রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে ২০১৭ সালে লোক পুরস্কারপ্রাপ্ত চিন্তক সলিমুল্লাহ খানের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ‘লোক’ সম্পাদক অনিকেত শামীম।
অনুষ্ঠানটি তিন পর্বে বিভক্ত ছিল।
প্রথম পর্বে কবি রহমান হেনরীকে অভিনন্দন জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কবি আহমেদ স্বপন মাহমুদ, নির্মাতা মাসুদ সেজান, কবি জুনান নাশিত ও কবি সঞ্জীব পুরোহিত।
দ্বিতীয় পর্বে কবি রহমান হেনরীর হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে অতিথিরা তার হাতে পুরস্কারের অর্থমূল্য পঞ্চাশ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন।
তৃতীয় পর্বে কবি রহমান হেনরীকে নিয়ে মূল্যায়ন পর্বে কথা বলেন কবি আসাদ মান্নান, কবি ফরিদ আহমদ দুলাল ও কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার।
পরে অনুভূতি প্রকাশ করে রহমান হেনরী বলেন, ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন অনেকেই। একই সঙ্গে উপমহাদেশের কিংবদন্তি শিল্পী লতা মুঙ্গেশকর হাসপাতালে ভর্তি। এতোসব বেদনার মধ্যে আনন্দের বার্তা নিয়ে এসেছে এ পুরস্কার।
তিনি বলেন, আমি এ পুরস্কারের জন্য যথেষ্ট যোগ্য নই। এর আগে আমার চেয়ে যোগ্য মানুষেরা এ পুরস্কার পেয়েছেন। মূলত আমি আমার লেখালেখি নিয়েই পরিতৃপ্ত নই। কারণ, আমি যেভাবে লিখতে চাই, তা আমার হয়ে ওঠে না।
সভাপতির বক্তব্যে সলিমুল্লাহ খান বলেন, রহমান হেনরী পাঁচ হাজারের বেশি কবিতা অনুবাদ করেছেন। এ তথ্যটি জানার পর আমি সত্যিই ঈর্ষান্বিত।
নিজের একটি কবিতার বই রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমার নাম কবিদের মতো নয়। সেজন্যই বোধহয় আমার কবি হয়ে ওঠা হয়নি। তবে কবিতা ত্যাগ করা কঠিন।
তিনি বর্তমান সময়ের কবিদের কবিতা পড়েন না জানিয়ে বলেন, এখনকার কবিতা পড়ার মতো শক্তি আমার নেই। যেকোনো কিছু পড়ার ক্ষেত্রে আমি ভাষাকে গুরুত্ব। এখনকার কবিদের কবিতার ভাষা আমাকে আকৃষ্ট করে না। যার কারণে আমার পড়া হয়ে ওঠেনি।
রহমান হেনরীকে নিয়ে কবি আসাদ মান্নান বলেন, কবিতা নামে যদি একটি শিল্প তৈরি না হতো, তাহলে রহমান হেনরীর জন্ম হতো না। কবিতার জন্যই ওর জন্ম। আমি আশা করবো, আজীবন তিনি যেন কবিতার দাস হয়ে থাকেন। কবিতার প্রতি উন্মাদ হয়ে থাকেন।
ফরিদ আহমেদ দুলাল বলেন, রহমান হেনরীর কবিতায় লোকসুরের ছোঁয়া আছে। এজন্য তার কবিতার অন্য মাত্রা রয়েছে। তিনি সব সময় কবিতার ঘোরে বাস করেন।
জাকির তালুকদার বলেন, বইমেলায় প্রতি বছর সাড়ে চার হাজার বই প্রকাশিত হয়। কিন্তু পরের বইমেলায় সে সব বইয়ের লেখক হারিয়ে যান। এর মধ্যে দু’একজন যারা টিকে থাকেন, তারা লেখার জন্যই বেঁচে থাকেন। রহমান হেনরী তাদের মধ্যেই একজন।
মাসুদ সেজান বলেন, আমি বহু বড় কবিদের সঙ্গে মিশেছি। কিন্তু আমার বন্ধু রহমান হেনরীকে আমি কবি হয়ে বেড়ে উঠতে দেখেছি। এটা আমার সৌভাগ্য। আজ থেকে ৫০, ১শ বা ২শ বছর পর রহমান হেনরীর অবস্থান কী হবে জানি না, তবে সে আমাদের প্রজন্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি।
আহমেদ স্বপন মাহমুদ বলেন, রহমান হেনরী শব্দের খেলা খেলেন। কবিতায় মোচড় অনেক। ফলে তিনি তার কবিতাকে গতিময় করে তোলেন।
জুনান নাশিত বলেন, রহমান হেনরীর কবিতা ও সাহিত্যের বয়ান, বোধ আমি নিজে চমৎকারভাবে ধারণ করি। তার কবিতার কাছে প্রায়ই আমি মাথানত করি।
সঞ্জীব পুরোহিত বলেন, রহমান হেনরী কবিতা ও জীবনকে একাকার করে ফেলেছেন। তার কবিতা বৈশ্বিক। সব দেশ ও জাতির কবিতার ছোঁয়া পাওয়া যায় তার কবিতায়।
স্বাগত বক্তব্যে লোক সম্পাদক অনিকেত শামীম বলেন, ‘লোক’র এক দশক পূর্তি উপলক্ষে ২০০৯ সাল থেকে এ পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। দুই দশক পূর্তি উপলক্ষে ২০১৯ সালের পুরস্কার ২০২০ সালে দেওয়ার পর এ পুরস্কার বন্ধ করে দেওয়া হবে।
‘লোক’ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৯ বিজয়ী সেলিম মোরশেদ
অনুষ্ঠানে ২০১৯ সালের ‘লোক’ সাহিত্য পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে কথাসাহিত্যিক সেলিম মোরশেদের নাম ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালে তার হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।
এর আগে ‘লোক’ সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন চঞ্চল আশরাফ, কুমার চক্রবর্তী, মুজিব মেহদী, মাহবুব কবির, ইমতিয়ার শামীম, কামরুজ্জামান কামু, সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ, আহমেদ স্বপন মাহমুদ, মোস্তাক আহমাদ দীন ও সলিমুল্লাহ খান।
এছাড়াও লিটলম্যাগ প্রাঙ্গণ পুরস্কার পায় লিটলম্যাগ একবিংশ, ঊষালোকে, চারবাক, কথা ও অর্বাক।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
ডিএন/এএ