ঢাকা: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যেন অনেক আগে থেকেই জানতেন- তার দিন ফুরোবে বাদল সন্ধ্যায়, গহন মেঘের নিবিড় ধারায়। তাইতো মৃত্যুরও অনেক আগেই লিখে গেছেন সে কথা।
আজ শুক্রবার (৬ আগস্ট) বাইশে শ্রাবণ। মহাকালের চেনাপথ ধরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮১তম মহাপ্রয়াণ দিবস আজ।
কবিগুরুর প্রিয় ঋতু ছিল বর্ষা। অজস্র রচনায় বাংলার বর্ষাকে তিনি অনিন্দ্যসৌন্দর্যে ফুটিয়ে তুলেছিলেন। ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে প্রিয় ঋতুতেই নির্বাপিত হয়েছিল কবির জীবনপ্রদীপ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রবির কিরণের মতোই আপন প্রতিভার আলোয় বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে উদ্ভাসিত করেছিলেন। তিনি ছিলেন বাঙালি জাতির দিকনির্দেশক এক আলোকবর্তিকা। বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনের সব কিছুর সঙ্গেই একটু একটু করে মিশে আছে রবীন্দ্রনাথ! গত দেড় শতাব্দী ধরে বাঙালির মানসপটে তার দাপুটে অবস্থান। তাকে বাদ দিয়ে বাঙালির চিন্তার ভূগোল, ভাবের প্রকাশ, রস আস্বাদন- কিছুই যেন সম্ভব না।
রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যকর্ম, সঙ্গীত, জীবনদর্শন, মানবতা, সবকিছুই সত্যিকারের বাঙালি হতে অনুপ্রেরণা জোগায়। তাইতো বাঙালি সত্তায় রবীন্দ্রনাথ সদা জাগ্রত। তাকে পুরোপুরি ধারণ করা ছাড়া বাঙালির পক্ষে সত্যিকার অর্থে বাঙালি হয়ে ওঠা রীতিমতো অসম্ভব।
বাঙালি জীবনে যত ভাব-বৈচিত্র্যের সমারোহ, তার পুরোটাই তিনি ধারণ করেছেন তার গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান, স্মৃতিকথা ও দর্শনে। প্রায় একক প্রতিভায় তিনি বাংলা সাহিত্যকে পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বসাহিত্যের মর্যাদাপূর্ণ আসনে। কাব্য, সংগীত, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ, ভ্রমণ কাহিনী, শিশুতোষ রচনাসহ সাহিত্যের প্রতিটি শাখা তার প্রতিভার স্পর্শে দীপ্তিমান হয়ে উঠেছিল। তার বৈচিত্র্যময় রচনাসম্ভার মহৎ মানবিক আবেদনের মহিমায় হয়ে উঠেছে কালজয়ী। ১৯১৩ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে তিনি লাভ করেন নোবেল পুরস্কার।
বাংলা ভাষার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথের ৫২টি কাব্যগ্রন্থ, ৩৮টি নাটক, ১৩টি উপন্যাস ও ৩৬টি প্রবন্ধ ও অন্যান্য গদ্যসংকলন তার জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়েছে। তার চিঠিপত্র, ভ্রমণ কাহিনীর সংকলনও বাংলা সাহিত্যের আকর গ্রন্থ হিসেবে সমাদৃত। একজন চিত্রশিল্পী হিসেবেও তার অবদান কম নয়। সুর স্রষ্টা, ব্যকরণবিদ, শিল্প সমালোচক, দার্শনিক, সমাজ সংস্কারক, শিক্ষাবিদ হিসেবেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সমানভাবে পরিচিত।
করোনা ভাইরাস মহামারির প্রেক্ষাপটে প্রয়াণদিবসে এবারও কবিগুরুকে ভিন্ন আঙ্গিকে স্মরণ করা হবে। কবিগুরুর মহাপ্রয়াণ দিবসে থাকছে না বরাবরের মতো আয়োজন। কবিগুরুকে বছরের পর বছর তার প্রয়াণদিবসে বিভিন্ন ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন ভিন্ন আয়োজনে স্মরণ করলেও দুই বছর ধরে মহামারি পাল্টে দিয়েছে সবকিছু। সশরীরে বড় কোনো আয়োজন নেই। তবে আজ (শুক্রবার) ভার্চুয়ালি নানা আয়োজনে কবিগুরুকে স্মরণ করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০২১
এইচএমএস/কেএআর