শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে নিয়ে এভাবেই বলছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ড্রয়িং অ্যান্ড প্রিন্টিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শিল্পী দুলাল চন্দ্র গাইন।
তিনি বলেন, শিল্পের টানেই একান্ত নিজ প্রচেষ্টায় কলকাতায় গিয়ে সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন শিল্পাচার্য।
শনিবার (১১ মে) বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আয়োজিত ‘শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন: শিল্পের শিক্ষাগুরু’ শীর্ষক সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠের সময় তিনি এসব কথা বলেন।
শিল্পী দুলাল চন্দ্র গাইন বলেন, খুব ছোটবেলা থেকেই শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। তার বিখ্যাত চিত্রকর্মের মধ্যে রয়েছে দুর্ভিক্ষ-চিত্রমালা, সংগ্রাম, সাঁওতাল রমণী, কাক, বিদ্রোহী ইত্যাদি। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে গ্রামবাংলার উৎসব নিয়ে আঁকেন তার বিখ্যাত ৬৫ ফুট দীর্ঘ ছবি ‘নবান্ন’।
‘তিনি চিত্রাঙ্কনের চেয়ে চিত্রশিক্ষা প্রসারের ওপর অনেক বেশি সময় ব্যয় করেছেন। চিত্রশিল্প বিষয়ক শিক্ষার প্রসারে আমৃত্যু প্রচেষ্টার জন্য জনসাধারণ্যে তিনি শিল্পাচার্য অভিধা লাভ করেন। অনুমান করা হয় তার চিত্রকর্মের সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি। ’
সেমিনারে আলোচনা করেন বিশিষ্ট চারুশিল্পী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষক ড. ফরিদা জামান, বিশিষ্ট শিল্পসমালোচক অধ্যাপক মঈনুদ্দীন খালিদ এবং শিল্পাচার্যের ছেলে মইনুল আবেদিন।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি শিল্পী হাশেম খান। এর আগে অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. রিয়াজ আহমেদ।
আলোচনায় অধ্যাপক মঈনুদ্দীন খালিদ বলেন, জয়নুল আবেদিনকে নিয়ে আরো গবেষণা প্রয়োজন। তিনি তথাকথিত জীবনের কাছে হার মানেননি। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জনজীবনের প্রতি ছিল তার আকুল আবেদন। তিনি ছবি আঁকার আগে ছবির প্রেক্ষাপট ও ছবির মর্মকথা বুঝতে চেষ্টা করতেন, তারপর ছবি আঁকতেন। তিনি বলতেন, নদীর ছবি আঁকার পূর্বে পানির দোলন আগে বুঝতে হবে। জয়নুল আবেদিনের চিন্তা ভাবনা, কর্ম আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আরও ঐশ্বর্যমণ্ডিত করেছে।
অধ্যাপক ড. ফরিদা জামান বলেন, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের শিল্পকর্ম নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীল কাজে নিরন্তর অনুপ্রেরণা যোগাবে। আমাদের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের আদর্শ হিসেবে তিনি থাকবেন। তিনি তার মতাদর্শ, চিন্তা শক্তি, ভাবনার ব্যাপ্তিটা তার সৃষ্ট কর্মের মাধ্যে তুলে ধরতেন।
শিল্পীপুত্র মইনুল আবেদিন বলেন, ব্যক্তি হিসেবে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন অনেক কর্মঠ একজন মানুষ ছিলেন। সারাক্ষণ কাজের ভেতরে ডুবে থাকতেন। শিল্পচর্চার জন্য জীবনের পুরটা সময় ব্যয় করেছেন তিনি। আর বাবাকে বলা হয় ‘মাস্টার অব ড্রয়িং’।
সভাপতির বক্তব্যে শিল্পী হাশেম খান বলেন, আমার জীবন ধন্য পিতৃতুল্য শিক্ষক জয়নুল আবেদিনের সান্নিধ্য পেয়ে। শিক্ষার্থীরা ছিল তার ছেলের মতো। তার কথায় ছিল প্রেরণা। আমরা অনুপ্রাণিত হতাম শিল্পচর্চায়। জাতীয় জাদুঘরে তার অসংখ্য চিত্রকর্ম আছে।
‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় ও সুস্থ মননসম্পন্ন মানুষ গড়ে তুলতে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জীবনকর্মসহ দেশের অতীত ঐতিহ্য, চিত্রশিল্প গুরুত্ব বহন করে,’ বলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৯
এইচএমএস/এমএ