বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আন্তর্জাতিক সাহিত্য উৎসব ঢাকা লিট ফেস্ট-২০১৯-এ ‘কবিতা আড্ডা: এপার ওপার’ শীর্ষক এ সেশন অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন- বাংলাদেশের কবি রুবি রহমান, কামাল চৌধুরী ও পশ্চিমবঙ্গের মৃদুল দাশগুপ্ত, জহর সেন মজুমদার ও গৌতম গুহ রায়।
আলোচনার শুরুতেই কবিতা ও তার রকমফের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কামাল চৌধুরী বলেন, কবিতার দুটি ধারা- একটি একটি এলিটিস্ট, আরকেটি পিপলস। এলিটিস্ট কবিতা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায়, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও উচ্চ শ্রেণির কিছু পাঠক পড়ে থাকে। আর পিপলস ধারার কবিতা প্রায় সবার জন্যই।
পরে কামাল চৌধুরীর দুই ধারার কবিতার সঙ্গে আরও একটি ধারা যোগ করে কবি জহর সেন মজুমদার বলেন, এসব কবিতার বাইরে আরও এক ধরনের কবিতা হয়। আর তা হলো নীরব ধারার কবিতা। এ কবিরা নীরবে, নিভৃতে কবিতা লিখে চলেন। জীবনানন্দ দাশও এ ধারার কবি। কিন্তু তার কবিতা নিজ গুণেই এলিট বা পিপল সব শ্রেণীর কাছেই জনপ্রিয়। কবিতার দুর্দান্ত উপকরণের জন্যই তিনি মূল ধারায় উঠে এসেছেন। তাই কবিতাকে একটি নির্দিষ্ট আঙ্গিকে ভাবা ঠিক হবে না বলেই আমার মনে হয়।
কবি রুবি রহমান বলেন, কবিরা কখনোই একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে এলিট শ্রেণীর কবিতা বা পাঠ্যপুস্তকে ছাপার জন্য কবিতা লেখেন না। তারা তো লেখার সময় পাঠ্যপুস্তকের কথা মাথায় রেখে ভাষা প্রয়োগ করেন না, বরং নিজের খেয়ালে লিখে যান।
কবিতার নিয়ে বলতে গিয়ে কবি মৃদুল দাশগুপ্ত বলেন, কবিতা বর্তমান সময়ে পাঁচতলাযর মতো উঁচু কোথাও আটকে নেই, বরং তা আকাশ ছুঁয়েছে। বাংলা কবিতা স্রোতস্বিনী। কবি লিখতে লিখতে নিজেই নিজের পথ খুঁজে নেন। নিভৃত চেতনা ছাড়া কবিতা হয় না। আয়োজন করে কেউ কখনো কবিতা লিখতে পারেনি। ৩২ কোটি মানুষের ভাষা উপাদান থেকে কবিতা লেখার অনেক কিছু আছে। আমি এটা বিশ্বাস করি না যে কবি বিপ্লব ঘটিয়ে দেবেন, তবে তিনি বিপ্লবের বংশীবাদক। সেই বাঁশি বাজিয়ে কবি তার কবিতা দিয়ে মানুষ তৈরি করে দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমাদের দিয়েছেন পরিশীলন, জীবনানন্দ দাশ দিয়েছেন ভাবনা।
এরপর দুই বাংলার কাঁটাতারের বেড়াকে বাংলা সাহিত্যের পাঠকদের জন্য একটি ‘বেড়া’ উল্লেখ করে কবি গৌতম গুহ রায় বলেন, বাংলা ভাষার জন্য লড়াই করেছে দুই বাংলাই। কাঁটাতার, আমলাতন্ত্র, খণ্ডীকরণসহ বিভিন্ন বিষয় দুই বাংলার পাঠককে বাংলা সাহিত্যের মূল ধারা থেকে আলাদা করেছে। ফলে অনেকেই দুই বাংলার সাহিত্য সম্পর্কে সেভাবে জানে না। এমনকি মফস্বলেও অনেক ভালো ভালো লিটলম্যাগ হচ্ছে, কিন্তু অনেকেই তা জানতে পারছেন না।
এ প্রসঙ্গ ধরেই কামাল চৌধুরী বলেন, ভালো কবিতা লিখলে কাঁটাতার দিয়ে বেঁধে রাখা যায় না। পৃথিবীটা বরং চলে অর্থনৈতিক সূত্রের হিসেবে। আর তাই উন্নত দেশগুলোর লেখা আমাদের কাছে চলে আসে, কিন্তু আমাদের লেখাটা খুব সহজে তাদের কাছে পৌঁছায় না। আমি মনে করি, কবিতারও এপার-ওপার হয়। কেননা ইংরেজি ভাষায় একটি লেখা লিখলে তা মুহূর্তেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে যায়, কিন্তু বাংলায় লিখলে সেটা হয় না।
এরপর প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশে ভারতীয় লেখকদের লেখা প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলেও, কলকাতায় বাংলাদেশের লেখকদের লেখা সেভাবে পাওয়া যায় না কেন, দর্শকদের পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্যিকদের কাছে এ প্রশ্ন রাখা হলে তারা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক বই পশ্চিমবঙ্গে পাওয়া যাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশ বইমেলা হচ্ছে। বাংলাদেশের লেখকদের ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের পাঠকদের চাহিদা আছে। তবে প্রকাশকরা কীভাবে সেখানে নিজেদের বই পৌঁছাবে, সেটা তাদেরই ব্যবস্থা করতে হবে।
এ প্রসঙ্গে কটাক্ষ করে হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, আমরা জানি জলের ধারা নিচের দিকে আসে। সেদিক থেকেই হয়তো বাংলাদেশে ভারতীয়দের লেখা এতোটা আসে। কবিতায় রাজধানী ও মফস্বল ব্যাপারটা বড় বেশি বিদ্যমান। কলকাতা যদি বাংলা সাহিত্যের রাজধানী হয়, বাংলাদেশ যেন মফস্বল। তবে খুব শিগগিরই এ বিভেদ দূর হবে বলে আশাবাদ রাখেন তিনি।
আরও পড়ুন::
>>> পর্দা উঠলো ঢাকা লিট ফেস্ট’র
>>> জেমকন সাহিত্য পুরস্কার পেলেন রফিকুজ্জামান রণি-অভিষেক সরকার
>>> লিট ফেস্টে পাঁচ লেখিকার প্রাণবন্ত আড্ডা
>>> ঢাকা লিট ফেস্ট: প্রাঙ্গণজুড়ে নানা আয়োজন
বাংলাদেশ সময়: ১৮১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৯
এইচএমএস/এইচজে