ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

আমার সারা জীবন অপেক্ষার: মনীষা কৈরালা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৮
আমার সারা জীবন অপেক্ষার: মনীষা কৈরালা লিট ফেস্টে নিজের সংগ্রামের গল্প বলছেন মনীষা কৈরালা

ঢাকা: একটা সময় ছিল যখন আমি শুধু অপেক্ষা করেছি। অপেক্ষা, অপেক্ষা, অপেক্ষা এবং অপেক্ষা। হাসপাতালে অন্য রোগীদের সঙ্গে আমিও অপেক্ষা করছিলাম সুস্থ হবার জন্য। কেমো নেওয়ার পর ক্যান্সার থেকে যখন সেরে উঠলাম, তখনও ডাক্তার আমাকে অপেক্ষা করিয়েছে। আমাকে তিন বছর অপেক্ষা করতে হচ্ছে।

কেননা ওটা সেরে গেলেও ফিরে আসার সম্ভাবনা আছে আরো ৯০ ভাগ। কারণ আমি খুব গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলাম।

সত্যি বলতে আমার সারা জীবন অপেক্ষার। এ নিয়ে আমার বইয়ের একটা চ্যাপ্টারও আছে, নাম ‘ইন্তেজার। ’

শনিবার (১০ নভেম্বর) ঢাকা লিট ফেস্টের শেষ দিনে বাংলা একাডেমির আব্দুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে 'হিলড' শীর্ষক সেশনে এভাবেই নিজেকে নিয়ে বলছিলেন এক সময়কার হার্টথ্রব নায়িকা মনীষা কৈরালা। এসময় তিনি তার নিজের লেখা বই 'হিলড' থেকেও কয়েকটি লাইন পড়ে শোনান দর্শকদের।

নিজের কথা বলতে বলতেই চোখে জল নিয়ে তিনি 'হিলড' থেকে পাঠ করেন, ‘১০ ডিসেম্বর ২০১২, মৃত্যু আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। আমি মরতে চাইনি। আমি চোখ বন্ধ করে ছিলাম, চোখ মেলে দেখি আমার আকাশ কালো হয়ে আসছে। নিজেকে আশ্বস্ত করলাম, আমাকে এর মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। একসময় জানতে পারলাম আমার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ, কিন্তু এটাও সত্যি যে ৬০ শতাংশ মৃত্যুর ঝুঁকি রয়েছে। আমি চোখ বন্ধ করে ভাবছি..। ’

নিজের ক্যান্সারের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে মনীষা বলেন, আমি জানি না আমার ক্যান্সার হওয়ার পর কত সময় পার হয়ে গেছে। সে সময় আমি জীবনের কঠিন একটি বাস্তবতার মধ্যে ছিলাম। আমি বিষণ্ন ছিলাম, খুব অস্বস্তি লাগতো, শারীরিকভাবেও বিপর্যস্ত ছিলাম। সে সময় ক্যান্সারে আমাকে প্রচুর ভুগতে হয়েছে। পাশাপাশি আমার পরিবার, মানসিক অশান্তি, শারীরিক যন্ত্রণা আমায় সবসময়ই ভুগিয়েছে প্রচুর।

তিনি বলেন, আমার পাকস্থলী অস্বাভাবিকভাবে বড় হয়ে গিয়েছিল। পরীক্ষা করার পর জানতে পারলাম আমার লিড স্টেজে ক্যান্সার এবং তা ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসকরাও আমাকে বলতে চাচ্ছিল না যে আমার ক্যান্সার হয়েছে। আমি বিস্ময় নিয়ে চিকিৎসকের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। অনেক পরে আমাকে জানানো হলো আমার জরায়ুর ক্যান্সার এবং সেটা কেটে ফেলে দিতে হবে। এটা শোনার পর মনে হলো আমার জীবনের নিঃসঙ্গ রাত শুরু। সে রাতে হাসপাতালে আমি একাই রইলাম। সবাই চলে গেল। আমি তখন খুব একাকী বোধ করছিলাম। আর সে রাতেই মৃত্যু এসে আমাকে প্রথম আঘাত করলো।

তবে জীবনের প্রতিটা সময় আমাদের শিক্ষা দেয় উল্লেখ করে মনীষা বলেন, আপনি যখন জানবেন মারা যাচ্ছেন, তখন আপনি আপনার হাতে থাকা অল্প সময়টুকুই সঠিকভাবে কাজে লাগাতে চাইবেন। ক্যান্সারও আমার জীবনে ঠিক তেমনি একজন শিক্ষক। এটা আমাকে জীবনের সময় সম্পর্কে শিখিয়েছে প্রচুর। আর এখন আমি আমার দ্বিতীয় জীবন অতিবাহিত করছি।

নিজের লেখা বই 'হিলড' নিয়ে প্রথমবারের মতো মনীষা কৈরালা যোগদেন কোন সাহিত্য উৎসবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা প্রথম সাহিত্য উৎসব যেখানে আমি আমার বই নিয়ে কথা বলছি। আমাকে এ আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য আমি সত্যিই কৃতজ্ঞ। অনেকে ভাবতো আমি পারবো না, কিন্তু আমি পেরেছি। শরীর ও মনের সম্মিলিত বন্ধনই সববিছুর মূল। আর মানুষ চাইলেই সেটা খুব ভালো করে করতে পারে।

নিজের একান্ত ভাবনাগুলো নিয়ে এ অভিনেত্রী বলেন, আমি সাধারণ সব নারীর মতোই স্বপ্ন দেখতাম, আমি এক সময় মা হবো। কিন্তু ক্যান্সার সে স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। এখন এভাবে ভাবি যে, নিজেকে এগিয়ে নিতে হবে।

মনীষা আরও বলেন, আমি কখনও মনে করিনি আমাকে অল্প কিছুদিন বাঁচতে হবে। আমার বিশ্বাস ছিল আমি একদিন পুরোপুরি সুস্থ হবো। আর ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষগুলোকে সুস্থ্য করার জন্য একটি ট্রাস্টও তৈরির ইচ্ছে আছে, কেননা এটা অনেক ব্যয়বহুল একটা চিকিৎসা। আমার সামর্থ ছিল আমি করেছি, তবে এমন অনেকে আছে যাদের সামর্থ নেই। তাদের জন্য সবার সহায়তা নিয়ে হলেও কিছু করার ইচ্ছে আছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১০, ২০১৮
এইচএমএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।