ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

দুই বাংলার বই দস্যুতা দূর করতে ‘বইসাঁকো’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৯
দুই বাংলার বই দস্যুতা দূর করতে ‘বইসাঁকো’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা। ছবি: ডিএইচ বাদল/বাংলানিউজ

ঢাকা:  ভারতীয় সাহিত্যের এখানে ব্যাপক প্রচলন থাকলেও ভারতে সেভাবে বাংলাদেশের সাহিত্যের চর্চা হয়নি। তাছাড়া ‘দস্যুতা’ (পাইরেসি) করে এদেশের লেখকদের বইয়ের জনপ্রিয়তা বিচার করে ভারতে প্রকাশিত হয়েছে অনেক বই। যার স্বত্বাধিকারী ওই বইয়ের লেখক ছাড়া অন্য কেউ। এমন পরিস্থিতি দূর করে দুই বাংলার সাহিত্যের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখতে পারবে দুই বাংলার যৌথ উদ্যোগে গঠিত ‘বইসাঁকো’ নামের নতুন প্রকাশনা সংস্থা। 

সোমবার (১৮ মার্চ) জাতীয় যাদুঘরের সিনেপ্লেক্সে ‘বইসাঁকো’র প্রকাশনা ও বইয়ের চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে দেশের বিশিষ্ট সাহিত্যিকরা এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, দুই দেশের বাংলা ভাষাভাষীদের বইয়ের ক্ষেত্রে উভয় পাশেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে।

তার প্রমাণ আমাদের সাহিত্যিকদের বইয়ের আনা-নেয়ার মধ্যে দস্যুতা। আমার একটি বই ভারতে প্রকাশিত হয়েছে, যার স্বত্বাধিকার নেয়ার ক্ষমতা আমার নেই।  

‘বইসাঁকো’র মাধ্যমে এই দস্যুতা রোধ করার আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, এপারে আমি, ওপারে তুমি থাকো তাই বাধিলাম সাঁকো। আশা করি এই প্রকাশনা সংস্থার মাধ্যমে এই বইদস্যুতা রোধ করা সম্ভব হবে।  

অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, বাংলাদেশে অনেক আগে থেকেই ভারতীয় লেখকদের বইয়ের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। কিন্তু ভারতে এই বিষয়টি সৃষ্টি হয়নি। কেননা বাংলা ভাষাভাষীর বই হিসেবে আমরা যতটা গুরুত্ব দিয়ে এদেশে ভারতীয় লেখকদের বই প্রকাশ করেছি, ভারতে তা হয়নি।  

‘তবে এমন ব্যবস্থা হচ্ছে, যাতে ভারতের বই নয় বাংলাদেশের বাংলা সাহিত্য পড়ার জন্য পাঠকরা এদেশের মুখাপেক্ষী থাকবেন। এ বিষয়ে সকল কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ’ 

অনুষ্ঠানে উপস্থিত এই মেলবন্ধনের মূল উদ্যোক্তা পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক ও গবেষক অধ্যাপক ইমানুল হক বলেন, এটা সত্য কথা যে বাংলাদেশের নামকরা লেখকদের নাম ভারতে কেউ জানে না। কলকাতায় বাংলা বইমেলায় এবার ৮ কোটি টাকার বই বিক্রি হয়েছে। মাঝখানে বাংলাদেশি লেখকদের বইয়ের চাহিদা কমেছিল, এখন আবার তা বেড়েছে।  

ভারতে বাংলা একাডেমির একটি বিক্রয় কেন্দ্র থাকা উচিৎ বলে মন্তব্য করেন তিনি।  

‘বইসাঁকো’ ভারত-বাংলাদেশের প্রকাশনার ইতিহাসে প্রথম বই প্রকাশের যৌথ উদ্যোগ। দুই দেশের দুই ঐতিহ্যবাহী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘অন্যপ্রকাশ' ও ‘পত্রভারভী’ এর উদ্যোক্তাI 

‘বইসাঁকো’র ব্যানারে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের চার ও ভারতের তিন সাহিত্যিকের বই। বাংলাদেশের সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘সেরা দশ গল্প’ , ফরিদুর রেজা সাগরের ‘এবারো হাফ ডজন ছোটকাকু’, মারুফুল ইসলামের ‘নির্বাচিত ১০১ কবিতা’ ও মাজহারুল ইসলামের হুমায়ূন আহমেদের মাকড়সাভীতি এবং অন্যান্য’। বই চারটি প্রকাশ করেছে পশ্চিমবঙ্গের প্রকাশনা সংস্থা পত্রভারতী।  

অন্যদিকে ভারতের সমরেশ মজুমদারের 'কথামালা', সত্যম রায় চৌধুরীর ‘দুনিয়াদারি’ ও ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়ের ‘আজও রোমাঞ্চকর:  স্বাধীনতার রক্তঝরা গল্প’-এই তিনটি বই প্রকাশ করেছে বাংলাদেশের প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশ।

জাতীয় জাদুঘরের সিনেপ্নেক্সে বই ৭টির মোড়ক উন্মোচিত হয়। শারীরিক অসুস্থতার কারণে সমরেশ মজুমদার ও সত্যম রায় চৌধুরী ছাড়া প্রকাশিত গ্রন্থওলোর অন্য লেখকেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন I 

এছাড়া কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, সাহিত্যিক হাসনাত আব্দুল হাইসহ গুণী লেখকরাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

‘বইসাঁকো’র এই প্রবর্তনা অনুষ্ঠানে ড. আনিসুজ্জামানের ‘বিদ্যাসাগর ও অন্যেরা’ বইটি কলকাতায় প্রকাশের বিষয়ে ‘পত্রভারতী’র সঙ্গে চুক্তি সই হয়। সমরেশ মজুমদারের ‘কথামালা" বইটি প্রকাশের চুক্তি স্বাক্ষর করে অন্যপ্ৰকাশ।  

এছাড়াও ইতোমধ্যে প্রকাশিত অন্য বইগুলোর জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে লেখক ও দুদেশের প্ৰকাশকদের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এই অনুষ্ঠানে।  

স্বাগত বক্তব্য দেন অন্যপ্ৰকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম ও পত্রভারতী’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়।  

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, পাইরেটেড বই প্রকাশের প্রক্রিয়া রোধ করা ও দুই দেশের লেখকদের ছড়িয়ে দিতেই এই উদ্যোগ। চুক্তি অনুযায়ী, প্রকাশনীগুলোর বিক্রি করা বই এর ২৫ শতাংশ এবং ৭৫ শতাংশ লেখক সম্মানী হিসেবে পাবেন।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৯
এমএএম/এমএ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।