ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

গুপী আর বাঘা: তারা দুজনায় রাজার জামাই

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৯
গুপী আর বাঘা: তারা দুজনায় রাজার জামাই গুপী গাইন বাঘা বাইন সিরিজের চলচ্চিত্রত্রয়ী

প্রথম বাঙালি হিসেবে একাডেমি পুরস্কার (অস্কার) জেতার গৌরব যার তিনি প্রথিতযশা চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়। অস্কার প্রাপ্তির মাত্র তেইশ দিন পর ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল চলচ্চিত্র জগতের এই কিংবদন্তী পার্থিব জীবন থেকে চিরবিদায় নেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে কলকাতার জীবনযাত্রা থমকে পড়ে। হাজার হাজার লোক শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর বাড়িতে আসেন।

মৃত্যুর এতবছর পরও তিনি যেন আগের মতই জীবন্ত, সকল চলচ্চিত্রপ্রেমী দর্শকদের মনে। মঙ্গলবার এই কিংবদন্তীর মহাপ্রয়াণ দিবসে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর’র পাঠকদের জন্য রইলো তার অমর সৃষ্টি গুপী গাইন বাঘা বাইন সিরিজের চলচ্চিত্রত্রয়ী নিয়ে একটি আলোচনা।

তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ময়মনসিংহে ১৮৬৩ সালে জন্মেছিলেন বিখ্যাত বাঙালি শিশুসাহিত্যিক, বাংলা ছাপাখানার অগ্রপথিক উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী। তিনি সম্পর্কে ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের দাদা। লেখক চিত্রকর, প্রকাশক, শখের জ্যোতির্বিদ, বেহালাবাদক, সুরকার কোন গুণটা ছিলোনা তার মধ্যে। বিখ্যাত পত্রিকা সন্দেশও তিনি শুরু করেন যা পরবর্তীকালে তাঁর পুত্র সুকুমার রায় ও পৌত্র সত্যজিৎ রায় সম্পাদনা করেন। সত্যজিৎ-পত্নী বিজয়া রায়ের স্মৃতিচারণামূলক বই ‘আমাদের কথা’ থেকে জানা যায়, উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরীর বিখ্যাত সৃষ্টি গুপী গাইন-বাঘা বাইন নিয়ে তারই পরবর্তী প্রজন্ম সত্যজিৎ রায়ের শিশুপুত্র সন্দীপ রায়ের অনুরোধে ১৯৬৮ সালে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন সত্যজিৎ। পরবর্তীকালে নির্মিত হয় এর আরও দুটি পর্ব। 'গুপী গাইন বাঘা বাইন'র একটি দৃশ্যগুপী গাইন বাঘা বাইন (১৯৬৮): ভূতের রাজা দিলো বর
গল্পের প্রধান দুই চরিত্র গুপী আর বাঘা। দু'জনেই গান বলতে পাগল, গান গাওয়ার প্রবল আগ্রহ তাদের দুজনের ভিতর। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা আগ্রহ দিলেও দুজনকেই রেখেছেন সাংগীতিক প্রতিভাহীন। রাজার বাড়ির সামনে সাতসকালে বেসুরো গান গাওয়ার কারণে আমলকী গ্রাম থেকে বিতাড়িত হয় গুপী। তৃতীয় সুর, ষষ্ঠ সুর.. গুপী চললো বহু দূর। গাধার পিঠে চড়ে গ্রামতাড়িত হয়ে কোন এক বাশঝোড়ের মাঝে গুপীর দেখা হয় হরতুকী গ্রামের অধিবাসী বাঘার সাথে যারও ঢোল বাজাতে গিয়ে তার মতই দশা। তাদের দুর্দশা দেখে সেই বাশঝোড়ে ঘুমের মাঝে তাদের সাথে দেখা করেন ভূতের রাজা আর দেন তিন বর। দু'জনে হাত তালি দিয়ে ১) ইচ্ছেমতো খাইতে-পোশাক পড়তে পারা ২) যেখানে খুশি যেতে পারা ৩) গুপীর গলায় ও বাঘার ঢোলে গানের সুর ফিরিয়ে দেয়া, শ্রোতাদের গান শুনিয়ে অবশ করে দেওয়ার ক্ষমতা পায় তারা।

ভাগ্যক্রমে এবার দুজনে মিলে শুন্ডী রাজ্যের রাজাকে গান শুনিয়ে তাঁর সভাগায়ক হয়ে সেখানেই পাকাপোক্ত স্থান নেয়। কিন্তু শুন্ডীর বিরুদ্ধে শুন্ডীর রাজারই আপন ভাই হাল্লার রাজা যুদ্ধ ঘোষণা করে। যুদ্ধ থামাতে গুপ্তচরের বেশে হাল্লায় যায় দুজন ও হাল্লার রাজা, মন্ত্রীদের সততা, সঙ্গীত ও বুদ্ধি দিয়ে দিয়ে পরাস্ত করে যুদ্ধ থামিয়ে দেয় তারা। পরিশেষে দুই রাজার মেয়েকে বিয়ে করে রাজার জামাই বনে যায় তারা। শুন্ডীর রাজকন্যা মণিমালাকে স্ত্রী হিসেবে পায় গুপী আর হাল্লার রাজকন্যা মুক্তামালার সঙ্গে জুটি হয় বাঘার।

উপেন্দ্রকিশোরের ‘গুপী গাইন’ গল্পের সঙ্গে অনেকখানি পার্থক্য রেখেছিলেন সত্যজিৎ রায় তার এ ছবিতে। উপেন্দ্রকিশোরের গল্প থেকে শিশু ফ্যান্টাসির সঙ্গে এ ছবিতে মিশ্রণ ছিলো বাস্তবতার। গল্পে যেখানে ছিলো গুপী চালাক, বাঘা একটু সাধাসিধে। হাল্লা রাজা ভালো, শুন্ডী দুষ্টু। ছবিতে এর পুরোটাই উল্টো। মূলত ছোটদের জন্য নির্মাণ করা হলেও গুপী গাইন বাঘা বাইন যেকোন বয়সের দর্শকদের জন্যই সমানভাবে উপভোগ্য।

ছবির অন্যতম আকর্ষণ সত্যজিৎ রচিত গানগুলি। ভূতের রাজা দিলো বর, মহারাজা তোমারে সেলাম, ও মন্ত্রী মশাই, এক যে ছিলো রাজা.. ছবির গানগুলো যেন একটা থেকে আরেকটা সেরা। গুপীর কণ্ঠে অধিকাংশ গানগুলোই গেয়েছেন অনুপ ঘোষাল আর অসাধারণ সঙ্গীতায়োজন সত্যজিৎ রায়ের নিজেরই।

ছবিটি প্রথমে প্রযোজনা করার কথা ছিলো আর ডি বনশলের। রাজনীতির ডামাডোলে সেই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। চেষ্টা করে ফিল্ম ফিন্যান্স কর্পোরেশনকেও রাজি করানো যায়নি। এরপর প্রযোজক হিসেবে এগিয়ে আসেন মুম্বাইয়ের বিখ্যাত অভিনেতা প্রযোজক রাজ কাপুর। তবে তার ছিলো একটাই শর্ত, ছবির মুখ্য দুই ভূমিকায় অর্থাৎ গুপী হবেন পৃথীরাজ কাপুর, বাঘা শশী কাপুর। নিজ পছন্দের বাইরে একচুলও আপস করতে নারাজ সত্যজিৎ রায় সেই প্রস্তাব তখনই বাতিল করে দেন। অবশেষে যোগাযোগ হয় নেপাল দত্তের সাথে। পূর্ণিমা পিকচারস থেকে ছবিটি অবশেষে প্রযোজনা করেন নেপাল দত্ত ও অসীম দত্ত।

ওদিকে ছবির চরিত্রায়ন নিয়েও অনেক গল্প রয়েছে। ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’ সিনেমার জন্য নাকি প্রথমে কিশোর কুমার গঙ্গোপাধ্যায়কেই ভেবেছিলেন মানিকবাবু (সত্যজিৎ রায়)। কিন্তু পরে পিছিয়ে আসেন তিনি কারণ ততদিনে নাকি কিশোর কুমারের ওজন অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল যা চরিত্রের জন্য মানানসই ছিলো না। শেষমেশ গুপী বাঘা চরিত্রে ছবিতে টিকে যান তপেন চট্টোপাধ্যায় ও রবি ঘোষ। শুন্ডী ও হাল্লার রাজা দ্বৈত চরিত্রে পর্দায় দেখা যায় জটায়ু খ্যাত সন্তোষ দত্তকে। মজার বিষয় হলো ছবিতে ভূতের রাজা চরিত্রের কণ্ঠদান করেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়।

১৯৬৮-এর জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছিলো ছবিটির শুটিং। বাশঝোড়ে বাঘের দৃশ্য, হাতে তালি দিয়ে হুন্ডী-ঝুন্ডী-শুন্ডীর যাওয়া দেখাতে গিয়ে সিমলা, জয়সলমীর চলে যাওয়া, হাল্লার যুদ্ধে আকাশ থেকে মিষ্টিবর্ষণ নিয়ে বিস্তারিত গল্প রয়েছে সত্যজিৎ রায়ের নিজ হাতে লেখা বই ‘একেই বলে শুটিং’ এ। জানুয়ারিতে শুরু ছরি কাজ শেষ হয় সেই বছরের ডিসেম্বরে। পরের বছর জানুয়ারিতে ছবিটি মুক্তির কথা থাকলেও সপ্তাহের পর সপ্তাহ পেছাতে থাকে ছবি মুক্তির তারিখ। কিন্তু ওদিকে বার্লিন এবং মেলবোর্ন চলচ্চিত্র উৎসব থেকে ছবিটি প্রদর্শনের অনুরোধ আসে। অনেক টালবাহানার পর ১৯৬৯ সালের ৮ মে পশ্চিমবঙ্গের মিনার, বিজলী, ছবিঘর, গ্লোবে মুক্তি পায় সত্যজিৎ রায়ের ‘গুপী গাইন বাঘা বাইন’। ছবিটি মেলবোর্ন, অ্যাডেলেইড, টোকিও, অকল্যান্ডের পুরস্কারসহ ভারতীয় অনেকগুলো চলচ্চিত্র পুরস্কার নিজের করে নেয়।

হিন্দি ভাষায় অ্যানিমেশনের মাধ্যমে রিমেক করা হয়েছিলো এ ছবিটির। ‘গুপী গাইয়াইয়া বাঘা বাজাইয়া’ নামে ওই চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন শিল্পা রানাড়ে। এছাড়াও মঞ্চে অসংখ্যবার মঞ্চায়িত হয়েছে এটি। বাংলাদেশে প্রাচ্যনাট স্কুল অব অ্যাক্টিং অ্যান্ড ডিজাইনের প্রযোজনায় মঞ্চায়িত হয়েছে গুপী গাইন বাঘা বাইন। 'হীরক রাজার দেশে'র একটি দৃশ্যহীরক রাজার দেশে (১৯৮০): দেখে হীরের চমক
গুপী গাইন বাঘা বাইন মুক্তি পাওয়ার ১১ বছর পর মুক্তি পায় এর সিক্যুয়াল ‘হীরক রাজার দেশে’। ছবির সবচেয়ে বিশেষ দিক মূল শিল্পীদের সমস্ত সংলাপ ছড়া কিংবা মন্ত্রের আকারে কথা বলা। কেবলমাত্র হীরক রাজ্যের একমাত্র শিক্ষক ছড়ার ভাষায় কিছু বলেনি। রাজ্যে একমাত্র তিনিই মুক্তচিন্তার অধিকারী, বাদবাকি সবাই নির্দিষ্ট চিন্তার পরিসরে সীমিত। ছবিতে ব্যবহৃত রূপকের আড়ালে এই চলচ্চিত্রে কিছু ধ্রুব সত্য চোখে আঙুল দিয়ে দেখানো হয়েছে।

প্রজানিপীড়ক এক শাসক হীরক রাজার অত্যাচারে জর্জরিত রাজ্যের প্রজারা। হীরক রাজ্যে হীরকের খনি ছিলো আর সে খনির সমস্তটাই চলে যেত রাজকোষে। ‘বাকি রাখা খাজনা মোটে ভালো কাজ না/ভর পেট নাও খাই, রাজ কর দেওয়া চাই!’ এমন সব মন্ত্র জারি করে প্রজাদের যত অভাবই থাকুক না কেন, খাজনা কোনভাবেই বরদাস্ত করা হতো না এই রাজ্যে। রাজ্যে রাজার প্রতি অনুরক্ততা আরও বাড়াতে হীরক রাজার বিজ্ঞানী গবেষক গবুচন্দ্র জ্ঞানোতীর্থ জ্ঞানরত্ন জ্ঞানবুদ্ধি জ্ঞানোচুড়োমণি (সন্তোষ দত্ত) উদ্ভাবন করেন যন্তরমন্তর যন্ত্র, যার মাধ্যমে রাজার বিরুদ্ধদের মগজ ধোলাই করা যেতো। হীরক রাজার সমস্ত মন্ত্রীরা ছিল তার ক্রীড়নক, হাতের পুতুল।

ওদিকে রাজ্যে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছিলেন বলে রাজ্যের একমাত্র শিক্ষক উদয়ন পণ্ডিত রাজার শত্রু হিসেবে পরিণত হয়েছিলেন। ‘লেখাপড়া করে যে, অনাহারে মরে সে/ জানার কোনো শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই!’ এমন অদ্ভুত সব মন্ত্র জারি করে হীরক রাজা জোরপূর্বক তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেন। উদয়ন পণ্ডিতকে আশ্রয় নিতে হয় পাহাড়ে।

হীরক রাজার হীরকজয়ন্তীর বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গান পরিবেশন করার আমন্ত্রণ পান গুপী ও বাঘা। কোনো কাজ ছাড়া টানা শুয়ে-বসে থেকে হাঁপিয়ে ওঠা গুপী বাঘা নিমেষেই সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন। পথিমধ্যে উদয়নের সঙ্গে পরিচয় হয় গুপী ও বাঘার। সেখানেই তারা হীরক রাজার নির্মমতার গল্প জানতে পারেন। ছবির শেষদিকে গুপী-বাঘার সাহায্যেই হীরক রাজাকে গদি থেকে নামানো হয় নানা নাটকীয়তার মাধ্যমে। ছবিতে গুপী আর বাঘা চরিত্রে যথারীতি ছিলেন তপেন চট্টোপাধ্যায় ও রবি ঘোষ। ছবির অন্যতম শক্তিশালী দিক হীরক রাজার চরিত্রে উৎপল দত্তের অনবদ্য অভিনয়। ছবিতে উদয়ন পণ্ডিতের ভূমিকায় ছিলেন সত্যজিৎ রায়ের অধিকাংশ ছবিগুলোর অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। আর শুন্ডীর রাজার সাথে সাথে গবেষকের চরিত্রটিও করেছিলেন সন্তোষ দত্ত।

মোরা দুজনায় রাজার জামাই, কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়, আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে, পায়ে পড়ি বাঘমামা, মোরা গুপী বাঘা দুজন ভায়রা ভাই.. এ ছবির গানগুলোও একটি আরেকটি থেকে অসাধারণ।

‘অনাহারে নাহি ক্ষেদ, বেশি খেলে বাড়ে মেদ। ’
‘বিদ্যা লাভে লোকসান, নাহি অর্থ নাহি মান। ’
‘যে করে খনিতে শ্রম, যেন তারে ডরে জম। ’
‘জানার কোনো শেষ নাই, জানার চেষ্টা বৃথা তাই। ’
ছবিতে ব্যবহৃত মগজ ধোলাইয়ের সূত্রগুলো যেন স্বৈরশাসনকে জোরপূর্বক প্রতিষ্ঠার প্রতিফলন হিসেবে কাজ করে।

গুপী বাঘা ফিরে এলো (১৯৯২): হুঁশিয়ার, হুঁশিয়ার, হুঁশিয়ার
গুপী-বাঘা সিরিজের সর্বশেষ ছবি ‘গুপী বাঘা ফিরে এলো’। ‘হীরক রাজার দেশে’ মুক্তি পাওয়ার ১২ বছর পর এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন সত্যজিৎ রায়ের পুত্র সন্দীপ রায়। এ ছবিতেও যথারীতি জুটি বেধেছিলেন তপেন চট্টোপাধ্যায় ও রবি ঘোষ।

রাজ্য শাসন আর বিলাসিতায় ক্লান্ত ও বিষণ্ণ গুপী-বাঘা নতুন অভিযানে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। নতুন অভিজ্ঞতা নিতে তারা হাজির হলো আনন্দগড় রাজ্যে। আনন্দগড়ে পৌঁছে তাদের গান আর বাদ্যযন্ত্রের ক্ষমতা দিয়ে যথারীতি রাজার মন জয় করল। বিচারকক্ষে তাদের দেখা হলো ব্রহ্মানন্দ আচার্য্য নামের এক ব্যক্তির সাথে। পরে আনন্দগড় দুর্গে ব্রহ্মানন্দের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকালে তারা জানতে পারেন লোকটির অলৌকিক কিছু ক্ষমতা রয়েছে তাদের মতো। ব্রহ্মানন্দ তাদের তিনটি মূল্যবান পাথর চুরি করার প্রস্তাব দেন, বিনিময়ে তাদের বয়স ২০ বছর কমিয়ে দেবেন বলে জানান।

প্রথমে প্রলুব্ধ হয়ে পাথরগুলো চুরি করলেও শেষমেশ তাদের স্বপ্নে ভূতের রাজার আগমন ঘটে আর ভূতের রাজার পরামর্শক্রমে তারা অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী হয়ে নিজ নিজ মালিকদের পাথর ফিরিয়ে দেন। ওদিকে ব্রহ্মানন্দ আচার্যের ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছিল যে, বিক্রম নামে ১২ বছরের ছেলের কাছেই তার মৃত্যু হবে। কোন রোগ-শোক-জরা তাকে আক্রান্ত করতে পারবে না। তার মৃত্যু প্রতিরোধ করতে আচার্য আনন্দগড়ের ১২ বছর বয়সী বিক্রম নামের সকল ছেলেদের অপহরণ করিয়ে তাদের সম্মোহিত ও দাস বানিয়ে রাখতেন। কিন্তু শেষমেশ দুষ্টের দমনে সচেষ্ট গুপী-বাঘা কানু নামে এক ছেলেকে খুঁজে বের করলো যার পূর্বের নাম ছিলো বিক্রম। এই বিক্রমই ব্রহ্মানন্দকে ছবির শেষে ধ্বংস করে, বিলুপ্ত হয় তার সংগ্রহে রাখা সমস্ত মূল্যবান পাথর।

আর আছে পোলাপান, একখান.. একখান! কচি তারা কথা ফোটেনাই। তপেন চট্টোপাধ্যায় আর রবি ঘোষকে ছাড়া গুপী-বাঘাকে যেন কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু সেই গানের কথাটি বলে দেয় গুপী বাঘার একটি করে বাচ্চা ছিলো, সেই বাচ্চাদের পর্দায় এনে সিরিজটির নতুন পর্ব নির্মাণ করলে কেমন হয়! এমনই এক চিন্তা করেছিলেন সন্দীপ রায়। তবে সেটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

ওদিকে ২০১৯-এ পূর্তি হচ্ছে গুপী বাঘা সিরিজের প্রথম ছবি মুক্তির ৫০ বছর। এ উপলক্ষে এই দুটি প্রিয় চরিত্রকে নতুন করে পর্দায় আনার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে নতুন দুটি ছবি দিয়ে। তবে উপেন্দ্রকিশোরের গল্প নয়, গুপী বাঘা নির্মিত হবে নতুন গল্পে। একটি নির্মাণ করার কথা আছে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় নিজের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে, আরেকটা ছবি তৈরি করছেন অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়। ছবির গল্পও লিখছেন তিনিই। তবে তারা দুজনই জানিয়েছে ছবি দুটো হতে যাচ্ছে ৫০ বছর পূর্তিতে তাঁদের একটা ট্রিবিউট। কারণ শত চেষ্টা করলেও সত্যজিৎ রায়ের ফ্রেমে তপেন-রবিবাবুকে তো আর ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়!

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০১৯
এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।