ঢাকা: সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সম্প্রীতির বার্তা দিতে ঢাকায় আবার আয়োজিত হচ্ছে জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালায় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের আয়োজনে ৪০তম জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মেলন উদ্বোধন করবেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন।
তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।
বুধবার (১২ অক্টোবর) সকালে ধানমন্ডির ছায়ানটে সংবাদ সম্মেলনে এ আয়োজনের বিস্তারিত তুলে ধরেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বুলবুল ইসলাম। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সম্মিলন পরিষদের সহ সভাপতি ডা. সারওয়ার আলী, সোহরাব উদ্দিন; পরিষদের তিনজন সাধারণ সম্পাদক লিলি ইসলাম, শর্মিলা বন্দোপাধ্যায় এবং রোকাইয়া হাসিনা নীলি৷
ডা. সারওয়ার আলী বলেন, সমাজ ও সংস্কৃতির তাৎপর্যপূর্ণ সময়ে আমরা এ সম্মেলনের আয়োজন করছি। সমাজে একদিকে বাড়ছে ধর্মান্ধতা, অন্যদিকে বাড়ছে নারী বিদ্বেষী প্রচারণা। এতে বিনষ্ট হচ্ছে সম্প্রীতির সমাজ৷ এমন দুঃসময়ে সম্প্রীতির সমাজ গঠনের বার্তা দিতে চাই৷ রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে সঙ্গী করে ঐক্যের পুনর্জাগরণ করতে চাই।
বুলবুল ইসলাম বলেন, বিগত কয়েক দশক, বিশেষত; নানা অশুভ ঘটনার ফলে বাঙালি সংস্কৃতির নির্বিঘ্ন বিকাশ এবং মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশের মৌলিক ভাবাদর্শ ঘা খেয়ে চলেছে। স্বাধীন দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীরা যখন আত্মতুষ্ট, তখন ধর্মের উগ্রবাদী ব্যাখ্যা নিয়ে ধূর্ততার সাথে পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হয়েছে সাম্প্রদায়িক সংস্কৃতিবিনাশী শক্তি, তৃণমূল পর্যায়ে কাজ করে চলেছে, প্রভাবিত করছে সমাজের ধর্মবিশ্বাসী সরল মানুষদের। রবীন্দ্রনাথ তার নানা রচনা ও ভাষণে সমাজে মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন, সমাজের নানা ঘাত প্রতিঘাতের ক্ষত সারিয়ে তোলার পরামর্শ রেখেছেন। আমরা বিশ্বাস করি, রবীন্দ্রনাথের কর্ম ও জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্র ও সমাজে মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা এবং বাঙালি সংস্কৃতির নির্বিঘ্ন যাত্রা নিশ্চিত করা সম্ভব।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন দেশের নানা অঞ্চল থেকে সমাগত সাত শতাধিক শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও সংগঠক। ১৪ অক্টোবর উদ্বোধন সকাল সাড়ে নয়টায় বোধনসঙ্গীত 'আপনি অবশ হলি, তবে বল দিবি তুই কারে?'-এর মধ্য দিয়ে। উদ্বোধনী আয়োজনে সভাপতিত্ব করবেন জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলিন পরিষদের নির্বাহী সভাপতি ড. আতিউর রহমান। উদ্বোধনী আয়োজনে পরিবেশিত হবে গীতি- আলেখ্য ‘সম্প্রীতির বাংলাদেশ’, এটি রচনা করেছেন ড. আতিউর রহমান।
শুক্রবার সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে গীতি- আলেখ্য 'তোমায় নতুন করে পাব'৷ মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যেসব গান রণাঙ্গনে গীত হয়েছে, সেসব গান মুয়ে মফিদুল হক এই গীতি- আলেখ্য রচনা করেছেন।
উৎসবের দ্বিতীয় দিন শনিবার বিকেলে ‘সম্প্রীতির সমাজ গঠনে সংস্কৃতির দায়’ শিরোনামে একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে।
সম্মিলন পরিষদের সহ-সভাপতি ড. সারওয়ার আলীর সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন মফিদুল হক, আলোচনায় অংশ নেবেন নাসিরউদ্দীন ইউসুফ ও অধ্যাপক সাধন ঘোষ। উৎসবের সমাপনী অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে রোববার বিকেল সাড়ে ৪টায়৷ সেদিন প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম৷
সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশনে রবীন্দ্রপদক দিয়ে গুণী-সম্মাননা জানানো হবে ২ জন শিল্পী, শিক্ষক ও সংগঠক সর্বপরি সঙ্গীতসাধক নীলোৎপল সাধ্য ও মিতা হককে।
জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত প্রতিযোগিতার কিশোর বিভাগের চূড়ান্ত পর্ব ১৪ অক্টোবর বেলা আড়াইটায়, সাধারণ বিভাগের ১৫ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায়। তিন দিনেরই সান্ধ্য-অধিবেশন সাজানো হয়েছে গুণীজনের সুবচন রবিরশ্মি, গীতি আলেখ্য, আবৃত্তি, পাঠ, নৃত্য ও গান দিয়ে। বার্ষিক অধিবেশন উপলক্ষে যথারীতি প্রকাশিত হচ্ছে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টির নানা দিক নিয়ে বিশিষ্টজনদের লেখা প্রবন্ধের সংকলন ‘সঙ্গীত সংস্কৃতি’।
১৯৭৯ সালে শিল্পী জাহিদুর রহিমের প্রয়াণ দিবসে কাজ শুরু হয়েছিল ‘জাহিদুর রহিম স্মৃতি পরিষদ’র। দেশব্যাপী বৃহত্তর পরিসরে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার লক্ষ্য নিয়ে পরবর্তীকালে বাঙালির চিরকালের সঙ্গী রবীন্দ্রনাথের নাম যুক্ত করে সংগঠনের নাম করা হয় জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৩, ২০২২
এইচএমএস/এএটি