ওয়ার্ডসওর্থ বলেছিলেন, “POETRY IS THE SPONTANEOUS OVERFLOW OF POWERFUL FEELINGS: IT TAKES ITS ORIGIN FROM EMOTION RECOLLECTED IN TRANQUILLITY”।
ডব্লিউ বি ইয়েটস বলেছিলেন, অন্যদের সঙ্গে তর্ক বা বাগবিতণ্ডা আসলে ঝগড়া আর নিজের সঙ্গে তর্ক বা ঝগড়া হলো কবিতা।
“শব্দ আর সত্য”-তে শ্রদ্ধেয় শঙ্খ ঘোষ বলেছেন কিংবা প্রশ্ন করেছেন, “কবিতা বড়ো ভরে গেছে ক্লিশের প্রয়োগে, এই অপমানে কবিতা লেখা ছেড়ে দেন কোন্ সত্যিকারের কবি?” তিনি আরও বলেছেন, “কবিদের দরকার হয় বাইরের সঙ্গে সহযোগ রেখেও ভিতরের দিকে সরিয়ে আনা নিজেকে, ক্রমাগত আয়োজনে”।
“কবিতার মুহূর্ত” বইতেও তিনি তার লেখা কবিতার প্রসঙ্গ ধরেই খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা লিখেছেন। আমি নিতান্তই একজন অনুভূতিপ্রবণ বক্তা ছাড়া কিছু নয়! তবে গত চার পাঁচ বছর ধরে কবিতার স্পর্শে ঘনিষ্ঠ হওয়ায় আমার কেন জানি না মনে হয়, কবিতা কেবল সাহিত্যের ঘোর নয় বা ঘরানার নয়। কবিতা নিজেই একটা একক গঠন বা চরিত্র। এ পৃথিবীর যাবতীয় বিষয় সব কিছুকেই একমাত্র কবিতাই শোষণ করে নিতে পারে। জীবন একটি রৈখিক পর্ব, এখানে মানুষ মানুষকে বাঁধতে চায়, সব বুঝেও বোঝে না। কবিতা লিখেও সে মুক্তি পায় না, আসলে ভাবকে আত্তীকৃত করা দরকার রক্তে, মনে, ভেতরে, বাইরে তবেই কবির মতো কিছু একটা হওয়া যেতে পারে বোধহয়! মানুষ নির্ধারিত হলেও মন রহস্য হয়ে থেকে যায়! শব্দ নির্ধারিত হলেও ভাব রহস্য হয়ে থেকে যায়। কবি নিজেকে যদি ছিঁড়ে-কুটে বেরিয়ে আসেন, ক্রমশ নিরাসক্ত হন, দু’গালে চড় খেয়েও ভ্রষ্ট না হয়ে ক্রমশ শব্দে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারেন সেটাই কবিতার প্রকৃত মঞ্চ। এ মঞ্চ কারও মুখাপেক্ষী না, আসলে বিচারক কেউ নয়; কালের, গতির, গন্তব্যের প্রেক্ষক নেই কোথাও, আসলে গন্তব্যই তো নেই। যারা ছুটছি, ছুটছে তারা ক্ষুধার্ত, কেউ কেবল খাওয়ার জন্য ক্ষুধার্ত, কেউ ভেতরের গভীর ছোবল জানবে বলে ক্ষুধার্ত, দুই খিদে আলাদা! এই মাত্রিকতায় কবিতা জন্ম নেয়, এখানেই মরে, এখানেই আবার জন্মায়। আসলে শুধু মাধ্যমের খোঁজে কবিতারা অশরীরীর মতো ঘুরে বেড়ায়, তৃপ্তি থেকে অতৃপ্তির দিকে। এবারে আমাদের কেবল কবিতার বর্ম পরেই দাঁড়াতে হবে। আসলে যে অনেক কিছু পারে সে কবিতা পারে না, আর যে কিছুই পারে না সে যেনো একটু বেশীই কবিতা পারে, এরকম একটা হাসির খোরাকি কথার একটাই উত্তর। আসলে যে প্রকৃত কবিতাযাপন করে, কবিতা আসলে তার সব শুষে নেয়। তবু এ আপেক্ষিকতার বাইরে যে মানদণ্ড থাকে তা থেকে বলি, আমি কবিতা হিসেবে একটা ঘোরকে চিনি। সে কেন, কীভাবে এর থেকেও বেশী জানি— এ না এলে ভেতরে কিছু একটা বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে মাতৃত্ব, বাৎসল্য, প্রেম, শরীর সব এক বিন্দুতে মিলে যেতে পারে। সময় থেকে সময়ের দিকে কবিতা বয়ে যাচ্ছে, তাকে বাঁধ দিয়ে সুসংহত করলে অনেক বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে; কবিতা, কবিতা, কবিতা— যা একটি আদ্যোপান্ত সন্ন্যাসের পর্ব! এই অনুভূতি আমার নিজস্ব! কবিতা প্রসঙ্গে এ কথা আমি আগেও লিখেছি আবারও বলছি... আমার কাছে কবিতা একটা ধাত্র যে তার তারল্য ও শরীরী সংঘবদ্ধতায় পাত্রে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমার কাছে কবিতা নিভৃতের আয়না হিসাবে এসেছে, যাকে সামনে রেখে কৈফিয়তের ভয় ভুলে, দায়ের চিন্তা ভুলে, উত্তরের প্রতিক্রিয়া ভেবে বিচলিত হতে হয় না, যার সামনে প্রতিবিম্ব দাঁড়িয়ে থাকে প্রকৃত গঠন নিয়ে। ভিড়ে সে প্রকাশিত হতেই পারে, কিন্তু তার বৃদ্ধি গোপনে, অন্ধকারে, সুরক্ষায় হয় শিশুর নিদ্রাকালীন দেহের বৃদ্ধির মতো। কবিতার দেহজ উপাদান কবিতারই একমাত্র উপাদান! তাকে সাহিত্যের উপাদান না ভেবে কবিতার উপাদান ভাবাই শ্রেয়!
আরও বিষয় যখন একটি কবিতা প্রাথমিক পড়ার পরেই কী এক ঘোরে টেনে নেয় সে এক সার্থক কবিতা কারণ, ইন্দ্রিয়কে ভেল্কি দেখিয়ে সে মস্তিষ্ক ও হৃদয়কে কিছুক্ষণের জন্য হলেও বশ করেছে। এবার হতেই পারে সে কবিতার অর্থ ও গভীরতা হয়তো উচ্চ নয় কিংবা খুবই গভীর কিন্তু এসব বোঝার আগেই এর কোনো ছটা বা ফুলকি যদি ছুটে এসে কিছুক্ষণ চিন্তামুক্ত করে বশীভূত করে, অবশ্যি সেই লেখনী ক্ষমতা দাবি করে পাঠকের মনে। আমার ব্যক্তিগত মতামতের সূত্র ধরে টি এস এলিয়টের একট কথা তুলে আনি তিনি, “IT IS A TEST (THAT) GENUINE POETRY CAN COMMUNICATE BEFORE IT IS UNDERSTOOD”।
রবার্ট গ্রেভস একটি অনবদ্য কথা বলেছিলেন, “TO BE A POET IS A CONDITION, NOT A PROFESSION”।
তাই কবিকে বোধহয় কবিতার সম্পৃক্তির জন্য সব ছাড়ার মতো প্রস্তুতি নিয়ে নিতে হয়। অস্কার ওয়াইল্ড বলেছিলেন, “A POET CAN SURVIVE EVERYTHING BUT A MISPRINT”।
আসলে মস্তিষ্ক বা হৃদয় থেকে বেরিয়েই তার ধাত্র বা আয়না হলো কবিতা! ফলে একটা সময়ে যা কেবল অস্তিত্বের অংশ তাই পুরো সত্ত্বা জুড়ে প্রবেশ করতে থাকে ও ব্যাপৃত হতে থাকে।
বাংলাদেশ সময়: ১০২৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৭
এসএনএস