শনিবার (৯ নভেম্বর) রাজধানীর বাংলা একাডেমিতে চলমান ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় ও শেষ দিন ‘লাভ, আফ্রিকা’ শীর্ষক সেশনে সাংবাদিক জীবন ও এ পেশা সম্বন্ধে নিজের দৃষ্টিভঙ্গী প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এসব কথা বলেন ‘সাংবাদিকতার নোবেল’খ্যাত পুলিৎজারজয়ী মার্কিন সাংবাদিক জেফরি গ্যাটেলম্যান।
‘লাভ, আফ্রিকা’ ২০১৭ সালে প্রকাশিত গ্যাটেলম্যানের একটি বইয়ের নাম।
আফ্রিকার কর্মজীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে গ্যাটেলম্যান বলেন, কোনো কিছুই সহজ নয়। আমি যে আফ্রিকাতে কাজ করেছি, সেটিও খুব সহজ ছিল না। সেখানে এমন অনেক জায়গায় আমি ঘুরেছি যেখানে কোন গ্রিন জোন, আর্মি ক্যাম্প বা হোটেল নেই। যে কেউ, যে কোনো সময় আপনার ব্যাপারে তথ্য ফাঁস ও আপনাকে গুম করে দিতে পারে।
‘এটি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা। প্রতিনিয়ত চলছে হামলা, ধর্ষণ, অগ্নুৎপাত। এর ভেতর একজন মানুষ কেনো আপনাকে বিশ্বাস করবে বা তথ্য দেবে? তারপরও আমাকে তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে, তাদের বিশ্বাস অর্জন করতে হয়েছে। স্থানীয় সাংবাদিক ও সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়েছে। বিভিন্ন সময় আমি বিভিন্ন পথ অবলম্বন করে এগিয়েছি। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে সাধারণ মানুষকে টাকা দিয়েও আমাকে তথ্য নিতে হয়েছে। ’
‘তবে এসব কিছুর পরও নিশ্চিত করতে হয়েছে ভালো মানের সংবাদ পরিবেশন। এটা সত্যিই অনেক বড় চাপ। আর এ চাপ নিয়েই কাজ করাটা সবচেয়ে ‘বড় চাপ’। আমি লিখতে এবং ঘুরতে ভালোবাসতাম বলেই হয়তো সেটা পেরেছি। ’
আফ্রিকা নিয়ে লেখা নিজের বই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে লেখক বলেন, রিপোর্টিংয়ের জায়গাটা অত্যন্ত ছোট। সেখানে নির্দিষ্ট কিছু শব্দসংখ্যার মধ্যেই আপনাকে লেখা শেষ করতে হয়। সেখানে নিজের আবেগ-অনুভূতি কিছুই লিখে ওঠা যায় না। সেই খামতি থেকেই এ বই লেখা। এখানে আফ্রিকার প্রতি আমার বিস্তৃত ভালোবাসার কথা আছে।
‘শেখার জন্য জীবনের মতো দ্বিতীয় শিক্ষক আর নেই। আমার এ দীর্ঘ পরিভ্রমণে আমি শিখেছি অনেক কিছু। দীর্ঘদিন পরিবার থেকে দূরে থেকেছি। আমার স্ত্রী আফ্রিকা যেতে আমাকে বিভিন্ন সময় নিষেধ করেছে, আবার কখনো কখনো উৎসাহও জুগিয়েছে। আফ্রিকায় গিয়ে সেখানকার ভালোবাসা আআকে আটকে ফেলেছে। সেখানকার ছোট গ্রাম, শিশুদের খেলাধূলা, সাধারণ মানুষের জীবন সবকিছুই অনন্য। ’
গ্যাটেলম্যান বর্তমানে সাউথ এশিয়ার ব্যুরো চীফ হিসেবে কাজ করছেন। দক্ষিণ এশিয়া প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে কাশ্মীরের কথা টানেন। বলেন, কাশ্মীরের সমস্যাগুলো সংবাদপত্রে খুব কমই আসে। বিশেষ করে স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে। তবে আমরা সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রচুর রিপোর্ট করেছি। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি, সেখানকার মানুষ গল্প বলার জন্য, তথ্য দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। কিন্তু সেখানে স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত। এটা সরকারের একটা কৌশল হতে পারে। এর ফলে সেখানকার গল্পগুলো খুব কমই উঠে আসে।
ঢাকা লিট ফেস্টের তৃতীয় ও শেষ দিনের শুরুতে সকাল ৯টায় বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনে লন চত্বরে ভজন ও কীর্তন পরিবেশন করে ইসকনের সংগীত দল।
এবারের সাহিত্য উৎসবে পাঁচটি মহাদেশের ১৮টি দেশ থেকে শতাধিক বিদেশি ও দুই শতাধিক বাংলাদেশি সাহিত্যিক, লেখক, বুদ্ধিজীবী, গবেষক, সাংবাদিক, রাজনীতিক অংশ নিচ্ছেন।
বিদেশিদের দলে থাকছেন- বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বুকার মনোনয়নপ্রাপ্ত ব্রিটিশ লেখিকা মনিকা আলী, ভারতীয় লেখক, রাজনীতিক শশী থারুর, কথাসাহিত্যিক উইলিয়াম ডালরিম্পল, পশ্চিমবঙ্গের লেখক শংকরসহ আরও অনেকে।
থাকছেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক শাহীন আখতার, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, আসাদ চৌধুরী, রুবী রহমান, সেলিনা হোসেন প্রমুখ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৯
এইচএমএস/এইচজে