ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

‘ঠিকানা’ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের অনন্য দলিল

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ৮, ২০১৯
‘ঠিকানা’ মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের অনন্য দলিল ঠিকানা নাটকের একটি দৃশ্য। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন সময়ে উৎপল দত্ত রচনা করেছেন ‘ঠিকানা’ নাটকটি। আর যুদ্ধকালীন সময়ে ২ আগস্ট কলকাতায় হয় নাটকটির মঞ্চায়ন। এ নাটকটি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের একটি অনন্য দলিল।

আরেক কথায় বলা যায়, এটি শুধু নাটক নয়, বাঙালির আত্মত্যাগের একটি মূল্যবান উপাখ্যানও। আর সে আখ্যান অবলম্বনেই ঢাকার মঞ্চে নাটকটি উপস্থাপন করলো লোক নাট্যদল (বনানী)।

সোমবার (৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার পরীক্ষণ থিয়েটার হলে মঞ্চায়ন হয় নাটকটি। এর নির্দেশনা দিয়েছেন লোক নাট্যদলের (বনানী) জ্যেষ্ঠ সদস্য প্রণবানন্দ চক্রবর্তী। তিনি ভারতের পুনে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নাট্যশাস্ত্রে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।

দুই দিনের ঘটনা নিয়ে তৈরি নাটকটিতে দেখা যায়, একটি ছোট শহর তারাগঞ্জে একটি ছোট রেস্টুরেন্ট চালান একসময়ের কারখানা শ্রমিক বৃদ্ধা রশিদা খাতুন। তাকে সবাই ‘নানি’ বলে ডাকে। রশিদা খাতুনের ‘সুতৃপ্তি রেস্টুরেন্ট’-এ নিয়মিত খেতে আসে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। তবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হামলা আর নিয়মিত টহলের কারণে সেখানে আগমন কমে যায় লোকজনের।

নাটকের একটি দৃশ্য।  ছবি: বাংলানিউজ

এদিকে রশিদার সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে গেরিলাদের। তাই তিনি রেস্টুরেন্ট খোলা রেখে বিভিন্ন তথ্য দেন মুক্তিযোদ্ধাদের।

একটি তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জন্য গোলাবারুদ ভর্তি একটি ট্রেন এসেছে তারাগঞ্জ স্টেশনে। তারাগঞ্জের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধারা এ ট্রেনটি উড়িয়ে দিতে চায় বোমা মেরে। গল্পের নাটকীয়তা শুরু হয় এখান থেকেই।

নাটকের শেষ দিনটি ২৫ এপ্রিল ১৯৭১। এদিন ভোরে পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। সবশেষে যে মুহূর্তে হত্যা করে রশিদা খাতুনকে, ঠিক সেই মুহূর্তে স্টেশনে গোলাবারুদ ভর্তি ট্রেনটিতে বিস্ফোরণ ঘটায় গেরিলারা। বিস্ফোরণের শব্দে চারদিক কেঁপে ওঠে, কেঁপে ওঠে পাকিস্তানি সেনাদের অন্তরাত্মা। গুলি খেয়ে মৃত্যুর আগে বিস্ফোরণের শব্দ শুনে যেতে পেরে পরম তৃপ্তিতে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে রশিদা খাতুনের মুখ। ‘জয় বাংলা’ বলে শরীরে লুকিয়ে রাখা বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকা পতাকাটি তুলে ধরেন তিনি।

শেষ চিত্রে শুধু রাশিদা খাতুন নয়, তৃপ্তি ফোটে নাটকের দর্শকদের মুখেও। নাটক শেষে দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, নাটকের দৃশ্য দেখে মনে হয়েছে দৃশ্যগুলো মঞ্চে প্রদর্শন এবং পরিবর্তন করতে নির্দেশক যথেষ্ট অনুশীলন ও কৌশল অবলম্বন করেছেন। আর নাটকটি এমন, এ থেকে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়টাকে বেশ ভালোভাবে বোঝা যায়। আর নাটকের শেষে মুক্তিযোদ্ধাদের জয় দেখে একটা আলাদা ভালোলাগা কাজ করে নিজেদের ভেতর।

নাটক নিয়ে নির্দেশক প্রণবানন্দ চক্রবর্তী বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে নাটকটি মঞ্চে আনা। সেটের বাহুল্য না দেখিয়েও নাটকটি বেশ সহজেই দর্শকদের সামনে তুলে ধরা যায়। সাধারণ দর্শকদেরও বুঝতে অসুবিধা হবে না। তাই তাদের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়টাকে জানানোর একটি প্রয়াস এটি।

নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন সামসাদ বেগম, সোহেল মাসুদ, মিনহাজুল হুদা দীপ, আরিফ আহম্মেদ, ইউজিন গোমেজ, তনয় মজুমদার, আবদুল্লাহ আল হারুন, ড.প্রণবানন্দ চক্রবর্ত্তী, সুধাংশু নাথ, সাদেক ইসলাম, মনিকা বিশ্বাস, অন্দ্রিলা অদিতি দাস, জসিমউদ্দিন খান, মোজাক্কির আলম রাফান প্রমুখ।

বাংলাদেশ সময়: ০৩০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৮, ২০১৯
এইচএমএস/এইচএডি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।