ঢাকা: শারীরিক বিভিন্ন অসুস্থতার মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন সত্তর দশকের কবি হেলাল হাফিজ। দীর্ঘ জীবন পেরিয়ে এসে বেশ ক্লান্ত তার শরীর।
রোববার (৮ আগস্ট) বাংলানিউজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
কবি হেলাল হাফিজ বলেন, কিডনিতে সমস্যা, নিউরোলজিক্যাল সমস্যা। চোখেও ঠিক মতো দেখতে পারি না। ফলে একদমই পড়াশোনা করতে পারি না। আর পড়তে না পারলে নতুন লেখা কীভাবে লিখবো বলো? এখন তো আর স্বভাব কবির বয়স নেই। সুতরাং যা লিখি, সেটা তো বুঝে লিখতে হবে। আরও কিছু কবিতা লিখতে চাই।
দীর্ঘ একাকী জীবন কাটিয়ে আসা কবির কণ্ঠ বেশ ক্লান্ত। বললেন, আমার পুরো শরীরের একটা প্রোপার টেস্ট দরকার। যার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে চাই। আমার পছন্দ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে। অন্য কোনো হাসপাতাল হলেও আপত্তি নেই।
সংসার বিভাগী এ মানুষটি এখন একটি হোস্টেলে দিন কাটাচ্ছেন। বললেন, তুমি তো জানোই আমার কোনো ঘর নেই, বাড়ি নেই। আমি রাজধানীর শাহবাগের একটি হোস্টেলে থাকি। করোনার আগে যখন জাতীয় প্রেসক্লাব খোলা ছিল, তখন তার বিপরীতের একটি হোটেলে থাকতাম।
‘কতক্ষণই আর থাকতাম সেখানে। সারাদিন তো ক্লাবেই থাকতাম। তিন বেলা সেখানেই খেতাম। তোমাদের মতো তরুণরা আসতো, তোমাদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম। শুধু রাতের ঘুমানোর জন্য হোটেলে যেতাম। ’
দেশে করোনা সংক্রমণের পরের দিনগুলোর গল্প শোনালেন ক্লান্ত কণ্ঠে। বললেন, করোনা আসলো, সরকার লকডাউন দিল। প্রেসক্লাব বন্ধ, হোটেল বন্ধ। ছয়তলা হোটেলে আমি একা। বয়-বেয়ারা কেউ নেই। সেই সময় আমার ভাই জোর করে তার বাসায় নিয়ে গেলেন। গত ১ জুলাইয়ে এ হোস্টেলটিতে উঠেছি।
ভাইয়ের বাসার ১৫ মাসের জীবন সম্পর্কে কবি বলেন, টানা ১৫টি মাস আমি সেখানে ছিলাম। এক ঘরে এক চেয়ারে বসে আমার দিনগুলো কেটেছে।
শারীরিক সমস্যার বিষয়ে কবি হেলাল হাফিজ বলেন, বয়স তো কম হয়নি৷ শরীরের বিভিন্ন রোগ বাসা বেধেছে৷ কিছুদিন আগে জ্বর হয়েছিলো৷ যার কারণে করোনা টেস্ট করিয়ে ছিলাম৷ আল্লাহর রহমতে আমার টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে৷
আলাপের শেষ দিকে কবির সঙ্গে দেখা করতে চাইলে তিনি বলেন, না রে ভাই, দেখা করার দরকার নেই। চিকিৎসক আমাকে জনসমাগমের মধ্যে যেতে নিষেধ করেছেন। সুস্থ হই, তারপর আবার দেখা হবে।
১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোণায় জন্মগ্রহণ করেন হেলাল হাফিজ। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় কবি হেলাল হাফিজের তুমুল জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’। ৩৩ বছরের দীর্ঘ বিরতি শেষে ২০১৯ সালের ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত হয় তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’। এর আগে ২০১২ সালে তার কবিতার সংকলন নিয়ে প্রকাশিত হয় ‘কবিতা একাত্তর’।
আরও পড়ুন>>
>> বেদনা ছাড়া শিল্প সম্ভব না: হেলাল হাফিজ
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩১ ঘণ্টা, আগস্ট ০৮, ২০২১
ডিএন/আরআইএস