নিজের ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এভাবেই অনুভূতি ব্যক্ত করেন বাংলা ছোটগল্পের এ রাজপুত্র। শনিবার (০২ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে এক নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করে ‘হাসান আজিজুল হকের ৮০ তম জন্মোৎসব উদযাপন পরিষদ’।
অনুষ্ঠানে রাজশাহীর সর্বস্তরের মানুষ হাসান আজিজুল হককে ফুল দিয়ে সম্মাননা জানান।
সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানিয়ে হাসান আজিজুল হক বলেন, ‘আজ আমার ৮০তম জন্মদিনে যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে তা দেখে আমি বাকরুদ্ধ। কথা বলার মতো ভাষা আমি হারিয়ে ফেলেছি। একালে বাঙালিরা ৮০ বছর বয়স পর্যন্ত খবই কম বেঁচে থাকে। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না আমার জীবনটা কিভাবে অতিক্রান্ত হয়ে গেলো। যারা আমাকে এভাবে ভালোবাসা উপহার দিলেন তাদের প্রতিও থাকবে আমার ভালোবাসা। ’
অনুষ্ঠানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র (রাসিক) মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘ঢাকা থেকে অনেক দূরে রাজশাহী শহর। হাসান আজিজুল হক চাইলেই রাজশাহীর থেকেও অনেক নামি-দামি শহরে বাস করতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে রাজশাহীতেই থেকে গেলেন এবং রাজশাহীকে ইতিহাসে সম্মানিত করেছেন’।
অনুষ্ঠানে রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) আয়েন উদ্দিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, রাবির সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক সাইদুর রহমান খান, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল খালেক, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানউদ্দিন, ইমেরিটাস অধ্যাপক অরুণ কুমার বসাক, পুন্ড্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোখলেচুর রহমান, অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা, লেখক অধ্যাপক জুলফিকার মতিন, ভাষা সংগ্রামী মোশাররফ হোসেন আকুঞ্জি প্রমুখ বক্তব্য দেন।
১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামের সম্ভান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন বরেণ্য কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। তার পঞ্চাশটিরও বেশি কবিতা, ছোটগল্প ও উপন্যাস রয়েছে। গল্পগ্রন্থ ‘সমুদ্রের স্বপ্ন’, ‘শীতের অরণ্য’ কিংবা উপন্যাস 'আগুনপাখি' তাকে নিয়ে গেছে অনন্য উচ্চতায়।
হাসান আজিজুল হকের উল্লেখযোগ্য রচনাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’, ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘পাতালে হাসপাতালে’, ‘নামহীন গোত্রহীন’, ‘চলচিত্রের খুটিনাটি’, ‘মা মেয়ের সংসার’, ‘বিধবাদের কথা ও অন্যান্য গল্প’, ‘সক্রেটিস’, ‘বৃত্তায়ন’, ‘শিউলি’, ‘ফিরে যাই ফিরে আসি’, ‘উঁকি দিয়ে দিগন্ত’, ‘করতলে ছিন্নমাথা’, ‘লাল ঘোড়া আমি’, ‘ফুটবল থেকে সাবধান’ প্রভৃতি।
কথাসাহিত্যে অনবদ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা।
এর মধ্যে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার (১৯৭০), অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮১), আলাওল সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৩), অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৪), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৮) পুরস্কার।
এছাড়া ১৯৯৯ সালে 'একুশে পদকে' ভূষিত হন হাসান আজিজুল হক। ২০১২ সালে তিনি ভারতের আসাম বিশ্ববিদ্যালয় ও ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডিলিট ডিগ্রি দেওয়া হয় তাকে।
বাংলাদেশ সময়: ২১৫৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৯
এসএস/এমএ