শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে এ আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন প্রদর্শনীর শিল্পী ইলোরা পারভীন এবং সভাপতিত্ব করেন হাসুমণি পাঠশালার সভাপতি মারুফা আক্তার পপি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে নিজের প্রদর্শনী সম্পর্কে বলতে গিয়ে ইলোরা পারভিন বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমার হৃদয়ে এখনো গেঁথে আছে।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমাদের দেশ থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাওয়া শিল্পকর্মগুলোকে নতুন করে ফুটিয়ে তোলার একটি প্রচেষ্টাতেই যেন এ প্রদর্শনী। একটি সময় এই শিল্প বা সুই-সুতোর মাধ্যমে বাঙালি নারীরা তাদের স্বপ্ন দেখতো, স্বপ্ন বুনতো। সেই জায়গা থেকেই ইলোরা পারভীন এই শিল্পকে প্রদর্শনীর মাত্রায় তুলে ধরেছেন অনন্য মহিমায়।
তিনি বলেন, পঞ্চাশের দশকে চার কোটি ৭০ লাখ জনসংখ্যা থাকলেও আমাদের দেশে খাদ্যের ঘাটতি ছিল। অথচ এখন যখন জনসংখ্যা প্রায় ১৮ কোটি। কৃষি জমির সংখ্যা ২৫ শতাংশ কমে গেছে, তবুও আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। গত ১০ বছরে পৃথিবীর মধ্যে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অন্যতম। এমনকি পাকিস্তানও এখন আমাদের দেশের মতো হওয়ার জন্য আক্ষেপ করে।
‘আমাদের দেশ এখন নানাভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আমাদের স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে, এদেশে এখন শুধুমাত্র কবিতাতেই কুঁড়েঘর পাওয়া যায়, বাস্তবে তা খুঁজে পাওয়া যায় না। একইসঙ্গে উন্নয়ন হয়েছে গ্রামের। বদলে গেছে দেশ। ৪০ শতাংশ থেকে দারিদ্র নেমে এসেছে ২০ শতাংশে। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আগামী পাঁচ থেকে সাত বছরের মধ্যে দারিদ্র্যকে পুরো জয় করে তুলতে পারবো। ’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, ঘর-সংসার সামলানোর পাশাপাশি নিজের স্বপ্নগুলোকে নকশিকাঁথায় সুচিশিল্পের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন গ্রামের নারীরা। অবশ্য এখন সেই বিষয়টি খুব বেশি চোখে পড়ে না। কিন্তু শিল্পী ইলোরা পারভীন যেভাবে রং-তুলির পরিবর্তে সুই-সুতোয় প্রতিটি মুখ স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন, তাতে সত্যিই প্রত্যেকটি মানুষই মূর্ত হয়ে উঠেছে।
‘একইসঙ্গে তার ছবিগুলোতে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৫ আগস্ট। আর এই সবকিছু মিলিয়ে যেটা বলা যায় তা হচ্ছে আত্মার সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলে এ ধরনের চিত্রকর্ম করা সম্ভব নয়। আর এখানেই ইলোরার কৃতিত্ব,’ যোগ করেন তিনি।
সমাপনী আয়োজনে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা বিভাগের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী অধ্যাপক জালাল আহমেদ, বিশিষ্ট শিল্প সমালোচক ও লেখক মইনুদ্দিন খালেক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান জুনায়েদ হালিম প্রমুখ।
প্রদর্শনীর শিল্পমান বিবেচনা করে তারা বলেন, রং দিয়ে পোর্ট্রেট আঁকতেই আমাদের শিল্পীদের হিমশিম খেতে হয়। সেখানে সুই-সুতো দিয়ে কাজটা করা খুবই কঠিন। অথচ এই কাজটি দারুণভাবে করেছেন শিল্পী ইলোরা পারভীন। এটি এক ধরনের লোকজ শিল্প এবং এর ধর্ম মানুষকে জাগ্রত করা। এটা প্রতিবার নতুন করে উপস্থাপন হয় আমাদের মাঝে।
আর তা যখন নারীর হাতে থাকে তখন তা সত্যিই আমাদেরকে জাগ্রত করে। কেননা নারীর মনের শক্তি অন্যরকম। এই ধরনের সুই-সুতো শিল্পের সঙ্গে আমাদের দেশের হাজারো নারীর নাড়ির সম্পর্ক। এসব পটচিত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন কাহিনি উঠে আসে। তেমনি এই শিল্পী তুলে ধরেছেন ১৫ আগষ্ট, বঙ্গবন্ধুর পরিবার এবং মুক্তিযুদ্ধকে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে পক্ষকালব্যাপী শুরু হয় শিল্পী ইলোরা পারভীনের এই সুচিশিল্পের প্রদর্শনী। আর এ প্রদর্শনীর আয়োজন করে হাসুমণির পাঠশালা। সমাপনী আয়োজনে শিল্পীর হাতে হাসুমনির পাঠশালার পক্ষ থেকে ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন অতিথিরা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৯
এইচএমএস/এসএ