ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

শাহজালাল থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ফ্লাইং ক্লাব

ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৫ ঘণ্টা, জুন ৭, ২০১৪
শাহজালাল থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে ফ্লাইং ক্লাব

ঢাকা: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিতাড়িত হচ্ছে দেশের ৬৫ বছরের পুরনো বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি। বৈমানিক তৈরির কারিগর ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানটিকে আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়তে হবে।

প্রতিষ্ঠানটি ফ্লাইং ক্লাব নামেই অধিক পরিচিত।

বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। ১৯৪৮ সালে ইস্ট পাকিস্তান ফ্লাইং ক্লাব হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল বর্তমান বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এটি বাংলাদেশ ফ্লাইং ক্লাব নামে পরিচালিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালে এর নাম বদলে করা হয় বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি অ্যান্ড জেনারেল এভিয়েশন।

শুধু বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমী নয়, বেসরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত আরো কয়েকটি ফ্লাইং একাডেমিকেও ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শাহজালাল বিমানবন্দর ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে; আরিরাং, মেঘনা এভিয়েশন, সাউথ ইস্ট এভিয়েশন ও এয়ার বাংলা। এর বাইরে হেলিকপ্টার পরিচালনাকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকেও একইভাবে বিমানবন্দর ছাড়তে হবে।

ফ্লাইং একাডেমিসহ বেসরকারি একাডেমি মিলিয়ে বিমানবন্দরের দক্ষিণপ্রান্তে ৫টি হ্যাঙ্গার রয়েছে। একাডেমীগুলোকে এখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর সবগুলো হ্যাঙ্গারই ভেঙে ফেলা হবে। এই স্থানেই নির্মিত হবে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল।

এ ধরনের সংক্ষিপ্ত নোটিশে এসব প্রতিষ্ঠান বিমানবন্দর ছাড়তে বাধ্য কিনা জানতে চাইলে বেবিচকের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী আমরা যেকোনো সময় তাদের এখান থেকে সরিয়ে দিতে পারি। সুতরাং এ বিষয়টি নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।

রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের অবসরপ্রাপ্ত বৈমানিকেরা বিনা বেতনে এখানে ক্লাস নেন। যে কারণে বেসরকারি যেকোনো ট্রেনিং একাডেমি থেকে অনেক কম টাকায় এখান থেকে বৈমানিক তৈরি করা সম্ভব হয়। পাকিস্তান আমল থেকেই দেশের শতভাগ বৈমানিক এই একাডেমি থেকেই সরবরাহ করা হতো। বাংলাদেশ হওয়ার পরও এই ধারা অব্যাহত থাকে। সাম্প্রতিককালে বেসরকারি ট্রেনিং একাডেমি থেকে কিছু বৈমানিক সরবরাহ করা হচ্ছে।

ফ্লাইং একাডেমির নিজস্ব হ্যাঙ্গারে ছোট আকারের ১৫টি উড়োজাহাজ রাখা যায়। এই হ্যাঙ্গারে উড়োজাহাজ রাখা বাবদ পাওয়া ভাড়া এবং তাদের নিজস্ব তিনটি অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া দিয়েই প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হয়। এর বাইরে একাডেমি উড্ডয়ন এবং রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ বেবিচকের কাছ থেকে ভর্তুকি পেয়ে থাকে।

এ ব্যাপারে ফ্লাইং একাডেমির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির সদস্য ক্যাপ্টেন শাহাব উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘যদি আমাদের বিকল্প জায়গা দেওয়া হয় তাহলে আমরা এই স্থান ছেড়ে দেবো। ’

এক্ষেত্রে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দর তাদের জন্য উপযুক্ত বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, পুরাতন বিমানবন্দরের বেগম রোকেয়া সরণি প্রান্তে এখনো খালি জায়গা রয়েছে। বেবিচক চাইলে এখান থেকে একাডেমির জন্য জায়গা বরাদ্দ দিতে পারে।

শাহজালালে দ্বিতীয় রানওয়ে ও তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে বিমানবন্দরের অভিভাবক বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ক্রমবর্ধমান যাত্রীদের চাপ সামলাতে নির্মিত হচ্ছে দ্বিতীয় রানওয়ে ও তৃতীয় টার্মিনাল নির্মিত হতে যাচ্ছে।

বর্তমান টার্মিনাল-১ ও টার্মিনাল-২ ৮টি বোর্ডিং ব্রিজ রয়েছে। আর তৃতীয় টার্মিনালে বোর্ডিং ব্রিজ থাকবে ৩২টি। এর ফলে তৃতীয় টার্মিনালে এক সঙ্গে ৩২টি উড়োজাহাজ যাত্রী ওঠাতে ও নামাতে পারবে।

এ লক্ষ্যে বেবিচক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কাজ প্রায় সম্পন্ন করেছে। এই প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার দেড় বছরের মধ্যে টার্মিনাল ও রানওয়ে নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

এ প্রসঙ্গে বেবিচকের পরিচালক (এটিএস) আজাদ জহিরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, যাত্রীদের স্বার্থেই এই বিশাল উন্নয়ন কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ফ্লাইং একাডেমী যেদিকটায় ওই দিকেই নতুন টার্মিনাল নির্মিত হবে। আর এ কারণেই এদের ওই স্থান ছাড়তে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৮ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।