বাঙালির প্রেরণার উৎস ব্যক্তিদের একজন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বুধবার (৮ মে) রাজধানীর অনুষ্ঠান কেন্দ্রগুলোতে ছিল রবীন্দ্রনাথের গান, কবিতা ও নাটকের আয়োজন। শ্রোতা-দর্শক প্রাণভরে উপভোগ করেন সেসব।
এবার জন্মবার্ষিকী উদযাপনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘মানবিক বিশ্ব বিনির্মাণে রবীন্দ্রনাথ’। জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান হয়েছে রাজধানীতে। বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী, লেখক, গবেষক ও সংগঠক অধ্যাপক সন্জীদা খাতুন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল। রবীন্দ্র স্মারক বক্তা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভীষণ প্রাসঙ্গিক। আমাদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-অনুভূতিতে তিনি নিত্য বিরাজমান। তিনি লিখেছেন তিন হাজারের বেশি গান, এঁকেছেন দুই হাজারের বেশি চিত্রকর্ম। সৃষ্টিপ্রয়াসে তিনি নিজেই নিজের প্রতিদ্বন্দ্বী। রবীন্দ্রনাথ বাঙালি সংস্কৃতির চিরায়ত রূপকার।
প্রধান অতিথি বলেন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ফ্যাসিবাদের ক্রমাগত ঔদ্ধত্যে রবীন্দ্রচিত্তে তুলেছিল আলোড়ন। রবীন্দ্রনাথ সাম্প্রদায়িকতা, সংকীর্ণতা ও উগ্র জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার। তিনি ছিলেন মানবতার অগ্রপথিক। বাংলাদেশের নিসর্গ প্রকৃতি তাকে ভীষণভাবে আকৃষ্ট করেছিল। তার সৃষ্টিশীল জীবনের বড় একটি অংশ কেটেছে বাংলার মাটিতে।
সভাপতির বক্তব্যে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেন, বরেণ্য ব্যক্তিদের জীবনে কমবেশি অভিমান থাকে। মায়ের সান্নিধ্য তেমন পাননি বলে রবীন্দ্রনাথের একটি অভিমান ছিল। কেননা তখন ঠাকুরবাড়ির রেওয়াজ ছিল ধাত্রীদের মাধ্যমে সন্তানদের লালন-পালন।
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনার মূলে ছিল আনন্দের ধারণা, যে শিক্ষা-কাঠামোয় কঠিন শাসনের পরিবর্তে ছিল উদারতার আবহ। রবীন্দ্রনাথ দেশপ্রেমে স্নাত ছিলেন, তবে কোনোভাবেই সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ছিলেন না। তার মানবভাবনার মূলে ছিল অসাম্প্রদায়িক বিশ্বনাগরিকের সুদৃঢ় অবস্থান।
এদিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৮তম জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে বুধবার বিকেলে শিশু একাডেমি আয়োজন করে ‘রবীন্দ্রনাথের গল্পশুনি’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। কবি আসাদ চৌধুরী ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন রবীন্দ্রনাথের জীবনকর্ম, সাহিত্য নিয়ে আলোকপাত করেন। শিশু একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিশুদের পরিবেশনায় পরিবেশিত হয় রবীন্দ্র সংগীত। এছাড়াও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির নাট্যকলা বিভাগের প্রশিক্ষণার্থীদের পরিবেশনায় পরিবেশিত হয় নাটিকা ‘তোতা কাহিনী’।
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৮ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৯
এইচএমএস/এএ