ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: একাত্তরে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীকে নিয়ে শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী লিখিত ও সম্পাদিত এবং মানসী কায়েস ও ফারাহ নাজ অনুদিত DR. ALIM A MARTYR OF 1971 বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে প্রধান অতিথি হিসেবে এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী।
আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহরিয়ার কবির, সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী মুকুল।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে বিশ্বের সামনে যেভাবে তুলে ধরা দরকার ছিল সেভাবে তুলে ধরতে পারিনি তার আরেকটি বড় কারণ হলো ভাষা। আমাদের মাতৃভাষায় দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক সাহিত্য রচিত হয়েছে কিন্তু, সেগুলো অনুবাদ হয়নি বা ইংরেজিতে লেখা হয়নি। আজকে যে বইটির মোড়ক উন্মোচন হচ্ছে সেটি অনেক অর্থবহ। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সারা বিশ্বে তুলে ধরতে বইটি ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের মনে হয় নতুন প্রজন্ম হয়তো মুক্তিযুদ্ধ থেকে দূরে সরে গেছে। তাদের নতুন প্রযুক্তি নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু আমাদের সেই ধারণাকে মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চ। আমাদের মুক্তিযু্দ্ধের বিরোধিতাকারীরা দেশে ক্ষমতায় থেকে ইতিহাস বিকৃতি করেছে। দেশের বাইরে গিয়েও তাদের সর্বস্ব দিয়ে, অর্থ দিয়ে লবিস্ট নিয়োগ করে ইতিহাস বিকৃত করছে। এর কারণ আমাদের ইতিহাস নিয়ে ইংরেজি তেমন কোনো বই নেই।
গণহত্যা নিয়ে তিনি বলেন, আমাদের গণহত্যার স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণ হলো আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস বাইরে জানানো হয়নি, যা জানানো হয়েছে তা অসম্পূর্ণ, বিকৃত। আবার কোথাও কোথাও গণহত্যার সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে তা সঠিক নয়। আমরা চেয়েছি বাংলাদেশের গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক। কিন্তু আগে থেকেই সেটি থাকায় নতুন করে এটি সম্ভব নয়। আমরা চাচ্ছি এটিকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হোক।
অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মুদাচ্ছের আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়মিত পরিচর্যা করা ছাড়া তিনি মুক্তিযোদ্ধা থাকেন না। কিন্তু রাজাকাররা সব সময়ই একই থাকে, তাদের কোনো পরিবর্তন হয় না। আমরা যদি মুক্তিযুদ্ধকে ধরে রাখতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের ইংরেজি লিখতে হবে। শহীদ ডা. আলিম চৌধুরীকে নিয়ে গবেষণা হয় তাহলে হয়তো তার প্রতি কিছুটা হলেও বিচার করা হবে।
অধ্যাপক শারফুদ্দীন আহমেদ বলেন, আলবদর বাহিনীর প্রধান আব্দুল মান্নানের হাতে নিহত হন ডা. আব্দুল আলীম চৌধুরী। মান্নানরা ভেবেছিল যুদ্ধে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা নেই তখন তারা বুদ্ধিজীবীদের খুন করে। যারা এ কাজে জড়িত ছিল তাদের অনেকের বিচার করতে পেরেছি। কিন্ত আরো অনেকে রয়ে গেছে। তাদের সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হবে।
শাহরিয়ার কবির বলেন, দেশে-বিদেশে মুক্তিযুদ্ধের গণহত্যাকে অস্বীকার করার একটি প্রচেষ্টা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা নিয়ে বাংলায় অনেক লেখা আছে, কিন্তু ইংরেজিতে অনুদিত লেখা খুব বেশি নেই। এমন পরিপ্রেক্ষিতে শ্যামলী নাসরিন চৌধুরীর এই বইটি বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সংগঠিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, আগস্ট ০২, ২০২২
এসকেবি/এএটি