ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

শুকশারি গল্পেরা নাগালে: যাপনের গল্প-সময়ের ভাষ্য

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
শুকশারি গল্পেরা নাগালে: যাপনের গল্প-সময়ের ভাষ্য শুকশারি গল্পেরা নাগালে গল্পগ্রন্থের প্রচ্ছদ

অবাক করা এক তথ্য ইন্টারনেটে পাওয়া যায়, প্রতিদিন নাকি সাড়ে ছয় হাজারের উপর বই বের হচ্ছে গোটা দুনিয়ায়। এই ই-বুক, ই-পাবে, সোশ্যাল মিডিয়া, বিভিন্ন গ্যাজেটের ভিড়েও মানুষের বই প্রকাশের আগ্রহ কমেনি তেমন।

মানুষ আসলে বলতে চায় তার গল্পগুলোকে, তার অনুভূতির রঙে আঁকা কাব্যভাষা কিংবা তার গবেষণা আর পড়াশোনায় উপলব্ধি পাওয়া জ্ঞান বিজ্ঞান দর্শন চিন্তাকে ছড়িয়ে দিতে চায় সবখানে। সেই আড়াই হাজার বছরের পুরনো, মেসোপটেমিয়ার সুমেরীয় সভ্যতায় নাকি লেখা হয়েছিল 'গিলগামেশ' মহাকাব্য।

প্রাচীন সাহিত্যের নিদর্শন এখন অব্ধি সেটাই, সেখানে লেখা ছিল বীরের কাব্য। শহরের রাজা ঐশ্বরিক নানান ক্ষমতায় রক্ষা করে তার শহরকে।

তানবীরা তালুকদারের গল্পে বীরেরা নেই। আছে আপসে ফুরিয়ে যাওয়া মানুষের গল্প। তার আগের গল্পগ্রন্থ 'পাহাড় ও নদীর গল্পের' মতোই এখানে আছে আটপৌরে সুঃখ-দুঃখ আর এইদেশে বয়ে নিয়ে চলা জীবনের কথোপকথন। ‘যাপনের গল্প’ কেন বললাম শিরোনামে? কারণ অনেকগুলো গল্পই আমাদের চারপাশে মানুষ কিংবা নিজের জীবনের সঙ্গে মিলে যায়।  

মনে হয়, এ তো আমাদেরই জীবনভাষ্য, লেখিকা কীভাবে জানি জেনে গেলেন। আমাদের ব্যস্ত মধ্যবিত্ত এই নাগরিক জীবনে আসে প্রেম, থাকে বিরহ, হয় সংসার, আসে ফেসবুক, সম্পর্ক নতুন সৃষ্টি হয় আবার ভেঙে যায়। দাম্পত্যের টানাপড়নে, অশ্রু, দীর্ঘশ্বাস, হতাশা একাকীত্ব। এ গ্রন্থের বেশিরভাগ গল্পই এ সময়ের প্রতিচ্ছবি, এই কাচভাঙা সময়টাকে কোথাও মলাটবন্দি করে রাখার চেষ্টা। বলা যায় চেষ্টায় তিনি আপাতদৃষ্টিতে সফল। কিছু কিছু গল্প ছুঁয়ে যাবে আপনার মনকে। আবার কয়েকটা গল্প মুক্তগদ্যের মতন করে লেখা, শিহরণ জাগাবে প্রাণে।

তবে একটু হতাশ হয়েছি আমি মুক্তিযুদ্ধের গল্পগুলোতে। প্লট এত ভালো, কিন্তু গল্পগুলোতে কোথায় জানি দায়সারা হয়ে যাচ্ছে। লেখক যদি আরেকটু সময় নিয়ে লিখতেন তবে সেই কয়েকটি গল্প অনবদ্য হতো। সমসাময়িক ঘটনা প্রবাহে লেখা 'অন্তহীন গন্তব্য' গল্পটা সত্যিই অসাধারণ। আমাদের একটা বিশেষ সময়ের রাজনৈতিক ঘূর্ণিপাকের উপাখ্যান। এরকম সাহসী গল্প আর কাউকে বলতে শুনি না।

'শিকড় যেখানে' গল্পটাও ভাবতে শেখায়, এক ইউরোপের বেড়ে ওঠা যুদ্ধশিশুর মাতৃভূমিকে নিয়ে আবেগের গল্প শোনায়। 'কড়ি দিয়ে সাধনা' আর 'নীতুদের গল্পগুলো' গল্প দুটো নারীর জীবন নিয়ে। কি ধরনের আপস আর লোক দেখানো ভালো মানুষদের সাথে চলতে হয় তারই আখ্যান। এই গল্পগুলো দূরের কোনো গল্প না, আমাদের আশপাশেই থাকে।  

পাঠ করলেই বুঝে যাবো এই দুর্বিনীত সময়ের আবেগ অনুভূতি যাপিত জীবনের কিছুটা নির্যাস। তানবীরা তালুকদারের বয়ানে গল্পগুলো সুলিখিত হয়ে এসে পড়েছে আমাদের নাগালেই। তরতর গদ্যে আর আধুনিক জীবন যাপনের অনুষঙ্গের এই লেখাগুলো পড়তে শুরু করলে ডুবে যাবেন এক মুগ্ধতায়। এরকম ঝরঝরে গল্পগ্রন্থ সহজে মিলে না আজকাল। তানবীরা তালুকদারের ভাষার স্টাইল নিয়ে আশাকরি পাঠকরা একমত হবেন আমার সাথে। সুখপাঠ্য গল্পগ্রন্থটি অন্যদেরও ভালো লাগবে বলে আমার বিশ্বাস।  

শুকশারি গল্পেরা নাগালে
মূল্য: দুইশত টাকা 
সিঁড়ি প্রকাশন
স্টল নম্বর: ৫৯
৭ 

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৯
এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।