কথা সাহিত্যিক আবুল কাশেমের নতুন ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস ‘মৌর্য’ নিয়ে বলতে গিয়ে এমনটিই বলছিলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বুধবার (২৩ জানুয়ারি) বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘মৌর্য’ উপন্যাসের প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বইটি নিয়ে আলোচনা করেন শিক্ষাবিদ-কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন অন্যপ্রকাশের পরিচালক আবদুল্লাহ নাসের।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, গ্রন্থাকার আবুল কাশেম তার সবগুলো উপন্যাসই লিখেছেন ইতিহাসকে আশ্রয় করে। তিনি ফিরে গেছেন ২৩শ’ বছর আগে। সেই সময়ের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আমরা খুব বেশি জ্ঞাত নই। লেখক এতে ইতিহাসের উপাদান নিয়েছেন আবার কল্পনা দিয়ে সেই সময়ের ছবি এঁকেছেন।
দুই হাজার তিরশ’ বছর আগের কাহিনী নিয়ে ইতিহাস নির্ভর এক প্রেমাখ্যান ‘মৌর্য’। এতে প্রথম মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে গ্রিক সম্রাট সেলুকাসের কন্যা কর্নেলিয়ার প্রেমের বয়ান আছে। কথাসাহিত্যিক আবুল কাশেম তার ইতিহাস আশ্রয়ী উপন্যাস ‘মৌর্য’-তে চমৎপ্রদ এ প্রেমকাহিনী তুলে ধরেছেন। বইটি প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ।
বইটি সম্পর্কে বলতে গিয়ে লেখক বলেন, উপন্যাসের পাণ্ডুলিপিটা আমি বাসা বদলানোর সময় হারিয়ে ফেলেছিলাম। তবে এর দুই-তৃতীয়াংশ আমার কম্পিউটারে কম্পোজ করা ছিল। সেখান থেকে ওই অংশটুকু উদ্ধার করে আবারও নতুন করে শেষ করতে হয়েছে লেখাটা। তবে আমি আনন্দিত যে, প্রথম অবস্থায় যা লিখেছিলাম, দ্বিতীয়বার তার থেকে অনেক ভালো কিছু করতে পেরেছি।
প্রকাশনা উৎসবে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ইতিহাসের ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস। বইটির কলেবর দেখে ভালো লাগছে। পড়তে গিয়ে আমি কোথাও আটকালাম না। পড়া বন্ধ করতে পারলাম না। এই ধরনের সাহিত্য আমাদেরকে ইতিহাস জানবার সুযোগ করে দেয়।
অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ইতিহাস নির্ভর উপন্যাসে দু’টি বিষয় থাকে। একটি সত্য ও একটি কল্পনা; এ দু’টো ধরে এগোতে হয়। এজন্য গবেষণার প্রয়োজন হয়, যেটি লেখক করেছেন। উপন্যাসে ইতিহাসের চরিত্রগুলো যথাযথভাবে তিনি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এছাড়া পত্র সাহিত্যের জায়গাতেও বেশ সাবলীল ও সার্থক লেখক। কথোপকথনে তিনি একটা ছন্দ স্থাপন করেছেন ভাষার ভেতর দিয়ে। আর দারুণভাবে ছবি এঁকেছেন সেই ২৩০০ বছর আগেকার সময়ের।
বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, উপন্যাসে শুধু একজন কথাশিল্পী নয় একজন গবেষকেরও মিলন ঘটেছে। কথা এবং গবেষণা না মিললে এমন উপন্যাস সৃষ্টি করা যায় না। উপন্যাসে ইতিহাসের সঙ্গে কল্পনার এক অনন্য মিলে লেখক অনেক দূর এগিয়ে গেছেন।
উপন্যাসের কাহিনীতে, প্রথম মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক সম্রাট সেলুকাসের কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। এ বিয়ের সঙ্গে ইতিহাস এবং প্রেম দুই-ই যুক্ত রয়েছে। যেহেতু কোনো ভারতীয়ের সঙ্গে কন্যার বিয়ে দেবেন না সেলুকাস, সেহেতু প্রথমে ঘরের শত্রু নন্দরাজ এবং পরে বাইরের শত্রু সেলুকাসকে যুদ্ধে পরাজিত করেন সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত। পরাজয়ের পর সেলুকাসের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের একটি সন্ধিচুক্তি হয়। তাতে সেলুকাসের কন্যা কর্নেলিয়ার সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের বিয়ে, চন্দ্রগুপ্তের সেলুকাসকে পাঁচশ’ যুদ্ধহস্তি প্রদান এবং দখলকৃত ভারতীয় এলাকাগুলো মৌর্যদের হাতে তুলে দেওয়ার শর্তজুড়ে দেওয়া হয়। সেলুকাস নিরুপায় হয়ে শর্ত মেনে নেন। ধ্রুপদী উপন্যাস ‘মৌর্য’তে ইতিহাসের সংশ্লেষ এটুকুই। এতে আছে বহু ঘটনা, নানা গল্প আর চমৎকার একটি কাহিনি। আছে বেশক’টি বৃহৎ চরিত্রের উপস্থাপনা। যেমন চন্দ্রগুপ্ত, সেলুকাস, কর্নেলিয়া (হেলেন), মেগাস্থিনিস, চাণক্য, আচার্য ভদ্রবাহু...। তারা রাজনীতি, প্রেম, কূটনীতি, কূটকৌশল এবং আধ্যাত্মিক শক্তির এমন সব বাস্তব এবং মানবীয় চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করেন, যা সর্বকালের রাষ্ট্র এবং সমাজের মধ্যেই বিদ্যমান। প্রায় দুই হাজার তিনশ’ বছর আগের কাহিনী নিয়ে লেখা এ উপন্যাসে সে-সময় ও লেখকের বর্তমানকালের দৃষ্টিভঙ্গির মেলবন্ধন পাঠককে আকর্ষণ করবে। সমৃদ্ধ প্রাচীন ভারত ও প্রাচীন গ্রীসকে একসঙ্গে পাওয়া যাবে বৃহৎ কলেবরের এ উপন্যাসে।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৯
এইচএমএস/জেডএস