ফেনী: শরতের সন্ধ্যায় হঠাৎ বৃষ্টি। ঝড়ো হাওয়ায় চারপাশ অন্ধকার।
বাংলা নাটকের বিরল প্রতিভা ড. সেলিম আল দীনের ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষে শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নাট্যাচার্যের বাড়ি ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার সেনেরখিলে আলোচনা সভা ও ‘নোলকজানের পালা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ফেনীর জেলা প্রশাসক আবু সেলিম মাহমুদ-উল হাসান। তিনি বলেন, সেলিম আল দীন এক বিরল প্রতিভা। তিনি একই সঙ্গে এক মানবিক পৃথিবী তৈরির স্বপ্ন দেখেছেন। পাশাপাশি নতুন শিল্পতত্ত্বের মাধ্যমে নিজের সৃজনশৈলিকে তুলে ধরেছেন অনন্য উচ্চতায়।
জেলা প্রশাসক বলেন, রবীন্দ্র-উত্তর বাংলা নাটকে সেলিম আল দীন এক অনন্য সংযোজন। এখানে তাঁর তুলনা কেবল তিনিই। সেলিম আল দীনের সব সাধনা সমর্পিত হয়েছে ঔপনিবেশিকতা জাল ছিন্ন করে বাঙালির নিজস্বতার অনুসন্ধান। এক্ষেত্রে তিনি জীবন ও শিল্পের বিরল বিদ্রোহী। সেলিম আল দীন একজন বিশ্বজনীন ও বিশ্ব মাত্রিক লেখক। তাঁর কীর্তির কথা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। পরে তিনি সেলিম আল দীনের ঘরে তাঁর স্মৃতিবাহী জিনিসপত্র পরিদর্শন করেন।
সেলিম আল দীন কেন্দ্র-ফেনীর সভাপতি বোরহান উদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনীক মাহমুদ, চরদরবেশ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভূট্টো, মঙ্গলকান্দি ইউপির চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বাদল, সেলিম আল দীন কেন্দ্রের সহ-সভাপতি কবি শাবিহ মাহমুদ প্রমুখ।
কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক কুদরাত-ই-খুদা পিকাসোর সঞ্চালনায় পরে চরদরবেশ ইউনিয়নের সেনেরখিলে তাঁর গ্রামের বাড়িতে সায়েক সিদ্দিকীর রচনা ও নির্দেশনায় ‘নোলকজানের পালা’ পরিবেশন করে ময়মনসিংহের নাট্য দল আহির বাংলা। এ সময় ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতিকর্মী, সাংবাদিক ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
সেলিম আল দীন কেন্দ্র ২০১০ সালে সেনেরখিলে দুদিনব্যাপী সেলিম আল দীন মেলা করে। পরে কেন্দ্র প্রস্তাবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ও জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ২০২০ সালে সরকারিভাবে প্রথম মেলা হয়।
প্রসঙ্গত, সেলিম আল দীন ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট ফেনীর সোনাগাজীর সেনেরখিলে জন্মগ্রহণ করেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, একুশে পদক (২০০৭) ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারসহ (১৯৮৪) অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে তিনি ঐতিহ্যবাহী বাংলা নাট্যের বিষয় ও আঙ্গিক নিজ নাট্যে প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলা নাটকের আপন বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন। পাশ্চাত্য শিল্পের সব বিভাজনকে বাঙালির সহস্র বছরের নন্দনতত্ত্বের আলোকে অস্বীকার করে এক নবতর শিল্পরীতি প্রবর্তন করেন তিনি। তাঁর নাটকে নিচুতলার মানুষের সামাজিক নৃতাত্ত্বিক পটে তাদের বহুস্তরিক বাস্তবতাই উঠে আসে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২২
এসএইচডি/আরবি