জানা যায়, ২০১১ সালে সর্বশেষ কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আর কোনো পরিচালনা কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। এরমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির সব অনুদান বন্ধ হয়ে আসে।
লাইব্রেরিটি পরিচালনার জন্য একজন গ্রন্থাগারিক, একজন সহকারী গ্রন্থাগারিক, একজন পিয়ন ও একজন ঝাড়ুদার কর্মরত থাকলেও তাদের দীর্ঘদিনের বেতন এক লাখ ৩৩ হাজার টাকা অপরিশোধিত রয়েছে। যার ফলে তারা সবাই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। একইসঙ্গে আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম মুহিবও পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
এছাড়া লাইব্রেরির বিদ্যুৎ বিল বাকি পড়েছে দুই লাখ ২৪ হাজার টাকা। আর্থিক অবস্থা নাজুক হওয়ায় সরকারি তিনটি এসি না লাগিয়ে ফেলে রাখায় তা নষ্ট হয়ে গেছে। পত্রিকার বিল বাকি আছে ২৫ হাজার টাকা, যা পরিশোধ করতে না পেরে ও সংশ্লিষ্টরা পদত্যাগ করায় লাইব্রেরিটি বন্ধ রয়েছে। তবে অভিযোগ আছে, লাইব্রেরির নিজস্ব ফান্ডে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ টাকা থাকলেও তা উত্তোলনের জন্য কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না পদাধিকার বলে সভাপতি জেলা প্রশাসক।
পাবলিক লাইব্রেরি সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরিতে ১৬ ধরনের প্রায় ১১ হাজার বই আছে। প্রতি বছর সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে ৩০ হাজার টাকা অনুদান আসে। তাতে থাকে বই কেনা বাবদ ১৫ হাজার টাকা এবং উন্নয়নের জন্য ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ২৫-৫০ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে থাকে। জেলা পরিষদ দেয় ১০ হাজার টাকা। এছাড়া আজীবন সদস্যদের ফি হচ্ছে আয়ের একমাত্র উৎস। কিন্তু এ আয়ে লাইব্রেরিটি পরিচালনা করা কঠিন। কমিটি সক্রিয় না থাকায় সেসব আয়ও বন্ধ রয়েছে।
অন্যদিকে লাইব্রেরি বন্ধ হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। এরমধ্যে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ ও লাইব্রেরির সব সমস্যার সমাধান করে তা চালুর দাবি তুলছেন সচেতনমহল।
স্থানীয় সংস্কৃতি কর্মী কল্লোল দাশ বনি বাংলানিউজকে বলেন, মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরি আমাদের ঐতিহ্য। এ জেলা শিল্প-সাহিত্যের প্রাণকেন্দ্র। সেটি দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে, কিন্তু কেউ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পাবলিক লাইব্রেরির মতো প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে সবার উদাসীনতার কারণ জানি না। তবে যেকোনো মূল্যে লাইব্রেরি চালু দেখতে চাই।
লাইব্রেরির গ্রন্থাগারিক শোভাময় রায় সজল বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় দুই বছর থেকে আমিসহ স্টাফদের সব বেতন-ভাতা বন্ধ। পরিচালনা কমিটির কার্যক্রম নেই। বেতন-ভাতা না পাওয়ায় কর্মচারীও নাই। সবাই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন আমার নিজ খরচে লাইব্রেরি চালু রেখেছি, এখন আর তা সম্ভব হচ্ছে না। এপ্রিল মাস থেকে লাইব্রেরি পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। লাইব্রেরি নিয়মিত চালাতে হলে আয়ের উৎস, কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো প্রয়োজন। পাঠক বাড়াতে নতুন নতুন বইও বাড়াতে হবে।
মৌলভীবাজার পাবলিক লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম মুহিব বাংলানিউজকে বলেন, লাইব্রেরি পরিচালনা কমিটির কোনো নির্বাচন হচ্ছে না। কারও সহযোগিতা না থাকায় আমার পক্ষে যথাযথ দায়িত্ব পালনও সম্ভব হচ্ছে না। লাইব্রেরির একটা ফান্ড আছে সেটা ডিসির অনুমোদন ছাড়া ভাঙা যাচ্ছে না। ফলে আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি।
এ ব্যাপারে নবনিযুক্ত জেলা প্রশাসক (ডিসি) বেগম নাজিয়া শিরিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও পারা যায়নি।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ০৪, ২০১৯
জিপি