তবে ছোটবেলা থেকেই নেশা লেখালেখির। তাই চাকরির পাশাপাশি চলেছে তার লেখাও।
এবারের আগে কোনোদিন বাংলাদেশে আসেননি এই লেখক। তবে নিজে না এলেও, বাবার মুখে বারবার শুনেছেন বাংলাদেশের কথা। ঢাকা লিট ফেস্ট উপলক্ষ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। ঘুরে বেড়িয়েছেন বাবার স্মৃতিময় স্থানগুলো।
শুক্রবার (৮ নভেম্বর) বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে নাকভি শুনিয়েছেন সেই ভ্রমণ এবং ব্যাংকার থেকে লেখক হয়ে ওঠার গল্প। লেখকের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলানিউজের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট দীপন নন্দী।
বাংলানিউজ: এটাই তো আপনার প্রথম বাংলাদেশ সফর। কেমন লাগছে?
এইচ এম নাকভি: দারুণ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে আসলাম। এখানকার মানুষেরা দারুণ। সত্যিই ভালো লাগছে এখানে এসে।
বাংলানিউজ: সাক্ষাৎকার নেওয়ার আগে আপনি বলছিলেন, আপনার বাবার স্মৃতি রয়েছে ঢাকায়। সে ব্যাপারে…
এইচ এম নাকভি: ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত আমার বাবা ঢাকায় ছিলেন। তখনও বাংলাদেশ হয়নি। তার কাছে ঢাকার কথা অনেক শুনেছি। কল্পনায় সেসব কথা এঁকে নিয়েছিলাম।
বাংলানিউজ: আপনি গিয়েছিলেন বাবার স্মৃতিস্থানগুলোতে?
এইচ এম নাকভি: অবশ্যই। ছোটবেলা থেকে যেসব জায়গার কথা শুনেছি, সেখানে না গেলে কি হয়? উৎসবের ফাঁক গলে বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) ঘুরে এসেছি বাবার কাছে শোনা জায়গাগুলো।
বাংলানিউজ: কোথায় কোথায় গেলেন?
এইচ এম নাকভি: লক্ষ্মীবাজারে। সেখানে আমার বাবা ছিলেন। সেন্ট গ্রেগরি স্কুলেও গিয়েছিলাম। আমার বাবার প্রথম স্কুল। এটা লাইফটাইম মুভিং এক্সিপেরিয়েন্স হয়ে থাকলো। প্রথমেই আপনি জানতে চেয়েছিলেন, আমি কখনও ঢাকায় এসেছি কি-না। ঢাকায় না আসলেও, ঢাকার সঙ্গে, বাংলাদেশের সঙ্গে আমার আত্মার একটা সম্পর্ক ছিল সব সময়।
বাংলানিউজ: ঢাকা লিট ফেস্ট কেমন লাগছে?
এইচ এম নাকভি: প্রথমবারের মতো এসেছি, দারুণ লাগছে। প্রাঙ্গণজুড়ে প্রচুর মানুষ। তারা বই নিয়ে উচ্ছ্বসিত। তারা ঘুরে-ফিরে বই দেখছে। দারুণ লাগছে। এখানকার মানুষের উচ্ছ্বাস দেখে মনে হচ্ছে, ছাপার অক্ষর এখনও বেঁচে আছে।
বাংলানিউজ: আপনি অর্থনীতিতে পড়াশোনা করেছেন। চাকরি করেছেন ব্যাংকে। সেখান থেকে লেখক হয়ে উঠলেন কীভাবে?
এইচ এম নাকভি: আসলে ছোটবেলা থেকেই আমি লিখি এবং লেখালেখির চর্চাটা চালিয়ে যেতে চাই। কিন্তু আমার বেড়ে ওঠাটা মধ্যবিত্ত পরিবারে। আমার সম্পদ নেই। জীবিকার জন্য ব্যাংকে চাকরি করি। এরই ফাঁকে লেখালেখি করি।
বাংলানিউজ: আপনি তো ২০০৩ সালে প্রথম উপন্যাস লিখেছিলেন?
এইচ এম নাকভি: হ্যাঁ। ‘হোম বয়’। বইটি অবশ্য প্রকাশিত হয়েছিল ২০০৯ সালে।
বাংলানিউজ: বইটি নিয়ে যদি কিছু বলতেন?
এইচ এম নাকভি: এটা আসলে নাইন-ইলেভেনের পর যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসীদের সামাজিক প্রেক্ষাপটের ওপরে লেখা। বাকিটা জানতে হলে বইটা পড়তে হবে।
বাংলানিউজ: যতদূর জানি আপনার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘দ্য সিলেক্টিভ ওয়ার্কস অব আব্দুল্লাহ দ্যা কসাক’। সেটি কবে প্রকাশিত হয়েছিল?
এইচ এম নাকভি: ২০১৯ সালে।
বাংলানিউজ: ১০ বছর পর! কেন?
এইচ এম নাকভি: আসলে আমি খুবই স্লো (ধীর প্রকৃতির)। আমি প্রতিদিন ৩০০ শব্দের বেশি লিখতে পারিনা। একজন ঔপন্যাসিকের প্রতিদিন তিন হাজার শব্দ লেখা উচিৎ। আমি এটা পারি না। আমি প্রতিদিন ৩০ হাজার শব্দ লেখতে চাই। প্লিজ প্রে ফর মি!
বাংলানিউজ: দ্বিতীয় বইটির বিষয়বস্তু কি?
এইচ এম নাকভি: এটা আসলে কঠিন প্রশ্ন। কারণ প্রতিটি পাঠক নিজের মতো করে বই পড়েন এবং চিন্তা করেন। তবে মোটাদাগে বলতে গেলে, আমার গল্পের মূল চরিত্র আব্দুল্লাহ এক বিত্তশালী পরিবারের সন্তান। যে নানা ধরনের সমস্যা নিয়ে জীবন যাপন করে। সে আত্মহত্যা করতে চায়। এরই মাঝে একজন বৃদ্ধের সঙ্গে তার দেখা হয়, যার ওজন ১২৪ কেজি। মূলত করাচির আধুনিক জীবনযাত্রাকে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।
বাংলানিউজ: নতুন কিছু কি লিখছেন? লিখলে কী নিয়ে?
এইচ এম নাকভি: হ্যাঁ, লিখছি। কিন্তু কী নিয়ে সেটা তো বলা যাবে না। এটা টপ সিক্রেট।
বাংলানিউজ: দুটো দেশের মধ্যে সম্পর্ক তৈরিতে সাহিত্য কতটুকু সাহায্য করে বলে আপনি মনে করেন?
এইচ এম নাকভি: আসলে সাহিত্যের কোনো সীমান্ত রেখা নেই। যেমন ধরেন গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজের ‘সিয়েন আনিওস দে সোলেদাদ’ বা ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ারস অফ সলিটিউড’ উপন্যাসটি। এটি দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের মানুষের জীবন নিয়ে লেখা। কিন্তু সারা বিশ্বের মানুষ পড়েছে। সাহিত্য আসলে এমনই। ভাষা নয়, বিষয়বস্তু যদি মানুষকে স্পর্শ করে, তাহলেই সেটা সম্পর্ক তৈরিতে সাহায্য করে।
বাংলানিউজ: একজন লেখককে লেখক হতে হলে কী করতে হবে বলে আপনি মনে করেন?
এইচ এম নাকভি: একজন লেখককে লেখক হতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে। প্রতিদিন পড়তে হবে। আপনি প্রতিদিন লিখতে পারবেন না। কিন্তু আপনাকে প্রতিদিন পড়তে হবে। লেখালেখি আসলে একটা শৃঙ্খলা। এটা এক্সারসাইজ না যে আপনি প্রতিদিন করতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৯
ডিএন/এসএ
আরও পড়ুন>>> ‘বঙ্গবন্ধু কখনো কারো সঙ্গে আপস করেননি’