ঢাকা: সাংস্কৃতিক অচলায়তন ভাঙতে এ খাতের উন্নয়নে আগামী অর্থবছরে জাতীয় বাজেটের এক শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।
বুধবার (১১ মে) বেলা ১২টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দের এ দাবি জানায় সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস।
এসময় গোলাম কুদ্দুস বলেন, সংস্কৃতি কর্মীদের অনুদানের ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে সংস্কৃতি ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি ১৭ টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। প্রস্তাবনাগুলো হলো:
১. জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে এক শতাংশ সংস্কৃতি খাতে বরাদ্দ করতে হবে। এ বরাদ্দের বড় একটি অংশ অবকাঠামোগত উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, সংগঠনের অনুদান, শিল্পীদের সম্মানি এবং বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে।
২। প্রত্যেক উপজেলায় ৫০০ আসনের আধুনিক মিলনায়তন নির্মাণ।
৩। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ স্মরণে রেখে প্রত্যেক জেলায় ‘বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ স্মৃতিভবন নির্মাণ করা। এ ভবনে ৭০০ আসনের আধুনিক মিলনায়তন করতে হবে।
৪। ঢাকা মহানগরীসহ অন্যান্য মহানগরীগুলোর প্রতি ৫ লাখ নাগরিকের জন্য একটি করে আধুনিক মিলনায়তন নির্মাণ করা অত্যাবশ্যক।
৫। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও আমাদের দেশে সরকারি উদ্যোগে একটি যাত্রাপালার প্যান্ডেল নির্মিত হয়নি। রাজধানীসহ প্রত্যেক জেলায় একটি করে স্থায়ী যাত্রাপালার প্যান্ডেল নির্মিত হলে অশ্লীলতার প্রবণতা থেকেও মুক্ত হওয়া যাবে।
৬। প্রত্যেক জেলায় চারুকলা প্রদর্শনীর জন্য আর্ট গ্যালারি এবং স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর জন্য মিনি অডিটরিয়াম নির্মাণ করতে হবে।
৭। অধিকাংশ শিল্পীর অনুদানই মাসিক ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে। জাতীয় পর্যায়ের কয়েকজন শিল্পী সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা পেয়ে থাকেন। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, অসচ্ছল শিল্পীদের মাসিক অনুদানের পরিমাণ বাস্তবতার নিরিখে ১০ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হোক।
৮। সাংস্কৃতিক সংগঠনকে এক লাখ টাকা অনুদান দেওয়া। যাচাই-বাছাই করে অন্তত পাঁচ হাজার সংগঠনকে অনুদানের আওতায় আনা হোক।
৯। মূলধারার সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানকে ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হোক।
১০। দেশের বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় শিগগির সম্ভব ‘সম্প্রীতির জন্য সংস্কৃতি’ মূল প্রতিপাদ্য নিয়ে। দেশব্যাপী ব্যাপক সাংস্কৃতিক জাগরণ গড়ে তুলতে হবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশনগুলোকে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে বিশেষ আর্থিক বরাদ্দ দিতে হবে। কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য এ খাতে চলতি অর্থবছরে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানাই।
১১। উপজেলা পর্যায়ে অবিলম্বে একজন করে শিল্পকলা অফিসার নিয়োগ দেওয়া অত্যাবশ্যক। সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং শিল্পীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের জন্য প্রত্যেক জেলা ও উপজেলায় সঙ্গীত, নাটক, নৃত্য, আবৃত্তি ও চারুকলার স্থায়ী প্রশিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে।
১২। বেতার-টেলিভিশনসহ সব সরকারি প্রতিষ্ঠান ও অনুষ্ঠানে শিল্পী, যন্ত্রী ও কারিগরীকর্মীদের যুগপোযোগী আর্থিক সন্মানি দেওয়া বাঞ্ছনীয়।
১৩। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশনগুলোর স্থায়ী দপ্তর নির্মাণের জন্য মতিঝিলের ক্রীড়া পল্লির অনুরূপ জায়গা বরাদ্দ দিতে হবে।
১৪। বহুমুখী শিক্ষার পরিবর্তে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু অত্যাবশ্যক। মুক্তিযুদ্ধ ও মানবসভ্যতার ইতিহাস, অসাম্প্রদায়িক বিজ্ঞানমনস্ক আধুনিক চিন্তা সম্বলিত লেখা পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শিক্ষাকার্যক্রমে সংস্কৃতিকে অন্তর্ভুক্ত করে প্রতি বছর সাংস্কৃতিক উৎসব ও প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৫। সরকারের বড় বড় সাংস্কৃতিক আয়োজনে জাতীয়ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ফেডারেশনগুলোকে সম্পৃক্ত করা।
১৬। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সরকারিভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন।
১৭। সংস্কৃতিকর্মীদের আবাসনের জন্য ‘সংস্কৃতিপল্লি’ নির্মাণ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন জোটের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আহকাম উল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ও সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬১২ ঘণ্টা, ১১ মে, ২০২২
এনবি/এসএ