শনিবার (৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ সাহিত্যিকের হাতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। এসময় তার দীর্ঘ কর্মময় জীবন নিয়ে তথ্যচিত্র প্রদর্শনী ও লেখককে উত্তরীয় পরিয়ে অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা শুরু করা হয়।
অনুষ্ঠানে পাক্ষিক অনন্যা ও দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি আসাদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাবন্ধিক অধ্যাপক আকতার কামাল।
ড. আকিমুন রহমান সমাজ, দেশ এবং মানুষ সম্পর্কে লেখেন উল্লেখ করে কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, প্রাচীনকাল থেকে বর্তমান সময়কে কী চমৎকার করেই না তিনি তার লেখায় তুলে ধরেছেন। লেখকের লেখা পড়লে বোঝা যায়, তিনি শুধু চিন্তা, বিনোদন বা মনের খোরাকের জন্য লেখেন না, বরং তার লেখা আমাদের হয়ে ওঠার জন্য।
তিনি বলেন, তার অনুসন্ধান এক জায়গায় সীমাবদ্ধ নয়। তিনি তার চিন্তাকে মেলে দেন, যাতে করে তা দেখা যায় অনেক দিক থেকে। যেন জানালা দিয়ে আরও আলো এসে সেই চিন্তাকে আরও সুন্দর করে তোলে। তার লেখনীতেই বোঝা যায় তিনি অনেক পরিশ্রম করে লেখেন। তার ভেতরে ইচ্ছে আছে বলেই তার এতো পরিশ্রম। আর এই পরিশ্রম একটি সুন্দর পৃথিবীর জন্য।
অধ্যাপক আকতার কামাল বলেন, এই পুরস্কারটি যিনি পেয়েছেন, তার এটা প্রাপ্য ছিল। তিনি লেখেন দায়িত্ববোধ থেকে। তার লেখা অত্যন্ত দারুণ, সুন্দর এবং গতিময়। আর এই লেখক আমার ছাত্রী হওয়ায় আমি আরও বেশি গর্ববোধ করছি।
নারীদের অধিকার আদায় এবং রক্ষায় অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার সমাজে বিশেষ অবদান রাখছে বলেও এসময় মন্তব্য করেন তিনি।
আর একান্ত আলাপে ড. আকিমুন রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পুরস্কারটি পেয়ে আমার ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে। আমার মনে হচ্ছে যে, ঘুমের আগে সহস্র মাইল পথ চলার আছে এবং আমি মাত্র চেষ্টা করে যাচ্ছি, এখনি পুরস্কৃত হওয়ার কিছু হয়নি।
তিনি বলেন, আমার মনে হয় মাঝে মাঝে আমরা যেমন সাধারণ খাবারের বাইরে ফুচকা বা চটপটি খেতে যায়, এরকম দু-একটি পুরস্কার সেরকম উদ্দীপকের ভূমিকা পালন করতে পারে। কিন্তু আসলে লেখককে একেবারে বিজনে নিজের সাধনা করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই। তাতে পুরস্কার জুটুক বা না জুটুক কিচ্ছু এসে যায় না! তাকে লিখে যেতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে তাসমিমা হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন যাবৎ পুরস্কার দিয়ে আসছি। কিন্তু ঠিক যেটা চাইছিলাম, সেটা যেন পাচ্ছিলাম না। মানে মন ভরছিলো না। এমন সময় উঠে এলেন ড. আকিমুন রহমান। যার লেখনীতে নারীর স্বরূপ আমরা বিভিন্ন রূপে দেখতে পাই। তিনি তার লেখনীতে নারী জীবনের বিভিন্ন বাস্তবতা তুলে ধরেছেন অনন্য সৌন্দর্যে। তাকে সম্মানিত করতে পেরে আমরা নিজেরাও সম্মানিত বোধ করছি।
অধ্যাপক ড. আকিমুন রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে পিএইচডি করেছেন ড. হুমায়ুন আজাদের তত্ত্বাবধানে। গবেষণাপত্রটি ‘আধুনিক বাংলা উপন্যাসে বাস্তবতার স্বরূপ (১৯২০-’৫০)’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় বাংলা একাডেমি থেকে। তিনি মূলত ঔপন্যাসিক, গল্পকার এবং প্রাবন্ধিক হিসেবেই সুপরিচিত। এছাড়া লেখালেখির পাশাপাশি দীর্ঘদিন জড়িত রয়েছেন শিক্ষকতা পেশার সঙ্গে।
১৯৯৬ সালে ‘বিবি থেকে বেগম’ প্রকাশের মধ্য দিয়ে এই লেখক ব্যাপক আলোচিত হন। এছাড়া তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহের মধ্যে রয়েছে- আধুনিক বাংলা উপন্যাসে বাস্তবতার স্বরূপ, সোনার খড়কুটো, পুরুষের পৃথিবীতে এক মেয়ে, রক্তপুঁজে গেঁথে যাওয়া মাছি, এইসব নিভৃত কুহক, জীবনের পুরোনো বৃত্তান্ত, নিরন্তর পুরুষ ভাবনা, পৌরাণিক পুরুষ, বাংলা সাহিত্যে বাস্তবতার দলিল (১৩১৮-১৩৫০ বঙ্গাব্দ), সাক্ষী কেবল চৈত্রমাসের দিন আদি পর্ব, যখন ঘাসেরা আমার বড়, অচীন আলোকুমার ও নগন্য মানবী ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১৯
এইচএমএস/আরআর