নামের কারণে হোক বা চর্চার জন্য হোক স্যার সত্যি সত্যি এক সময় কবিতায় মনোযোগ দিলেন। মাঝে মাঝে কবিতার বই নিয়ে স্কুলে আসতেন এবং ক্লাসের ফাঁকে পড়তেন।
তখনকার সময়ে প্রযুক্তিগত এমন সুবিধে ছিলো না। স্যার কবিতা লিখে খামবদ্ধ করে বাই সাইকেলে করে অনেক দূরে গিয়ে বিভিন্ন পত্রিকার ঠিকানায় পোস্ট করতেন।
এখন ফেসবুকে ঢুকলে কখনও কখনও স্যারের কবিতা পাওয়া যায়। কবিদের বিচারে তা হয়তো অনেক দুর্বল তবে তার লেখার মধ্যে ভালো ভালো বক্তব্য থাকে। স্যারও সমালোচনা সহজে মেনে নেন। তিনি বলেন, ‘সময়ের কাজ সময়ে করতে হয়। অসময়ে কিছুই হয় না। লেখাপড়া তারপর চাকুরির পেছনে ছোটাছুটি, এরপর চাকরি, সংসার এসবের ভিড়ে সময় হলো কোথায়’? এ নিয়ে স্যারের মনে অনেক আফসোস মোচড় দিয়ে ওঠে!
‘সময়টাকে কাজে লাগাও। এ জগতে পা রেখেছো, হাল ছেড়ো না। কামড় খেয়ে হলেও পড়ে থাকো। একদিন সফল হবেই। ’ শিল্প-সাহিত্যকে স্যার মন থেকে ভালোবাসেন। স্যারের সাথে দেখা হলে অনেক উপদেশমূলক কথা বলেন। কখনও কখনও বর্তমান শিক্ষা-সমাজ ব্যবস্থা নিয়ে প্রকাশ করেন ক্ষোভ ও হতাশা। ‘বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থা শুধু গোলাম বানাচ্ছে আর সেখান থেকে তৈরি হচ্ছে দূর্নীতিবাজ। এদেশে কবি, দার্শনিক, বিজ্ঞানী কীভাবে তৈরি হবে? লেখাপড়া শেষে চাকরির পেছনে নাকে দড়ি দিয়ে দৌড়াচ্ছে! লোভ-লালসা অর্থ-বিত্তের কাছে আজকাল সব যেনো হেরে গেছে। আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি যেখানে শিক্ষিত মানুষের চেয়ে টাকা-পয়সাওয়ালাদের মূল্যায়ন অনেক বেশি। ’
কবির স্যার সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘তোমার ভালো রেজাল্টের উঁচুমানের সার্টিফিকেট আছে, কিন্তু তা বড় অংকের টাকা এনে দিতে পারলো না। সেটার মূল্য সমাজে নেই। সেটার মূল্য না থাকা মানে সে সার্টিফিকেটেধারীরও মূল্যায়ন নেই। আমরা বড় এক কঠিন সমাজে বাস করছি’।
কথায় কথায় এও বলেছিলেন, ‘দেখো আমার যতোদিন না সরকারি চাকরি হয়েছিলো, ততোদিন কোনো শিক্ষিত ফ্যামেলির সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দিতে রাজি হয়নি। তাও সে সময়কার কথা’!
স্যার যখন এসব কথা বলছিলেন তখন বাস্তবতা খুঁজতে গিয়ে স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে একটু অতীতে ফিরে গেলাম। গ্রামের স্কুলে একই ক্লাসে একসাথে কতোজনই না ছিলাম। এসএসসি’র আগে আগে বা কোনোমতে এসএসসি দিয়ে এক এক করে উধাও! টিকেছিলাম মাত্র তিনজন। মিহির আবার ইন্টামিডিয়েটে এক বিষয় খারাপ করে ইতি টানলো। হাল ধরলো বাজারে বাবার ফার্মেসিতে। রইলাম আমি আর তানিম। দু’জন এখন শহরে প্রাইভেট স্কুল, টিউশানি আর নিজেদের লেখাপড়া নিয়ে আছি। প্রাইমারি, মাধ্যমিকে আমাদের সাথে থাকা অনেক মেয়েদের সেই কবে বিয়ে শাদি হয়ে এখন তাদের ছেলে মেয়েরাও স্কুলে পড়ছে। আর এদিকে আমরাও স্টুডেন্ট। আমাদের সাথের কামাল, রফিক, মিরুর কথা যদি বলি, তারা সমাজে আমাদের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছে বলতে হবে। মিরু ক্লাস নাইনে থাকতে তার বাবার সাথে দুবাই উড়াল দেয়। এতোদিনে সে প্রতিষ্ঠিত। অনেক টাকা-কড়ির মালিক। দেশে এলে তার অনেক সম্মান। মসজিদ, মাদ্রাসা, খেলাধূলায় উদার হস্তে দান করে। এলাকায় খেলাধূলা হলে তাকে প্রধান অতিথির আসনও অলংকৃত করতে দেখা যায়। কামাল, রফিক এখন এলাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। একজন ক্লাবের, অপরজন মসজিদের সেক্রেটারি। স্কুল কমিটি, মাদ্রাসা কমিটিতেও তাদের সম্মানজনক অবস্থান। এলাকার বিচার-সালিশও করে বেড়ায়। দু’জন আবার দেশের প্রথম সারির দু’টি রাজনৈতিক দলের যুব সংগঠনের তৃণমূল পর্যায়ের পদবিধারী লিডার। সেই সুবাদে ইউনিয়ন ছাড়িয়ে উপজেলা পর্যায়েও রয়েছে ভালো অবস্থান। তাদের পেছনে আছে তরুণ যুবকদের লম্বা লাইন। আগামীতে তারা ইউনিয়ন নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে লড়বে। শুধু চেয়ারম্যান কেন ভবিষ্যতে যদি ক্ষমতার আরও বড় কোনো চেয়ার অলংকৃত করে তাও অবিশ্বাস্য মনে করি না। কোনোদিন যদি দেখি প্রাইমারী স্কুলের প্রধান শিক্ষক, হাই স্কুলের প্রিন্সিপাল, কলেজের অধ্যাপক লিফলেট হাতে ঘুরে ঘুরে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা করছেন, তাতেও অবাক হবো না। সব পেয়েছির এ দেশে সব সম্ভব!
এলাকায় তাদের প্রভাব প্রতিপত্তির ভিড়ে আমি আর তানিমের মতো মাস্টার্স পড়ুয়া প্রাইভেট স্কুলের টিচার আর টিউশানির মাস্টারের কী ভ্যালু আছে? মাঝে মধ্যে যখন এলাকায় আসি তখন এলাকার অনেক উঠতি পোলাপানও আমাদের চেনে না। আমরা এলাকায় এলে কখনও কখনও তাদের পরিচয় দিয়ে চলতে হয়।
ভর্তি, রেজাল্ট এসব নিয়ে লড়তে লড়তে তাদের মতো টাকা পয়সা, প্রভাব প্রতিপত্তি অর্জনের সুযোগ পেলাম কই? গ্রামের স্কুলে এসএসসি পাশ করে ভর্তিযুদ্ধে লড়াই করে জেলা শহরে একটি কলেজে এসে ঠাঁই পেলাম। তারপর ভালো রেজাল্টের জন্য বইয়ের ব্যাগ কাঁধে নিয়ে কলেজ, স্যারের বাসায় দৌড়াতে দৌড়াতে ইন্টারমিডিয়েট পার হলাম। শুরু হলো আবারও ভর্তিযুদ্ধ! সেখানে লড়তে লড়তে আশ্রয় পেলাম বিভাগীয় শহরের এক নামকরা কলেজে। শুরু হলো অনার্স জীবন।
এতোদিনে অনেক কিছুর সাথে চেনাজানা হয়ে অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ ভারী হয়। স্বাধীন সত্ত্বার পাশাপাশি ভাবনাটাও বিকশিত হয়। চোখের সামনে কতো রঙিন স্বপ্ন ডানা মেলে প্রজাপতির মতো ওড়ে। কেউ কেউ চুটিয়ে প্রেম করে। কেউ কেউ খোঁজে তার মনের মানুষ। আগামীর চাকুরে জীবনের জন্য এখান থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। পত্রিকা খোলে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে।
আগে আউট বই পড়ার অভ্যাস থাকলেও অনার্সে এসে আমার মাথায় কবিতার নেশা চেপে বসে। বেশভূষায়ও চলে আসে কিছুটা কবি কবি ভাব। আমার টেবিলে পাঠ্যপুস্তকের বদলে ঠাঁই নিলেন- জীবননান্দ, ফররুখ, নজরুল, রুদ্র, রবীন্দ্রনাথ। আমার বিচরণ শুরু হয় একটা ভাবের জগতে। মৌতাতে আচ্ছন্ন সে জগৎ! নেশা আর মনের তৃপ্তি। ১ম বর্ষে ফার্স্ট ক্লাস টিকালেও মধ্যখানে দুই বর্ষে সূচক ছিলো নিম্নমুখি। আবার শেষে এসে সূচকটা টেনেটুনে ফার্স্টক্লাসে পৌঁছে।
জাতীয় দৈনিকগুলোর সাহিত্যপাতায় আমার কবিতা ছাপা হওয়ার পর থেকেই একটা বই ছাপানোর ইচ্ছে পুষে আসছি। কিন্তু গাঁটের পয়সা খরচ করে কোনো প্রকাশক নতুন লেখকের ক্ষেত্রে ঝুঁকি নিতে চান না।
আমার আগ্রহ আর বন্ধু বান্ধবদের উৎসাহ, তাড়না সব মিলিয়ে টিউশানির টাকা এবং আরও কিছু ধার-দেনা করে খ্যাতনামা একটি প্রকাশনা থেকে বইমেলায় একটি বই প্রকাশিত হয়।
কবির স্যার আমার কবিতার ভক্ত। ফেসবুকে পোস্ট করা প্রতিটা কবিতা মনোযোগে পাঠ করেন। লাইক দিয়ে প্রশংসা মন্তব্য জানান। কখনও কমেন্টে এসে এও বলেন, আমি তোমাকে নিয়ে গর্ব করি। স্যারের স্ত্রী কমেন্ট না করলেও নীরবে লাইক দিয়ে যান। আমার ধারণা, তিনি আমার নীরব পাঠক।
ফেসবুকে বইয়ের প্রচ্ছদ, মেলায় আমার সাড়া জাগানো বইয়ের অটোগ্রাফের ছবি দেখে স্যার একদিন ইনবক্সে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, তোমার বইটা পড়ার খুব আগ্রহ। কোথায় পাবো বলো তো!
আমি বললাম, কী বলছেন স্যার! আপনাকে কোথাও যেতে হবে না। আমি নিজেই বই নিয়ে আপনার বাসায় আসবো।
কবির স্যার সেই কবে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসেছেন। এখন জেলা শহরে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। তার স্ত্রীও অন্য একটি স্কুলের শিক্ষক। একটি মাত্র মেয়ে নিয়ে তাদের সুখী-সচ্ছল পরিবার। মায়্যিশা সায়েন্সের স্টুডেন্ট। মায়ের স্বপ্ন তাকে মেডিকেলে পড়ানোর। মায়্যিশা যেমন মেধাবী, তেমনি স্মার্ট। টানা টানা চোখ আর গোলগাল মায়াবী চেহারার হিজাবী মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দরী লাগে। তার লাজুকতা, কথাবার্তার ভঙ্গি অনন্য। স্যারের বাসায় এ পর্যন্ত যে কয়দিন গিয়েছি, মায়্যিশাকে দেখার সুপ্ত অথচ তুমুল বাসনাটাও মনে ছিলো।
বই পেয়ে স্যার অত্যন্ত খুশি হলেন। হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখে এক এক করে পৃষ্ঠা ওল্টাতে থাকেন। একটু একটু পড়েনও।
‘খুব ভালো, খুব ভালো। আমার কতো আনন্দ, আমার ছাত্রের বই আমার হাতে। তোমার বইটা খুব মন দিয়ে পড়বো। ’
স্যার স্মৃতি হাতড়াতে হাতড়াতে চলে গেলেন আমাদের শৈশবের স্কুলে। ‘তোমরা একসাথে কতোজন ছিলে। ক্লাসে গাদাগাদি করে বসতে। কিন্তু এক এক করে সবাই হারিয়ে গেলো। তোমরা দু’জন টিকলে। সত্যি, তোমাদের নিয়ে আমার গর্বে বুকটা ভরে ওঠে। ’
আমরা স্যারের কথা মন ডুবিয়ে শুনছি। মাঝে মাঝে হ্যাঁ-না উত্তর দিচ্ছি। স্যার কোনো এক সম্পর্কে তানিমের দুলাভাই হন। সেই সুবাদে-সুযোগে কখনও কখনও স্যারের সাথে কিছুটা রসিকতায়ও জড়িয়ে যায়। সে একটু বাচাল প্রকৃতির বটে। তার পুরনো অভ্যাস। স্যারের স্ত্রী চা এনে আমাদের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে নিজেও এক কাপ নিয়ে বসেন।
স্যার চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বলে, ‘বর্তমান বই বিমুখ প্রজন্ম নিয়ে আমার খুব চিন্তা হয়। এদের আছে মোবাইল আর কিছু একাডেমিক প্রাণহীন মুখস্থ বিদ্যা। ভেতরটা শূন্য। ঊষর প্রায়। এদেরও বা কী দোষ। শিশুকাল থেকে তাদের পিঠে বইয়ের বোঝা। আর আছে একটার পর একটা পরীক্ষা। এসব দিয়ে মেধার কী উন্নতি হয়েছে? মুখস্থ বিদ্যা দিয়ে হয়তো একটা চাকরি জুটাতে পারবে। এটাতো জীবনের সফলতা নয়। যারা শিল্প-সাহিত্যের সাথে যুক্ত তাদের আমি মন থেকে ভালোবাসি। তাদের সমৃদ্ধতাকে শ্রদ্ধা করি। তাদের মনটা থাকে কোমল, সজীব এবং উদার সহানুভূতিশীল। তারা কুসংস্কার, সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে থাকে। আমার বিশ্বাস, তাদের ভালোবাসা সমৃদ্ধ মন কাউকে কষ্ট দিতে পারে না...’।
স্যার কথাগুলো বলছিলেন সাবলীলভাবে। আমরা শুনছিলাম। পাশে বসা স্যারের স্ত্রী। তিনি আমার কবিতার বই উল্টেপাল্টে দেখছেন। বেশিক্ষণ চুপ করে থাকতে না পারা এটা তানিমের পুরনো অভ্যাস। কিন্তু হঠাৎ স্যারের কথার প্রসঙ্গ ধরে মুখ ফসকে আমাকে জড়িয়ে এমন বেফাঁস কথা বলবে তা ভাবতেও পারিনি। স্যার তার স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে থমকে গেলেন। তার স্ত্রীর মুখটাও বিব্রত রূপ ধারণ করলো। আর আমার মাথা আনত হয়ে গেলো লজ্জায়। স্যার হেসে তাৎক্ষণিক প্রসঙ্গ চাপা দিয়ে স্বাভাবিক করতে চাইলেন। তখন মায়্যিশা প্রবেশ করে আমাদের সামনে থমকে দাঁড়ায়। আমতা আমতা মুখে সালাম দেয়। তার পিঠে বইয়ের ব্যাগ। কোচিং থেকে এসেছে।
‘যাও মা ভেতরে যাও, আমি আসছি। ’ এ বলে মা উঠে দাঁড়ান। ‘আমি ওকে ভাত দিয়ে আসি। ’
আমরা চলে আসার সময় স্যারের স্ত্রীর সাথেও কিছুকথা হয়। তিনি তার মেয়েকে নিয়ে স্বপ্নের কথা জানান। এটাও জানিয়ে দেন, ‘আজকাল বিসিএস ক্যাডারের মান বেশি। মেয়েকে যখন লেখাপড়া করাচ্ছি, বিয়ে দিলেও পাত্রটা বিসিএস ক্যাডার দেখে দেবো’।
মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ। কয়েকদিনের মধ্যে রেজাল্ট। আগেও আমি বাজার থেকে কারেন্ট ওয়ার্ড, নিউজ সংশ্লিষ্ট অনেক বই কিনেছি। কিন্তু সাহিত্যের কারণে সিরিয়াসলি সময় দিতে পারিনি। একটা নিবন্ধন পরীক্ষা দিয়েছিলাম। এখনও রেজাল্ট হয়নি। সেদিন যখন স্যারের বাসা থেকে বের হই, মনে মনে সংকল্প করে আসি আপাতত সব স্থগিত। আজ থেকেই বিসিএস’র প্রস্তুতি। বাজার থেকে সংশ্লিষ্ট অনেক বই কিনে এনে পড়তে বসি। আমাকে বিসিএস ক্যাডার হতেই হবে। আমার মাথায় এর বাইরে কোনো চিন্তা নেই।
ফেসবুক খুলে বসেছি। হঠাৎ ‘রূপকথার রাজকন্যা’ নামের একটি আইডি আমার ইনবক্সে নক করলো। সে তার পরিচয় দিলো, আমি মায়্যিশা!
‘বাবার টেবিল থেকে আপনার বইটা লুকিয়ে লুকিয়ে কিছুটা পড়েছি। আপনি জানেন না, আমি আপনার কবিতার একজন গোপন পাঠক। এবং খুব ভক্ত। ’
‘নিজ থেকে তো একটা বই দিলেন না। যদি অটোগ্রাফসহ একটা বই নিজ হাতে তুলে দেন, খুব প্রীত হবো। ’
তারপর থেকে মায়্যিশা আমার সাথে ইনবক্সে কথা বলে। সে তার পছন্দ-অপছন্দ, ভালোলাগা-খারাপলাগা অনেক কিছু শেয়ার করে। তার সাথে দেখা করে তার প্রতি আমার টান আরও বেড়ে যায়।
কবিতার পাশাপাশি গল্পের প্রতি তার প্রচণ্ড আকর্ষণ। গল্পের খুব মনোযোগী পাঠক সে। মেয়েটা তার বাবার মতো সাহিত্যপ্রেমী। শিল্প-সাহিত্যকে খুব ভালোবাসে। তার মনটা সে আদলে গড়া। সে জন্য হয়তো আমার প্রতি তার এতো ভালোলাগা!
কবিতার পাশাপাশি গল্প লেখার চেষ্টা করিনি এমন নয়। লিখতে বসে দেখেছি সাধনার প্রয়োজন। একদিনে সম্ভব নয়। চেয়েছিলাম কবিতায় আরও সময় দেই। কিন্তু এখন বিসিএস’র চাপে তাও মাথায় নেই। সাহিত্য এমন যা সব সময় ধরা দেয় না। যৌবনের শুরুতে কতো তরুণ কতো স্বপ্ন নিয়ে এ জগতে পা রাখে। কিছুদিন বিচরণ করে পেটের ক্ষুধায়, জীবিকার তাড়নায় হারিয়ে যায়। অনেকে নিজেকে গুছিয়ে শেষে আবার আসতে চায়। তখন আগের মতো ধরা দেয় না। আফসোস তাকে কুরেকুরে খায়।
মায়্যিশা একটি ব্যাপারে আমাকে প্রতিদিন চাপ দেয়,
‘আপনাকে পারতেই হবে। আপনি চেষ্টা করুন। আপনার লেখা গল্প পড়তে প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছি। আপনি সব কিছু মাথা থেকে ঝেড়ে গল্পে মনোযোগ দিন...’।
সে নাছোড়বান্দা!
বাংলাদেশ সময়: ১৫০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০২, ২০১৭
এসএনএস