ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

কথার ঝুড়ি নিয়ে বাড়ি ফেরা

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯
কথার ঝুড়ি নিয়ে বাড়ি ফেরা অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ছবি: শাকিল আহমেদ

গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: একুশে ফেব্রুয়ারির বিকেলে অমর একুশে গ্রন্থমেলা চেতনার সিঁড়ি বেয়ে পরিণত হয় জনারণ্যের বইমেলায়। সকাল থেকেই প্রভাতফেরি শেষ করে সবাই যেমন বইমেলা এসেছে, তেমনি বিকেলের পর থেকে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জনস্রোত আছড়ে পড়ে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে। আর সে প্রাঙ্গণ থেকে মায়ের জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে ফিরছেন বই ভালোবাসা মানুষগুলো।

বৃহস্পতিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) একুশের চেতনাকে ধারণ করে গ্রন্থমেলায় নতুন বই এসেছে ৩৯৬টি। এর মধ্যে গল্প ৫২টি, উপন্যাস ৫২টি, প্রবন্ধ ২৭টি, কবিতা ১৪৫টি, গবেষণা ৮টি, ছড়া ৮টি, শিশুসাহিত্য ৯টি, জীবনী ১৩টি, মুক্তযুদ্ধ বিষয়ক ১০টি, রচনাবলী ২টি, নাটক ৯টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ৮টি, ভ্রমণ বিষয়ক ৭টি, ইতিহাস বিষয়ক ৬টি, রাজনীতি ২টি, স্বাস্থ্য বিষয়ক ১টি, সায়েন্স ফিকশন ৪টি, অনুবাদ ৫টি এবং অন্যান্য ২৮টি।

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশে বক্তব্য। বাংলা ভাষার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ শীর্ষক একুশে বক্তব্য রাখেন ভাষা সংগ্রামী জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পুরান ঢাকার চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

স্বাগত বক্তব্যে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, আমাদের একুশ আজ সারা বিশ্বের। সালাম, বরকত, রফিক, শফিক, জব্বারের রক্তে লাল হওয়া ঢাকার রাজপথ বিশ্বকে মাতৃভাষাপ্রীতির যে ইতিহাস উপহার দিয়েছিল, সেই পথ লক্ষ্য করে এখন সময় এসেছে সর্বস্তরে মাতৃভাষা বাংলার প্রচলন এবং যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে মাতৃভাষা দিবসের অন্তর্গত অঙ্গীকার ধারণ করে দেশের সব আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখাও আমাদের জাতীয় দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইতিহাস বহু অবদান ও পরম্পরায় ঋদ্ধ। এ নিয়ে কোনো সরলীকরণের কোনো সুযোগ নেই। এই ভাষা ও সাহিত্য যেমন প্রাচীন চর্যার ধারাবাহিকতায় পুষ্ট তেমনি মধ্যযুগের মুসলিম অবদানেও সমৃদ্ধ। বিশেষ করে সে সময় সাহিত্যে দেবতাবাদের পরিবর্তে মানববাদের যে স্ফুরণ লক্ষ্য করা যায় পরবর্তীকালে তাই বাংলা সাহিত্যে মূল কাঠামো ও মর্ম নির্ধারণ করেছে। এরপর ইংরেজ আগমন এই ভাষা ও সাহিত্যে পাশ্চাত্য প্রভাব অঙ্গীকৃত করেছে; আর তারপর দেশভাগের অভিঘাত, ভাষা-আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের অশ্রু ও রক্ত স্রোতের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের নতুন গতি ও গন্তব্য নির্ধারণ করে যা এখনও পর্যন্ত বহমান।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার পর পর বাংলা ভাষার ব্যবহারে আমরা ব্যাপক উৎসাহ দেখালেও এখনও সুচারুরূপে বাংলার ব্যবহারে পূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করতে পারিনি। আর অন্যদিকে আমাদের দেশে অনেক জনগোষ্ঠী আছে যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয় যদিও তাদের অনেকেই শিক্ষা ও অন্যান্য প্রয়োজনে বাংলা ভাষা ব্যবহার করে। এদের উত্তরপ্রজন্মের অবশ্যই তাদের মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের অধিকার আছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে আমাদের এ বিষয়ে সচেতনতা এবং স্পষ্ট অঙ্গীকার প্রয়োজন।

আলোচনা শেষে কবি কণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, হাসান হাফিজ, কাজল বন্দ্যোপাধ্যায়, জাফর আহমদ রাশেদ, আলফ্রেড খোকন এবং সোহেল হাসান গালিব।
আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী ইকবাল বাহার চৌধুরী, আহ্কাম উল্লাহ এবং তামান্না সারোয়ার। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল ফকির সিরাজের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী’র পরিবেশনা। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফকির আলমগীর, প্রমীলা চক্রবর্তী, মহাদেব ঘোষ, লাইসা আহমদ লিসা, বুলবুল ইসলাম, জান্নাত-ই-ফেরদৌসী এবং নীলোৎপল সাধ্য।

শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) মেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলায় শিশুপ্রহর ঘোষণা করা হয়েছে সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত।

সকাল সাড়ে ১০টায় অমর একুশের উদ্যাপনের অংশ হিসেবে শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সংগীত প্রতিযোগিতা, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশু-কিশোরদের পুরস্কার দেওয়া হবে। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ।  

বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকার শতবর্ষ: ফিরে দেখা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. মাহবুবুল হক।  

আলোচনায় অংশ নেবেন সাইফুদ্দীন চৌধুরী, আলী হোসেন চৌধুরী এবং এম আবদুল আলীম। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক আবুল আহসান চৌধুরী। সন্ধ্যায় রয়েছে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ, কবিতা-আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলাদেশ সময়: ০৪১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯
এইচএমএস/এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।