ঢাকা: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মনেপ্রাণে একজন সংস্কৃতি চেতনাসমৃদ্ধ রাজনীতিক ছিলেন। শিল্প সাহিত্য-সংস্কৃতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর একটি নিজস্ব ধ্যান-ধারণা ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত চেতনা ছিলো।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল পাঁচটায় রাজধানীর শাহবাগে গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তরের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের আয়োজনে আন্তঃজেলা সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠানে ‘ভাষা আন্দোলন, বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুর অবদান’ শীর্ষক স্মারক বক্তব্য দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব আব্দুল মান্নান, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আলাউদ্দিন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আজহারুল ইসলাম খান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ প্রমুখ।
বৃহত্তর ময়মনসিংহ সাংস্কৃতিক ফোরামের সভাপতি মো. আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান শেলী।
স্মারক বক্তব্যে আবুল হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর জাতীয়তাবাদী ভাবনার যে রূপ পাওয়া যায়, তার পুরোটাই ছিল আদি ও অকৃত্রিম বাঙালি সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। বাংলার মাটি ও মানুষের প্রতি, বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি, বাংলা ভাষা ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি আজন্ম গভীর মমত্ববোধ ও স্বদেশপ্রেমে উজ্জীবিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু। বাংলার ভাষা, লোকাচার, জীবনযাপন, বিনোদন, সাহিত্য ইত্যাদি সব কিছুকেই তিনি ধারণ করতে চেয়েছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের মধ্যে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু নিজের জীবনের প্রতিটি মুহুর্তে উপলদ্ধি করেছেন, নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পাশাপাশি রাজনৈতিক স্বাধীনতা এবং অর্থনৈতিক মুক্তি না থাকলে জাতির প্রতিষ্ঠা লাভ হয় না, তাইতো ভাষা-আন্দোলনসহ পরবর্তীকালের প্রতিটি আন্দোলন তিনি প্রত্যক্ষ নেতৃত্ব দিয়ে সংগঠিত করেছেন। মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের এ দীর্ঘ পথে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম সাহস, সীমাহীন ত্যাগ-তিতিক্ষা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সঠিক দিকনির্দেশনা জাতিকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর চিন্তার জগতজুড়ে ছিল কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম, সুকান্ত ভট্টাচার্য ও জীবনানন্দ দাশ। বঙ্গবন্ধু বিপুলভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ দ্বারা এবং তার জীবনে বারবার তিনি রবীন্দ্র চেতনা দ্বারা প্রাণিত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রানুরাগী ছিলেন। অন্যদিকে, কবি নজরুল ছিলেন তার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্রোহের মডেল। বঙ্গবন্ধুর কথা আর বক্তৃতায় প্রায়সময়ই উদ্ধৃত হতো রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত-জীবনানন্দের কবিতার চরণ। এতো সাবলীল আর প্রাসঙ্গিকতায় তিনি কবিতা আবৃত্তি করতেন যে উপস্থিত সবাই মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনতেন।
বঙ্গবন্ধুর ভাষাজ্ঞান সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলা ভাষাজ্ঞানে ঋদ্ধ বঙ্গবন্ধুর একটি স্বতন্ত্র লেখক সত্ত্বা ছিল যার পরিচয় পাই আমরা বঙ্গবন্ধু লিখিত ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে। বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের অমর কাব্যময় ভাষণের ভাব, ভাষা, শব্দচয়ন, ভাষাগত ব্যঞ্জনা ও লৌকিক ভাষাভঙ্গি ভাষাতাত্ত্বিকদের বিশ্লেষণ ও আগ্রহের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
আলোচনা সভা শেষে চিত্রাঙ্কন, নজরুল গীতি, আধুনিক ও লোক গান, অভিনয়, আবৃত্তি, নৃত্য নিয়ে আন্তঃজেলা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ০৪১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১
ডিএন/ওএইচ/