ঢাকা: নতুন প্রজন্মকে বই পড়ার অভ্যাস বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) বিকেলে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনের সময় এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ছোটদের বইয়ের প্রতি ঝোঁক বাড়ানো দরকার। আমাদের সময় বাচ্চাদের বই পড়ে শোনানো হতো। এখনও আমরা তা করি। সব সময় ঘরে একটা ছোট লাইব্রেরি করে রাখি। বইয়ের প্রতি শিশুদের ঝোঁক বাড়াতে হবে। পাঠাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
‘আসুন সবাই মিলে আমরা বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলি। আমাদের আগামী প্রজন্মকেও যেন উৎসাহিত করি। ’
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এখন তো মোবাইল ডিভাইসেও বই পড়ার সুযোগ আছে। তবে বই হাতে নিয়ে বইয়ের পাতা উল্টে পড়ার আনন্দই আলাদা। বইয়ের আবেদন কখনো মুছে যাবে না। সেজন্য প্রকাশকদের ধন্যবাদ, মহামারির সময়েও অনেক কষ্ট করেছেন।
তিনি বলেন, সরকারে থাকি আর বিরোধী দলে থাকি একদিনের জন্য হলেও বইমেলায় যাই। এখন করোনার কারণে যেতে পারছি না। কারণ আমি গেলে এক হাজার লোকের সম্পৃক্ততা হয়। তাদেরও সবার সংক্রমণের কথা চিন্তা করে আমি যাচ্ছি না। তবে আমার মনটা পড়ে আছে সেখানে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের (রাজনীতিবিদ) বক্তৃতা বিবৃতি মানুষের কাছে যত দ্রুত পৌঁছা যায়, সাহিত্যে আরও আগে মানুষের হৃদয়ে পৌঁছে যায়। কারণ সাহিত্যের মাধ্যমে একটি দেশের ইতিহাস, ভাষা-সংস্কৃতিও জানা যায়। নিজের ভাষা জানার পাশাপাশি অন্যের ভাষা জানতে হবে।
অন্য দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ভাষা জানতে অনুবাদের ওপর জোর দিতেও প্রকাশকদের অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।
বইমেলায় সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে সরকার প্রধান বলেন, পাঠকরা যেন বই পড়ার আনন্দ এবং মেলায় ঘুরে ঘুরে বই দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হন, সেই চিন্তা থেকেই এ মহামারির মধ্যেও বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। যারা এখানে আসবেন, অবশ্যই স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলবেন।
আবারও করোনার প্রকোপ বাড়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এখন কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই ভাইরাসটা আবার মারাত্মক আকারে দেখা দিচ্ছে। টিকা দিয়েই কেউ যেন নিজেকে পুরোপুরি সুরক্ষিত মনে করবেন না।
মাতৃভাষার আন্দোলন থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান মুছে ফেলার অপচেষ্টা হয়েছে মন্তব্য করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, মাতৃভাষার আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের ইতিহাস মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়। অনেক জ্ঞানী-গুণী আছেন তারা বলার চেষ্টা করেন- ‘উনি (বঙ্গবন্ধু) তো জেলে ছিলেন, আন্দোলন করলেন কীভাবে?’ আমার কথা হলো- আসলে বঙ্গবন্ধু জেলে গেলেন কেন? ওই বন্দীদশা থেকেই বঙ্গবন্ধু ছাত্রনেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আন্দোলনের দিক-নির্দেশনা দিতেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তো তাঁরই পরামর্শে হয়েছে। আর সেই আন্দোলন শুরু হলেই তো তিনি গ্রেফতার হন।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা এসবির গোপন রিপোর্ট নিয়ে ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস এগেইনস্ট ফাদার অব দ্য নেশন শেখ মুজিবুর রহমান’ নামে গ্রন্থ প্রকাশ করার কথা তুলে ধরেন অনুষ্ঠানে। তিনি বলেন, এগুলো পড়লেই বোঝা যাবে বঙ্গবন্ধু কীভাবে ভাষার আন্দোলনের জন্য ছাত্রনেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন, আন্দোলনের সমন্বয় করেছেন।
আমার দেখা নয়া চীন, সিক্রেট ডকুমেন্টস, বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা বইগুলো সবাইকে পড়ার অনুরোধ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এসব বই পড়লে অনেক কিছু জানতে পারবেন, ইতিহাসের অনেক সত্য ঘটনা জানতে পারবেন। অনেক কিছু জানার সুযোগ আছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা ‘স্মৃতি কথা’- সেটাও ভবিষ্যতে প্রকাশ করব। সিক্রেটস ডকুমেন্টগুলো প্রকাশ করছি। সিক্রেটস ডকুমেন্টগুলো যদি আপনারা পড়েন, বাংলাদেশে ইতিহাস ও গবেষণার জন্য এটা একটা অমূল্য দলিল হিসেবে আসবে।
বাংলাদেশের অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব দিক থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়ার চিত্র অনুষ্ঠানে তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ এখন আর ভিক্ষার ঝুলি নিয়ে ঘুরে বেড়াবার দেশ না। অন্তত এইটুকু দাবি করতে পারি, আওয়ামী লীগ যখন থেকে সরকারে এসেছে, তখন থেকেই বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা এই সময়ে যখন জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি, যখন আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি- ঠিক সেই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হবার মর্যাদা পেয়েছি। তাই বাংলাদেশকে আর কেউ অবহেলার চোখে দেখতে পারবে না।
বাংলা একাডেমির সভাপতি শামসুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংস্কৃতিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. বদরুল আরেফীন এবং জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাজীবুল্লাহ সিরাজী। সম্মিলিত কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত ও সূচনা সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর ভাষা-আন্দোলনের অমর শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ১৯৫২ সালে চীনে শান্তি সম্মেলনে যোগ দিয়ে এসে বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’-এর ইংরেজী ভার্সন ‘নিউ চায়না: শেখ মুজিবুর রহমান’ গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
অমর একুশে বইমেলা-২০২১-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে দশ কীর্তিমান লেখকের হাতে ২০২০ সালের বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে তিন লাখ টাকার চেক, সনদ ও সন্মাননা মেডেল তুলে দেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
পুরস্কারপ্রাপ্ত দশ লেখক হলেন- আত্মজীবনী শাখায় বরেণ্য অভিনেত্রী ফেরদৌসী মজুমদার, কবিতায় কবি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কথাসাহিত্যে ইমতিয়ার শামীম, অনুবাদ বিভাগে সুরেশ রঞ্জন বসাক, নাটকে রবিউল আলম, শিশুসাহিত্যে আনজীর লিটন, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গবেষণায় সাহিদা বেগম, বিজ্ঞানে অপরেশ বন্দোপাধ্যায় এবং ফোকলোর বিভাগে মুহাম্মদ হাবিবুল্লা পাঠান।
বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০২১
এমইউএম/এইচএডি/