ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

বাংলার মহাস্থান হয়ে ওঠার নাটক 'মহাস্থান'

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৮
বাংলার মহাস্থান হয়ে ওঠার নাটক 'মহাস্থান' নাটক মহাস্থান

ঢাকা: আড়াই হাজার বছরের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে মঞ্চায়ন হলো প্রত্ননাটক ‘মহাস্থান’। ড. সেলিম মোজাহারের রচনা ও লিয়াকত আলী লাকীর নির্দেশনায় প্রযোজনাটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয় বগুড়ার মহাস্থানগড় ভাসু বিহারে।

শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রযোজিত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় এ প্রত্ননাটকটি তিন শতাধিক শিল্পী-কলাকুশলীর অংশগ্রহণে নির্মিত প্রত্নতাত্ত্বিক মহাস্থানগড়ের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ইতিহাসের শৈল্পিক উপস্থাপন।

মহাস্থান নাটকে আমাদের জাতিসত্তার ইতিহাসকে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে। মহাস্থানগড়ের প্রাচীন ইতিহাসের সঙ্গে সময়ের পরম্পরায় বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম পর্যন্ত সময়কালকে একক গ্রন্থনায় ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এ নাটকে প্রাচীন শিকারযুগ থেকে শুরু করে বৈদিকযুগ, আদিবাসী পর্ব, রামায়নের গীত, কালিদাসের কাব্য, চর্যাপদ, সুফিসামা, বৈষ্ণব পদাবলী, ব্রাহ্মসংগীত, লোকগান, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ব্রতচারীদের গান, পঞ্চকবির গান, ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত ইতিহাস, কাব্য-গীত ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা পালাগানরূপে প্রকাশিত হয়েছে।  

নতুন প্রজন্মের সামনে ইতিহাস-ঐতিহ্য উপস্থাপনের পাশাপাশি আমাদের যে সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের আলোকিত অধ্যায় রয়েছে, সেটাই প্রকাশের চেষ্টা করা হয়েছে মহাস্থান নাটকের মধ্যদিয়ে।

শিল্পকলা একাডেমি জানায়, ঐতিহাসিক এ স্থানটি একসময় ধর্মীয় তীর্থস্থান হিসেবেও পরিণত হয়েছিলো। ধর্মের বাণী বুকে নিয়ে কেউ মানবতার কথা বলেছেন কেউ আবার মানুষের অধিকার নষ্ট করেছেন। এসব কীর্তি, কৃষ্টি ও সভ্যতার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে ‘মহাস্থান’ নাটকে। প্রাচীরবেষ্টিত এ নগরীর ভেতর রয়েছে বিভিন্ন সময়ের নানা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন।

‘মহাস্থান’ প্রত্ননাটকের মধ্যদিয়ে বিভিন্ন সময়ের শাসন-শোষণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

নাটক মহাস্থানএ প্রসঙ্গে নাটকটির নির্দেশন লিয়াকত আলী লাকী জানান, পৃথিবীতে এভাবে আর্কিও ড্রামার ইতিহাস নেই। এর কাজ প্রত্ন-ইতিহাসকে দৃশ্যকাব্যে রূপান্তরিত করে শিল্পে রূপ দেওয়া। মহাস্থানের গৌরবোজ্জ্বল আখ্যানের ভিতর দিয়ে সমগ্র বাংলার মহাস্থান হয়ে ওঠার গল্প এ নাটকটি। মহাস্থান, কোটি বছরজুড়ে এ মটির জেগে ওঠার কথা। হাজার হাজার বছর ধরে তার মানব বসতির কথা।

নাট্যকার সেলিম মোজহার জানান, বাংলার প্রাচীনতম রাজধানী পুন্ড্রনগরের ‘মহাস্থান’কে কেন্দ্রভূমিতে রেখে-মহামুনি গৌতম বুদ্ধের বাংলায় আগমনকাল থেকে ১৯৭১-এর বাংলাদেশ কাল ব্যক্তির এ-নাট্য-আখ্যানে পুরো গল্পটাকে একসঙ্গে বলার চেষ্টা হয়েছে। বাংলা অঞ্চলের ঐতিহাসিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক পট ও তার পরিবর্তনের ইতিহাসের ‘জানা ও জনপ্রিয়’ গল্পপ্রবাহ এ-নাটকের অখ্যানভাগ।

সন্ধ্যায় নাটকটির মঞ্চায়নের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মঞ্চসারথি নাট্যজন আতাউর রহমান, বিশিষ্ট নাট্যজন অধ্যাপক আবদুস সেলিম, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলতাফ হোসেন, বগুড়ার জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ, পুলিশ সুপার মো. আলী আশরাফ ভূইঞা বিপিএম এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সচিব মো. বদরুল আনম ভূঁইয়া।

উদ্বোধনী মঞ্চায়নে কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক বলেন, বগুড়া আমার খুব প্রিয় শহর। বগুড়ার মাটি যেমন উর্বর এর সংস্কৃতির ইতিহাসও অনেক পুরনো। মহাস্থান হিন্দু, বৌদ্ধ ও মুসলমান তিনটি সভ্যতার শিল্প পিঠস্থান। এই স্থানকে নিয়ে নির্মিত নাটকটি বিশেষ গুরুত্ববহ।

বাংলাদেশ সময়: ০৫১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৮
এইচএমএস/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।