বাংলানিউজ: আপনি তো লিট ফেস্টের নিয়মিত মুখ। আবারও এলেন এই উৎসবে।
উইলিয়াম ড্যালরিম্পল: ওহ, দারুণ! এই উৎসবটা আমি খুবই এনজয় করি। তবে এবার বৃষ্টিটা ভালো লাগছে না। বৃষ্টি বাদে সবই ভালো লাগছে।
বাংলানিউজ: আপনি কি জানেন, আপনি বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়?
উইলিয়াম ড্যালরিম্পল: তাই নাকি? আমি অবশ্যই গত তিন দিনে অনেকগুলো বইয়ে অটোগ্রাফ দিয়েছি। মনে হয়, মানুষ আমার বই পড়ে।
বাংলানিউজ: আপনার ‘দ্য হোয়াইট মোঘলস’, ‘দ্য লাস্ট মোঘলস’ বাংলাদেশে অনূদিত হয়েছে। জানেন কি?
উইলিয়াম ড্যালরিম্পল: আমার কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়নি। ওগুলো পাইরেটেড বই। পাকিস্তানেও পাওয়া যায় শুনেছি। তবে মানুষ পড়ছে এটাও বা কম কী? তবে অনেকে বইয়ের পাইরেটেড কপি এনে আমার অটোগ্রাফ নিতে চেয়েছিল, আমি রাজি হইনি।
বাংলানিউজ: বাংলাদেশে আপনি এত জনপ্রিয়। বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা আছে?
উইলিয়াম ড্যালরিম্পল: না। পশ্চিমবঙ্গের সাহিত্য সম্পর্কে জানা আছে। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পড়েছি। তবে এখনো পড়া শেষ হয়নি। রবীন্দ্রনাথের পরিবারের সঙ্গে আমার পারিবারিক সম্পর্কও আছে।
বাংলানিউজ: তাই নাকি? এটা তো জানা ছিলো না। কী রকম সম্পর্ক?
উইলিয়াম ড্যালরিম্পল: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সঙ্গে আমার দাদার দাদা জন প্রিন্সন ব্যবসা করেছেন একসঙ্গে। সেই সময় অর্থনৈতিকভাবেও তিনি দারুণ লাভবান হয়েছিলেন। বাংলানিউজ: আপনার সর্বশেষ বই ‘দ্য এনার্কি: দ্য রেলেন্টলেস রাইজ অব দ্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি’ সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।
উইলিয়াম ড্যালরিম্পল: বইটা উপমহাদেশ ও বাংলাদেশ সম্পর্কে আমার গবেষণার প্রকাশ বলা যায়। বইটি আসলে অষ্টাদশ শতকের বাংলার কথা লিখেছি। তখন পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ছিল এই অংশটি। প্রসঙ্গক্রমে এখানে উঠে এসেছে তাঁতীদের কথা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, তখন এই বাংলায় দশ লাখের উপরে তাঁতী ছিলেন। তারা যে মান ও পরিমাণের কাপড় তৈরি করতেন, সেটা অবিশ্বাস্য।
বাংলানিউজ: এর ক্রেতা কারা ছিলেন?
উইলিয়াম ড্যালরিম্পল: ইংরেজরা তো বটেই, ডাচ, ফরাসি, পর্তুগিজ সবাই এখান থেকে কাপড় কিনে নিয়ে যেতো নিজেদের দেশে। ঢাকার কাপড় ছিল সবচেয়ে বিখ্যাত। সবচেয়ে সমৃদ্ধ অর্থনীতিও ছিল ঢাকায়। আজকে আমরা চায়নার যে শিল্পবিপ্লবের কথা বলি, সেটা তখন ছিলো বাংলাকে ঘিরে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্ষমতায় আসার পর তারা এ কাপড়ের সিংহভাগের দখল নিয়ে নেয়। বইতে সেই সময়ের কথাই বলা হয়েছ। সব মিলিয়ে পাঁচশ পৃষ্ঠার বই।
বাংলানিউজ: পাঁচশ পৃষ্ঠা! এত বড়!
উইলিয়াম ড্যালরিম্পল: হুমম। বই আসলে চারশ’ পৃষ্ঠার। বাকি একশ’ পৃষ্ঠা শুধু বইয়ের তথ্যগুলো কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে সেটা উল্লেখ করা হয়েছে। আসলে ইংল্যান্ডে ও ভারতে প্রচুর তথ্য রয়েছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও তাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে। পাশাপাশি আমাকে সহায়তা করেছেন ব্রুস ওয়ানেস।
বাংলানিউজ: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নিয়ে আপনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দোলার পরাজয়ের কারণ কী?
উইলিয়াম ড্যালরিম্পল: এটা নিয়ে আসলে অনেক মিথ রয়েছে। শুধু আমি নই, ফরাসি, ডাচ- অনেক ইতিহাসবিদই বলেছেন তিনি আসলে ‘ইডিয়ট’ ছিলেন।
বাংলানিউজ: ইডিয়ট? আমরা তো তাকে নায়ক মনে করি।
উইলিয়াম ড্যালরিম্পল: আরে না। আমার মতে, সে একটা ‘ইডিয়ট’। অনেকে তাকে মানসিকভাবে ভারসাম্যহীনও বলেছেন। তার সময়ে কেউ তাকে খুব একটা পছন্দ করতেন না। ইতিহাসে গোলাম হোসেনকে নেতিবাচক হিসেবে প্রকাশ করা হয়েছে। সিরাজের বড় ভুল ছিল জগৎ শেঠকে হুমকি দেওয়া। জগৎ শেঠই আসলে তাকে হত্যার মূল নকশা তৈরি করেন। মীর জাফর, জগৎ শেঠ এরা আসলে ইংরেজদেও বন্ধু ছিলেন।
বাংলানিউজ: আপনি তো জয়পুর লিট ফেস্টের পরিচালক। সেই উৎসব নিয়ে যদি কিছু বলতেন?
উইলিয়াম ড্যালরিম্পল: জয়পুর লিটেরেচার ফেস্টের আমি একজন পরিচালক। এটা এখন পৃথিবীর অন্যতম সাহিত্য উৎসব। পাঁচ লাখের মতো মানুষ এখানে অংশ নেন। নানা ভাষায় আলোচনা হয়। পারলে একবার ঘুরে এসো।
বাংলানিউজ: অবশ্যই।
উইলিয়াম ড্যালরিম্পল: সত্যি, ভালো লাগবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৯
ডিএন/এইচএমএস/এইচএ/