বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) এমন সন্ধ্যায় ঢাকা লিট ফেস্টে অনন্য আয়োজন ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’। এই আয়োজন ঘিরে সাহিত্য উৎসব মঞ্চে জমে এক দারুণ আড্ডা।
আয়োজনে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন সময়ের নন্দিত কবিরা। এরা হলেন- কবি কাজী রোজী, কবি আমিনুর রহমান সুলতান, কবি অনিকেত শামীম, কবি ফারহানা রহমান, কবি মেঘ অদিতি, কবি নাজমুন নেছা, কবি পাবলো শাহি, কবি সৈকত হাবিব, কবি সেলিনা শেলী এবং কবি ফারুক সুমন। ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা। এটি লেখার পর কবিগুরু নিজেই বলেছিলেন, ‘একটি অপূর্ব অদ্ভুত হৃদয়স্ফূর্তির দিনে ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’ লিখিয়াছিলাম। ’ ঠিক তেমনি দর্শক হৃদয়ে হৃদয়স্ফূর্তি জাগিয়ে এ আয়োজনের সঞ্চালনা করেন কবি জুয়েল মাজহার।
তিনি বলেন, পৃথিবীর প্রাণ ও বস্তু যত রকম হতে পারে, ঠিক তত রকমই হতে পারে কবিতা। কেননা কবিতাই প্রাণকে স্পর্শ করে সবার আগে।
এরপর তিনি কবিতা পাঠের জন্য মঞ্চে আহ্বান জানান কবি কাজী রোজীকে। তিনি এসে পাঠ করেন বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ’।
এরপর একে একে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি আমিনুর রহমান সুলতান (সাহসী ও ঘোড়া), কবি অনিকেত শামীম (অপ্রান্তেয় সংলাপ), কবি ফারহানা রহমান (দস্তখত), কবি মেঘ অদিতি (বায়োবীয় কথামালা), কবি নাজমুন নেছা (বনবীথি তলে), কবি পাবলো শাহি (যে ঘরে সোনালী বৃষ্টি), কবি সৈকত হাবিব (আমার সন্তানের প্রতি), কবি সেলিনা শেলী (বেবি বুমারস) এবং কবি ফারুক সুমন (বিভীষণ বড়ই ভীষণ)।
আয়োজনের শেষ মুহূর্তে হঠাৎ করে মঞ্চে চেয়ারে বসা থেকে একটু উঠে দাঁড়ান কবি মেঘ অদিতি। তারপর বলেন, আমরা সবাই কবিতা পড়লাম। তবে এতক্ষণ যিনি অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করলেন, শুনতে চাই সেই কবি জুয়েল মাজহারের কবিতাও। কবি হাসলেন, অনুরোধকে ভালোবাসা জানিয়ে হাতে তুলেন নিলেন ২০১৯ সালে প্রকাশিত তার ‘নির্বাচিত কবিতা’ গ্রন্থটি। তারপর পরম ভালোবাসায় এক-একটি শব্দ উচ্চারণ করলেন ‘ক্রমহননের পথ’ ধরে।
অপাপবিদ্ধের মতো জোড়া জোড়া চোখ দেখে ভয়;
এই বুঝি রিরংসা নামের কোনো বিস্ফোরণ ঘটে।
তবু নিথরতা;
দূরে ট্রেন চলমান, ঝাউবনে স্রোতকল্প দোলা।
এসো, তোমাকে উদ্ভিন্ন করি রাতপরিদের নামে
ইন্দ্রিয়ের ক্ষমজলে, তরল ক্ষীরের মতো
গলমান নির্বেদের স্রোতে।
সহস্র তিরের শব্দ, শত হুল তোমার পেছনে;
তুমি একা। তাতে ভয়!
ভয় বুঝি সংবেদনের কোনো ডানা?
তাহলে উড্ডীন হও, উড়ে চলো বনের ভেতর।
ক্রমহননের পথ পাড়ি দিয়ে দ্যাখো:
ঘাসে ঘাসে সিঁড়ি চলমান।
পর্বতের ধাপে ধাপে মনুষ্যখুলির ছায়া প্ররোচনা আকারে সাজানো;
আর দ্যাখো, জলের আঙুলে আঁকা চিত্রময়
শুয়ে আছো তুমি।
তোমাকে ঘিরেই জাগে শত শত দেয়াল, প্রাকার;
ক্রমহননের পথ আমাকে বেষ্টন ক’রে
ঝুঁকে আছে তোমার উপর!এর আগে, সকালে রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে লিট ফেস্টের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বরাবরের মতো এবারের আয়োজনেও ১৮টি দেশের বিশ্বনন্দিত শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীরা প্রায় শতাধিক অধিবেশনে অংশ নেবেন।
২০১১ সালে ‘হে ফেস্টিভ্যাল’ নামে যাত্রা শুরু হয় এ আয়োজনের। পরে ২০১৫ সাল থেকে এটি ঢাকা লিট ফেস্ট নামে আত্মপ্রকাশ করে। বিগত আট বছরে এ উৎসবে যোগ দিয়েছেন নোবেল, ম্যান বুকার, পুলিৎজার পুরস্কারবিজয়ী সাহিত্যিকরা।
এবারের উৎসবে বিদেশি অতিথিদের তালিকায় রয়েছেন- ম্যানবুকার পুরস্কার মনোনয়নপ্রাপ্ত সাহিত্যিক মনিকা আলী, ‘চৌরঙ্গী’খ্যাত পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত সাহিত্যিক শংকর, পুলিৎজার পুরস্কার বিজয়ী লেখক জেফরি গেটলম্যান, ডিএসসি অ্যাওয়ার্ড ফর সাউথ এশিয়ান লিটারেচার পুরস্কার বিজয়ী সাহিত্যিক এইচ এম নাকভি, ইতিহাসভিত্তিক লেখক উইলিয়াম ডালরিম্পল, ভারতীয় রাজনীতিবিদ ও লেখক শশী থারুর, কবি তিশানি দোশি, সাহিত্যিক স্বপ্নময় চক্রবর্তী, কবি ও সাংবাদিক মৃদুল দাশগুপ্ত, ভারতীয় সাংবাদিক প্রেয়াগ আকবর, ফিনিশ সাংবাদিক মিন্না লিন্ডগ্রেন ও ব্রাজিলের কথাসাহিত্যিক ইয়ারা রড্রিগেজ প্রমুখ।
বাংলাদেশিদের লেখক-সাহিত্যিকদের তালিকায় রয়েছেন- কবি আসাদ চৌধুরী, কথাশিল্পী সেলিনা হোসেন, কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, ইমদাদুল হক মিলন, শাহীন আখতার, মোস্তফা কামাল, আসাদুজ্জামান নূর, ফখরুল আলম, মঈনুল আহসান সাবের, আলী যাকের, শামসুজ্জামান খান, আনিসুল হক, কামাল চৌধুরী, আফসান চৌধুরী, কাইজার হক ও খাদেমুল ইসলাম প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৭, ২০১৯
এইচএমএস/এইচএ/
আরও পড়ুন
**দেশভাগে আত্মার বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়
** লেখালেখি আমাকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে: মনিকা আলী
** লিট ফেস্টে বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গের কবিতা বিষয়ক অধিবেশন
** লিট ফেস্টে পাঁচ লেখিকার প্রাণবন্ত আড্ডা
** ঢাকা লিট ফেস্ট: প্রাঙ্গণজুড়ে নানা আয়োজন
** পর্দা উঠলো ঢাকা লিট ফেস্ট’র