ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

হুমায়ূন আহমেদ নেই, হুমায়ূন আহমেদ আছেন

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৮
হুমায়ূন আহমেদ নেই, হুমায়ূন আহমেদ আছেন হুমায়ূন আহমেদ

ঢাকা: হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি আছেন স্মৃতিতে। যারা তার সাহচর্য পেয়েছিলেন, তাদের স্মৃতিতে তিনি রয়েছেন। যারা তার সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পাননি, তারা তার সাহিত্যকর্মকে ভালোবেসে তার নৈকট্য লাভ করেছেন। তিনি এখনও সর্বত্র বিরাজিত।

প্রয়াত নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করে এমনটাই মন্তব্য জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের। সত্যিই তাই, কোটি মানুষের হৃদয়কে ছুঁয়ে তিনি আজও জাগরূক।

মঙ্গলবার (১৩ নভেম্বর) এই কলম জাদুকরের ৭০তম জন্মদিন।

মাত্র ৬৪ বছরের জীবনে সৃষ্টিশীলতার অপার মাধুরীতে হুমায়ূন আহমেদ বশীকরণ করে রেখেছিলেন বাংলা সাহিত্যের পাঠককে। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত প্রথম উপন্যাস 'নন্দিত নরকে'র মধ্য দিয়ে তিনি বাংলা কথাসাহিত্যের পালাবদলের সূচনা করেন। সাধারণ মানুষের জীবনের গল্পগুলো অসাধারণ হয়ে উঠেছিল তার কলমে। দুই শতাধিক উপন্যাসের জনক হুমায়ূন আহমেদ ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তম হয়ে ওঠেন পেশা-বয়স নির্বিশেষে সমাজের সর্বস্তরে। তিনি হয়ে ওঠেন আমাদের আনন্দ-বেদনার এক অকৃত্রিম কথাকার।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের মেধাবী এই ছাত্র পাঠ শেষে ওই বিভাগেই যোগ দেন প্রভাষক হিসেবে। দুই দশক পর তিনি অধ্যাপনা ছেড়ে লেখালেখি, নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণে যুক্ত হন। এর মধ্যে তিনি সাহিত্যে অনন্য উচ্চতায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। গল্প, উপন্যাস, নাটক, শিশুসাহিত্য, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী, চলচ্চিত্র পরিচালনা, সঙ্গীত রচনা, চিত্রাঙ্কনসহ শিল্প-সাহিত্যের অনেক ক্ষেত্রে তিনি রেখে গেছেন প্রতিভার স্বাক্ষর। আর সাহিত্যের যে ক্ষেত্রেই নিজের পদচিহ্ন এঁকেছেন, প্রতিটিতে স্বর্ণ সাফল্যের দেখা পেয়েছেন।

জীবদ্দশায় হুমায়ূন আহমেদ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে জাদুকরী লেখনীশক্তিতে পাঠকদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছিলেন। সহজ-সরল অথচ তীব্র আবেদনময়, অনন্য গদ্যশৈলীর সিঁড়ি বেয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠে গিয়েছিলেন এই অমিত প্রতিভাধর কথাশিল্পী। সাধারণ মানুষের জীবনের গল্পগুলো অসাধারণ হয়ে উঠেছিল তার কলমে। উপন্যাস ও নাটকে তার সৃষ্ট চরিত্র বিশেষ করে 'হিমু', 'মিসির আলি' ও 'শুভ্র' তরুণ-তরুণীদের কাছে হয়ে ওঠে পাঠক ও দর্শকপ্রিয়। জনপ্রিয়তার জগতে তিনি হয়ে ওঠেন একক ও অনন্য।

'আমার কাছে জীবন মানে অফুরান এক আনন্দ'... বলতেন বাঙালির হৃদয়নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদ। আর সেই আনন্দ থেকেই তিনি কোটি হৃদয়ের জন্য লিখে রেখে গেছেন নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, আগুনের পরশমণি, লীলাবতী, কবি, সাজঘর, গৌরীপুর জংশন, নৃপতি, অমানুষ, বহুব্রীহি, এইসব দিনরাত্রি, শুভ্র, নক্ষত্রের রাত, কোথাও কেউ নেই, শ্রাবণ মেঘের দিন, বৃষ্টি ও মেঘমালা, মেঘ বলেছে যাব যাব, জোছনা ও জননীর গল্প প্রভৃতি। তার সর্বশেষ উপন্যাস 'দেয়াল'ও পায় আকাশচুম্বী পাঠকপ্রিয়তা। তিনি রচনা ও পরিচালনা করেছেন বহু একক ও ধারাবাহিক নাটক এবং চলচ্চিত্র।

বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পকে পরিণত ও এগিয়ে নিতেও হুমায়ূন আহমেদের অবদান অপরিসীম। এককভাবে বইয়ের বাজার সৃষ্টি করে ও প্রকাশনা শিল্পে অর্থপ্রবাহ তৈরির মধ্য দিয়ে এ শিল্পে গতিশীলতা নিয়ে আসেন তিনি। জীবিতাবস্থায় তিনি ছিলেন একুশে গ্রন্থমেলার অন্যতম প্রধান আকর্ষণ। তিনি চলে যাওয়ার পরও বইমেলায় হুমায়ূন আহমেদের বই কিনতে এখনও ভিড় জমান তার ভক্ত-অনুরাগীরা।

১৯৪৮ সালের আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করা দীর্ঘ চার দশকের সাহিত্যজীবনে অমর এ কথা সাহিত্যিক মানুষের ভালোবাসার সঙ্গে পেয়েছেন সম্মানও। এর মধ্যে একুশে পদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, লেখকশিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন দত্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও বাচসাস পুরস্কার অন্যতম। দেশের বাইরেও সম্মানিত হয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ। এমনকি তার নামে প্রবর্তিত হয়েছে এক্সিম ব্যাংক-অন্যদিন হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার।

উপস্থাপনার স্বভাবকারিগর, অবিরাম রচনা-উৎস আর চিন্তার বহুবর্ণিল রামধনুধর হুমায়ূন আহমেদ ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউইয়র্কে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৬৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। চলে যাওয়ার অনেকটা বছর পেরিয়ে গেলেও মানুষ তাকে এখনও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে স্মরণ করে গভীর ভালোবাসায়, গভীর মমতায়।  

তাইতো দিবসটি উপলক্ষে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল-আই 'হুমায়ূন মেলা'র আয়োজন করেছে। তেজগাঁওয়ে চ্যালেন আই প্রাঙ্গণে এই মেলায় থাকবে নানা আয়োজন। জাতীয় জাদুঘরের আয়োজনে রয়েছে ‘হুমায়ূন আহদেমের সাহিত্য ও জীবন’ শীর্ষক স্মরণ অনুষ্ঠান। এছাড়া ঘরোয়াভাবে কেক কাটার পাশাপাশি বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন আজ হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

পৃথিবীকে বিশেষ করে এ দেশকে অনেক ভালোবেসে হুমায়ূন আহমেদ লিখেছিলেন, 'আমরা জানি একদিন আমরা মরে যাব, এই জন্যেই পৃথিবীটাকে এতো সুন্দর লাগে। যদি জানতাম আমাদের মৃত্যু নেই, তাহলে পৃথিবীটা কখনোই এতো সুন্দর লাগতো না। ' তিনি সুন্দর পৃথিবীর স্বপ্ন দেখেছেন, সুন্দর মানুষের গান গেয়েছেন। তাইতো আজও আমরা তাকে যেন খুঁজে পায় সব সুন্দর সৃষ্টিগুলোর মধ্যেই।

বাংলাদেশ সময়: ১০০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০১৮
এইচএমএস/আরআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।