ঢাকা: প্রায় ১১ মাস পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ করে ২০২২ সালের ৭ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ই-গেট কার্যক্রম উদ্বোধন হয়। এ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
উদ্বোধনের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি নাগরিককে ই-পাসপোর্ট দিয়েছে ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মাসে প্রায় গড়ে ৫ লাখ যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। ১ কোটি ই-পাসপোর্টের বিপরীতে মাত্র ১ লাখ ১৫ হাজার যাত্রী ই-গেট ব্যবহার করেছেন। সে হিসেবে মোট যাত্রীর ২ শতাংশ ই-গেট ব্যবহার করেছেন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিমানবন্দরে স্থাপিত ২৭টি ই-গেট আমদানি করা হয়েছে জার্মানি থেকে। দাবি করা হয়, এসব গেট অত্যাধুনিক। কয়েকদিন ব্যবহারের পর শুরু হয় ই-পাসপোর্টের সঙ্গে ই-গেটের সার্ভারের সংযুক্তি জটিলতা। উদ্বোধনের পর থেকে মাঝে-মধ্যে গেটগুলো বন্ধ হতে শুরু করে। ই-পাসপোর্টধারী বহু যাত্রী বিমানবন্দরে বহির্গমনের সময় ই-গেট বন্ধ দেখতে পান। ফলে গতানুগতিক পদ্ধতিতে ইমিগ্রেশন শেষ করে তাদের বিমানে উঠতে হয়।
জানা গেছে, ই-পাসপোর্টধারী একজন যাত্রীকে ই-গেটের মাধ্যমে ইমিগ্রেশনে শেষ করতে সময় লাগে মাত্র ১৮ সেকেন্ড। ভেরিফিকেশন শেষে ই-গেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যায়। তার আগে ই-পাসপোর্টধারীকে তার ডিজিটাল ছবিযুক্ত তথ্যবিবরণী ই-গেটের মনিটরে স্পর্শ করতে হয়। এরপর ১০ থেকে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে ই-গেটের কাচের দরজা খুলে যাবে। সেটি দিয়ে প্রবেশের পর স্ক্যানিং গেটের সামনে দাঁড়ালে ৫ থেকে ৬ সেকেন্ডের মধ্যে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ই-পাসপোর্টের যাবতীয় তথ্য ভেরিফাইড (শনাক্ত) হবে। তারপর ইমিগ্রেশনের মূল গেট খুলে গেলে সব কার্যক্রম শেষ।
কিন্তু বেশ কয়েকদিন ধরে বন্ধ থাকায় এসব গেটের সুবিধা নিতে পারছেন না ই-পাসপোর্টধারী বিদেশ গমনেচ্ছুরা।
মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বিমানবন্দরে সরেজমিনে ঘুরে ই-গেট নিয়ে যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করা হয়। দেখা গেছে, যাত্রীদের অনেকেই এই গেটের ব্যবহার সম্পর্কে জানেন না। যারা জানেন, তারাও ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারছেন না।
দুবাই থেকে দেশে ফিরেছেন রাকিবুল ইসলাম। তার সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। তার কাছে ই-পাসপোর্ট আছে। কিন্তু, তিনি ই-গেট ব্যবহার করেননি। এমনকি এ সম্পর্কে জানেনও না।
বিমানবন্দর এলাকায় কথা হয় আরেক যাত্রী শাহজাহান খন্দকারের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমি ই-গেট ব্যবহার করতে চেয়েছিলাম আগে কয়েকবার। তবে, সার্ভার জটিলতার জন্য ব্যবহার করতে পারিনি।
এ সংক্রান্ত প্রশ্নে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন শাখার এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, সার্ভার জটিলতাই সব সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু। এ কারণে ই-গেট কার্যক্রম চালানো সম্ভব হয় না। তাই গতানুগতিক নিয়মে আমরা ইমিগ্রেশন শেষ করি। সম্পূর্ণরূপে ই-গেট চালু হলে ইমিগ্রেশনের চাপ কমবে; যাত্রীদেরও অনেক সময় সাশ্রয় হবে। নতুন করে এ কার্যক্রম শুরু এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানবন্দরের ই-গেট প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাদাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আমি ছুটিতে আছি। যতটুকু জানি, ই-গেট সচল আছে। আমি সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্তদের সঙ্গে কথা বলে খোঁজ নেবো।
প্রসঙ্গত, পৃথিবীর ই-পাসপোর্টধারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৯তম।
বাংলাদেশ সময়: ১২০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০২৪
এমকে/এফআর