ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

সুরের ভুবনে বেঁচে থাকবেন মুন্‌শী রইস উদ্দীন

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০১৮
সুরের ভুবনে বেঁচে থাকবেন মুন্‌শী রইস উদ্দীন সংগীত শিক্ষা প্রসারে ওস্তাদ মুন্‌শী রইস উদ্দীন। ছবি: বাংলানিউজে

ঢাকা: বাংলাদেশের সংগীতের ইতিহাসে ক্ষণজন্মা যে ক’জন সংগীত সাধকের জন্ম হয়েছিল, তাদের মধ্যে মুন্‌শী রইস উদ্দীন অন্যতম। উপ-মহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ মুন্‌শী রইস উদ্দীনকে স্মরণ করেই বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর আয়োজন করে ‘সংগীত শিক্ষা প্রসারে ওস্তাদ মুন্‌শী রইস উদ্দীন’ শীর্ষক সেমিনার।

রোববার (২ ডিসেম্বর) জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ।

এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন- লোক সংগীত শিল্পী ও গবেষক অধ্যাপক ইন্দ্রমোহন রাজবংশী।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সঙ্গীত গবেষক ড. জেসমিন বুলি। আলোচনা করেন ওস্তাদ মুন্‌শী রইস উদ্দীনের ছেলে এ.এফ.এম আসাদুজ্জামান এবং গণ-সংগীত শিল্পী মাহমুদ সেলিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বরেণ্য সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান।

মূল প্রবন্ধে ড. জেসমিন বুলি বলেন, গুণী এ শিল্পী তার বাবার ধ্রুপদী ও টপ্পাচর্চার কথা শুনে শুনেই নিজেকে প্রস্তুত করতে শুরু করেন ভবিষ্যৎ জীবনের ধ্রুপদী সংগীতের এক অনুরাগী হিসেবে। শিল্পের প্রতি অমোঘ ভালোবাসায় পরবর্তীতে মাগুরা, নড়াইল ও খুলনাতেও সংগীত বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।  

১৯৩৮ সালে 'আর মুন্সি' ছদ্মনামে কলকাতা বেতারে সংগীত পরিবেশন করেন। এছাড়া মুন্সি রইস উদ্দিন উত্তরসূরিদের জন্য ‘আলম পিয়া’ ছদ্ম নামে অসংখ্য রাগভিত্তিক গান সৃষ্টি করেছেন। বেশকিছু বাণীপ্রধান গান সুর করেছেন, স্বরলিপিও ছেপেছেন বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায়।

আলোচনায় এ এফ এম আসাদুজ্জামান বলেন, উচ্চাঙ্গ সংগীতের ইতিহাস অধ্যয়ন ও ক্রমবিকাশের পটভূমি রচনায় শিল্পীর অবদান অনস্বীকার্য। ‘সরল সঙ্গীতসার’ নামে সংগীতগ্রন্থের একটি পাণ্ডুলিপি প্রণয়ন করেন তিনি। সংগীতশিক্ষা পদ্ধতি নামে আরেকটি গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি ও পদ্মাবতী নামে একটি ‘রাগ’ ও সৃষ্টি করেন। এ খ্যাতিমান সংগীতজ্ঞ অভিনব শতরাগসহ প্রায় সহস্র গীত বন্দেশ রচনা করেছেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ বলেন, ওস্তাদ মুন্‌শী রইস উদ্দীনকে নিয়ে কোনো সেমিনারের আয়োজন করা হয়নি। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর এবারই প্রথম সেমিনারের আয়োজন করেছে। আগামীতে আরও ব্যাপক পরিসরে তাকে নিয়ে অনুষ্ঠান করা হবে।

প্রধান মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সংগীতের ইতিহাসে যে কতিপয় ক্ষণজন্মা পুরুষের নাম নিয়ে গর্ব করা যায় তাদের মধ্যে ওস্তাদ মুন্‌শী রইস উদ্দিন প্রথম সারির এক ব্যক্তিত্ব। সংগীতের ভূবনে অনন্য সৃজন শীলতার সুদীর্ঘ পথ ধরে এই ব্যক্তিত্বের আগমন ঘটে। তার সৃষ্ট কর্ম সংগীত শিক্ষা প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে।

অধ্যাপক ইন্দ্রমোহন রাজবংশী বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর তিনি ঢাকা বেতারে যোগ দেন। ১৯৫৫ সালে তিনি দেশের খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠান বুলবুল ললিতকলা একাডেমির শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং পরবর্তীতে দীর্ঘদিন এখানকার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। বিদ্যালয়ে সংগীত শিক্ষার জন্য ১৯৬০ সালে তার রচিত ‘প্রবেশিকা সংগীতশিক্ষা পদ্ধতি’ গ্রন্থটি টেক্সট বুক বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত ও প্রকাশিত হয়।

সভাপতির বক্তব্যে সংগীতজ্ঞ আজাদ রহমান বলেন, তিনি স্মরণযোগ্য সুরের ভুবন সৃষ্টিসহ সংগীত জগতের এ গুণী অসংখ্য শিষ্য ও সংগীত শিল্পী সৃষ্টি করে গেছেন। আধ্যাত্মিক চিন্তা-চেতনার অধিকারী মুন্‌শী রইস উদ্দিন সংগীতের প্রতি যেমন ছিলেন অনুরক্ত, তদ্রূপ ইসলামিক অনুশাসনের জীবনযাপনে পরিপূর্ণ আন্তরিক ও অভ্যস্ত। তার কর্মের মাধ্যমেই তিনি আমাদের মাঝে চিরকাল বেঁচে থাকবেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৩, ২০১৮
এইচএমএস/জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।