মানত
তোমাকে সর্বস্ব ভেবে
তুলে দিই খিদে-মুখ
জমা দানাপানি
জলের সরণ সে তো গড়ায় গভীরে
কোনদিকে সহ্য সীমা প্রস্তাবিত গ্রীষ্মের দুপুর
দূরত্বের আর্তনাদ সন্তরণ শেখে
এমন সুযোগ কালে
পোষা খানা-খন্দ, লালসুতো,
জেগে ওঠ বিপত্তারিণী
মুহূর্ত
মুখোশের হাসি মেখে এ শহর একা হয় রোজ
সিলিংয়ের দিকে সেই ভেজা চোখ; আরও অভিমানে—
উঁকি মেরে শোনে; ভাবে পাশের দরজায় কারা রাখে
জুতোর আওয়াজ; হেঁটে যাওয়া পথ; শিকারির মতো
সেও ওৎ পেতে থাকে; রবারের গিঁট হাতে দেখে
কখন ফিরবে সেই পাখি— ডানাভাঙা; আলিঙ্গনে
চুমুর আবেশে আজ তাকে বাঘনখ দেব...
উপত্যকা
রাজপথে পড়ে থাকে মৃত বেড়ালের চোখ; দেহ
অবরোধে হেঁটে যাও নিপুণ তুমিও একা একা
নির্জন সহজ ঢঙে বারবার না দেখার ছলে
সমস্ত শহর ভাবে ব্যতিব্যস্ত অতিষ্ঠ সময়ে
পোষমানা সেই চারা গাছগুলি নিয়ন আলোয়
গভীর মাছের মতো ক্ষয়হীন উড়ুক্কু ডানায়
মৃত শহরের বুকে হাঁটে; আর তুমি
সাবলীল ঘরে ফেরো রোজ...
দুঃস্বপ্ন
...ডানা নেই; অথচ ঋণের
বোঝা ঘাড়ে করে সহ্য ক্ষমতার কাছে নতমুখ
একপাশে বেজে যায় নিশ্চিত উড়ান দুঃস্বপ্নের
পালকে বুলাও কাঠি; ম্যাজিকের মতো বারবার
বাইরে প্রচুর রোদ; যাতায়াত— এই বুঝি সেই
পোষা পায়রার মতো সারা শহরের লোকজন
উড়ে যাবে উড়ে যাবে, এইমাত্র, জাদুর শহরে
শহরতলি
শহর শেখানো ছলে, মৃত ঘুঘুদের দিকে হাত তোল
ব্যারিকেডে বেজে ওঠা সেই নিষাদের ডাক
পুরনো দিনের দিকে ফিরে যেতে যেতে বিসর্জন
ভাঙা নদী; ম্লান শ্যাওলা-মন আর মানগো ব্রিজের
ছায়া; অপ্রকাশ্য ছলে ভিড়ের মুহূর্ত ভাঙে রোজ
টায়ার পোড়ানো গন্ধে তোমার কাছেই ফিরে আসে
ঝরা পাতা...ফুল ফল
সংশোধনাগার
আরও বিলম্বিত ঢঙে
বোবা সেজে থাকো তুমি
অকালের মেঘ কেটে যাবে ভেবে
রটন্তী মন্দিরে দাও তাজা জবাফুল
বেলপাতা
ছিটকে ছিটকে আসে তার ফোঁপানো কান্নার সুর
দুহাতেই চেপে ধরো কান
শব্দ আয়াতের মানে
শিশুটি নাছোড় বড়
শেষতক তোমাকেই পিতা ডেকে বসে
আর সেদিন তুমিও আত্মহত্যা শেখাও নিজেকে
ম্যানিফেস্টো
তুমিও ভীষণ একা অভিমানে, রাগে
সমস্ত জমানো ইস্তাহারে
ভরে গেছ চুন কালি
শপথবাক্যের ফাঁকে গুঁজে দাও কাকের পালক
পেখমের লোভে আজ রাজপথ তোমার দরজায় এসে বসে
হাজিরার খাতা নিয়ে ফ্লুরোসেন্ট রোদ
আড়ালে ডেকেছে তাকে
চুপিসারে ঝকঝকে ছুরির ফলা
গোপনেই বেড়ে ওঠে
নিভৃত বিচ্ছেদ ভেবে তার কাছে তুলে ধরো হত্যার মুহূর্ত
আর
ছেড়ে যাওয়া কালে চাও জমাট আঁধার
যাতে সব হত্যাকাণ্ড মুছে যেতে পারে
কেকা
ময়ূর নিয়ে কথা উঠল যখন
আচারের বোতল হাতে নিয়ে
দাঁড়িয়ে আমাদের নিজস্বী ছাদ
দূরত্বের দিকচক্রবালে মায়ের বেনারসী উড়ছে
শীতার্ত বাতাস নামছে আমাদের ভাতের হাঁড়িতে
আমরা ভাই-বোনেরা জু-এর টিকিট নিয়ে
কাউন্টারের গেটে দাঁড়িয়ে আছি
বাদাম প্যাকেটে তুলে ধরেছি ক্ষুধার হাত
ঘুঙুর ছাড়া, কড়া কস্টিউম ছাড়া
বেডরুমের আনাচে
পালঙ্কের পায়া ধরে শতসহস্র পাখনা মেলে
নেচে বেড়াচ্ছে বিষণ্ণ ময়ূর
ভোগ
মন্দিরের পুরোহিত সামনের দরজা দিয়ে একবার আড়চোখে তাকালেন
ভাসমান মেঘের দিকে
সুপ্রশস্ত খেজুর বৃক্ষের দিকে
উৎসুক জনতার লালায় রক্ত জবার শ্লোক
চোখের নজর ভেঙে ফেলার জন্য মা
শুকনো লঙ্কার ধুঁয়ো ছড়ালেন
জার্নাল
একদিন একদিন অদৃশ্য মোহের ফাঁদে পড়ি। সেই মুহূর্তের কথা ভোলাতে তুমিও, ঘোরাও তোমার জাদুছড়ি।
স্কিৎজোফ্রেনিয়া
এই রাস্তা শুনশান
হলুদ হত্যার নীচে রোজ
বারবেলা বেজে ওঠে
জাদুদণ্ড হাতে ঘোরে লরির চালক
পলাতক শব্দ ঘোরে শীতের ফসলে
ইঁদুরের দাগ
প্রভূত বাজারে এই লেনদেন বিশ্বাসী বিকেল
ফোঁপানো কান্নার সুর ছিল তারও; ভুলে নি অথচ ...
সুইসাইড নোট
এই গতানুগতিক আপসের পাশে
বুলেটের শব্দ বেজে ওঠে মৃদু ঢঙে
চিনচিনে ব্যথার দাগ সামাজিক মুহূর্তের লোভ
ভেঙেছ করুণা; জমা সময়ের সীমারেখা পোষা
অথচ সহিষ্ণু রোদ রেলিংয়ের ফাঁক দিয়ে
ব্রিজের জলের দিকে চেয়ে থাকে
সাঁতারের ভ্রম
খেলা
সেই কোন ছোটবেলা থেকে মাঠে দাঁড়িয়ে আছি, একা, অঙ্কের খাতা হাতে নিয়ে। পেন হাতে নিয়ে। রোদ চলে যাচ্ছে, বৃষ্টি চলে যাচ্ছে, সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত। মা বলেছে, নামতা মুখস্ত হলে রঙিন ইউনিফর্ম কিনে দেবে;
জয়ের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবে। জয় আর আমি চুড়িদারের ফিতা শক্ত করে সমুদ্র দেখতে যাব, মেঘ দেখবো। নীল সানগ্লাসে পৃথিবীর সমস্ত শূন্যতা আসলে মাঠ। আর আমরা অন্ধের দল গোলের গোলাম। অথচ কিছুতেই নামতা মুখস্ত হয় না, যোগ বিয়োগ হয় না। সাদা টুপি পরা লোকনাথ স্যার কালো পেন নিয়ে, ফাঁকা খাতায় ইয়া বড় গোল এঁকে দেন... একটা, দুটো, তিনটা। আমি গোল নিয়ে ছুটি... জিরো নিয়ে ছুটি। চোখে সারা ওয়ার্ল্ডের সমুদ্র। বেচারা মা তখন আলুমাখা ভাত এগিয়ে দেন। আমি ভাত খেতে খেতে টিভি দেখি... জয়
দেখি... শূন্যের পেছনে ছোটা রপ্ত করি...
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২১