ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

‘বিবর্ণ পাহাড়’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন 

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৫ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৯
‘বিবর্ণ পাহাড়’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন 

ঢাকা: মঙ্গল কুমার চাকমার ‘বিবর্ণ পাহাড়’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে। শনিবার (১১ মে) দুপুর পৌনে ১টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডির ওমেন্স ভলেন্টিয়ারি অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। 

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মঙ্গল কুমার চাকমা পাহাড়ের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন। কিভাবে নারীদের নির্যাতন ও নারী আন্দোলনের অগ্রদূত কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করা হয়েছিল।

মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে পাহাড়ে। পার্বত্য চট্টগ্রাম যদি বিবর্ণ হয়, এটা কারো জন্য ভালো নয়। এটা রাষ্ট্রকে বুঝতে হবে। রাষ্ট্র দিন দিন হৃদয়হীন হয়ে যাচ্ছে।  

অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, পাহাড়ের কান্না আমি এখানে বসে শুনতে পাচ্ছি। মঙ্গল কুমার চাকমার বইয়ে কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে, এটা দুঃসাহসিক। বইটি যাতে পাঠক সমাজে জীবিত থাকে, সেজন্য তথ্য সূত্রের ব্যাপারে আরো সচেতন হতে হবে।  

তিনি বলেন, সংখ্যালঘু অনেকে যেমন এদেশ ছেড়ে যাচ্ছেন, তেমনি পাহাড়ের অনেকেও নিজ মাতৃভূমি ছেড়ে যাচ্ছেন। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। রাষ্ট্রের দ্বিমুখী আচরণ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটা পীড়াদায়ক। যদি কোথাও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জোরপূর্বক মানুষকে তুলে নিয়ে যায়, তখন বাংলাদেশ নামের স্বার্থকতা থাকে না। এটা রাজনীতিবিদদের বুঝতে হবে।  

মানবাধিকার কমিশনের সাবেক এ চেয়ারম্যান বলেন, একটা জীবন কেটে গেলো, এখনো পাহাড়ে কান্না শুনতে হয়। পাহাড়ে মূল সমস্যা ভূমি মালিকানা। তাই এটা সমাধান করতে হবে। যেকোনো বৈষম্য মানবাধিকারের লংঘন। সবাই এদেশের নাগরিক, এটাকে ভেবে এগিয়ে যেতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, পাহাড়িদের জীবন বিবর্ণ করে তুলেছি আমরা। রাষ্ট্রকে দায় দেওয়ার আগেই মঙ্গল কুমার চাকমা তার বইয়ে উত্তর দিয়েছেন। পাহাড়ে নির্যাতন, বঞ্চনা মোঘল আমল থেকেই শুরু হয়। অতএব বর্তমান বাংলাদেশেও পাহাড়ে নির্যাতন হচ্ছে।  

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি করেছিলেন। এ ধরনের চুক্তি বিশ্বে আর নেই। এজন্য প্রধানমন্ত্রী প্রশংসার দাবি রাখেন। পার্বত্য অঞ্চলে বৈষম্যের জন্য রাষ্ট্রের দায় যেমন রয়েছে, তেমনি আমরাও অনেকে দায়ী।  

কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, এতো সবুজ পাহাড় বিবর্ণ হওয়ার কথা নয়। সেখানকার মানুষও বিবর্ণ। এ দায় রাষ্ট্রের। ১৯৯৭ সালে শান্তি চুক্তি করেছিলেন রাষ্ট্রের যারা তারা এ চুক্তি মানেননি। পাহাড়ে শান্তি আসেনি, এ দায় রাষ্ট্রের। মঙ্গল কুমার চাকমার লেখায় যেমন আবেগ আছে, তেমনি ক্ষোভও রয়েছে। তিনি তার বইয়ে বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন।  

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সঞ্জীব দ্রংয়ের সভাপতিত্বে ও সদস্য হরেন্দ্র নাথ সিংয়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি রাখি দাশ পুরকায়স্থ, প্রকাশক নীলু কবির প্রমুখ।  

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সভাপতি সঞ্জীব দ্রং বলেন, রাষ্ট্র দিন দিন হৃদয়হীন হয়ে যাচ্ছে। তারা খেটে খাওয়া পাহাড়ি-বাঙালিদের কান্না শুনতে পায় না। অন্তর দিয়ে মানুষ শ্রদ্ধা করে কি-না সেটা দেখতে হবে। খেটে খাওয়া পাহাড়ি ও বাঙালিদের মর্যাদা রক্ষা করতে পারে না, মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, তখন রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান হারিয়ে ফেলে নাগরিকরা।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪০১ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৯
টিএম/আরবি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।