে আসতে বাবাকে জানিয়ে দিলো, কিছুতেই সে অষ্টম শ্রেণীতে পড়বে না। সে নবম শ্রেণীতে পড়বে। শেষপর্যন্ত তাই হলো। তিনি বিনয় মজুমদার। এই বিনয় পাগলপ্রেমিক, অশ্লীল, প্রতিভাবান, গণিতজ্ঞ, শক্তিশালী কবি, নিঃসঙ্গ— সব সম্বোধনকে অন্তরে নিয়ে বিনা প্রতিরোধে একটি লাঠিকে অবলম্বন করে একা এক কুঠিতে নিজেকে নির্বাসন দিয়েছিলেন। বুঝেছিলেন অনেককিছুই। তাই জড়, উদ্ভিদ আর জীবকে কোথাও এক মাত্রায় বসিয়েছিলেন। বিয়ে করেননি কিন্তু কোনো এক সিদ্ধান্তে গিয়ে বলেছিলেন, শিবরাম চক্রবর্তী আমার গুরু, তার স্ত্রী যদি কল্পনা হয় আমার স্ত্রী তবে রাধা আর ছেলে কেলো। বিনয়ের কথা ধরেই বলি একথার গভীরতা তবে গোপনই থাক। বিনয় লিখেছেন “বড় শহরে বেশি শীত পড়ে না’’। তাই মনে হয় সেদিন ঠাকুরনগর গ্রামে বড্ড বেশিই বোধ করি শীত পড়েছিল। যখন মানুষ, সময় আর তথাকথিত পুরস্কারে স্বীকৃতি পাওয়া বিনয় শেষ নিঃশ্বাসকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। ২০০৬ সালের ১১ ডিসেম্বর বাংলার নয়, কবিতার বিনয় ঘুমিয়ে পড়লেন। আর জাগলেন না। জাগিয়ে রাখলেন আমাদের।
ঋণ: ঈশ্বরীর স্বরচিত নিবন্ধ ও অন্যান্য (সম্পাদনা- শ্রীতরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়), পঞ্চাশের প্রবণতা ও বিনয় মজুমদার (আকাশ বিশ্বাস), প্ল্যানচেট ও যৌনসমীক্ষায় বিনয় মজুমদার (অর্ঘ্য দত্ত বক্সী), মুখোমুখি বিনয় মজুমদার (কবিতীর্থ), লোক পত্রিকা, সবুজের অভিযান পত্রিকা, মরম পত্রিকা; সন্দীপ দত্ত (সম্পাদক-লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি), শ্রী জ্যোতির্ময় দত্ত, শ্রী অমিয় দেব, অমলেন্দু বিশ্বাস, আশিস গিরি, শিবেন মজুমদার, শূদ্রক উপাধ্যায়, সুকৃতি সিকদার, রেণু।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৭
এসএনএস