চট্টগ্রাম: ইমারজেন্সি গেটের পাশের সিটের যাত্রীকে বিনয়ের সঙ্গে বলে নিলেন, ‘জরুরি কোনো্ অবস্থায় আপনাকে একটু সহযোগিতা করতে হবে’। যাত্রীও সবিনয়ে সম্মত হলেন।
তবে আকাশপথ ভ্রমণে এমন বিনয়ের প্রকাশ খুব কমই দেখা যায়। ইউএস বাংলা এয়ারের কেবিন ক্রুর এই বিনয় মুগ্ধ করে দেয়ার মতই।
বিপদ তো আসতেই পারে আর তখন ইমারজেন্সি গেটের দরকার হবেই। কিন্তু আগে থেকে এমন করে বলে রাখার রেওয়াজ খুব একটা দেখা যায় না। সুন্দর ও সতর্ক যাত্রী সেবার এ এক উদাহরণ।
শুক্রবার সকালে ইউএস বাংলা এয়ারের ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ (টার্বো প্রোপ) প্লেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে আকাশে ওড়ার আগে থেকেই তাদের সেবার ভিন্ন ভিন্ন দিকগুলো চোখে পড়ছিলো।
অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরে সকাল সাতটা ৪০ মিনিটের ফ্লাইটে ইউএস বাংলার কাউন্টারে বিনয়ী কর্মীদের নীরবে কাজ করে যাওয়া আর সকল যাত্রীর বোর্ডিং পাস নিশ্চিত করা ছিলো সম্পূর্ণ ঝামেলাহীন।
ভেতরে ঢুকে অপেক্ষার সময়টিও ছিলো কফির আপ্যায়নে চমৎকার।
সাতটা ৪০ মিনিটের ফ্লাইট যথাসময়ে ছাড়ার সব ধরনের প্রস্তুতি ছিলো। একে একে যাত্রীরা বিমানবন্দরে পৌঁছে যান, বলা চলে সবাইই সময়মত। এরপর প্লেন ছাড়ার আগে ইউএস বাংলার যাত্রীদের যখন ডাক পড়ে তখন চমৎকারভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই ঢুকে পড়েন।
টারমার্ক থেকে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস আর বড় একটি বাসে করে যাত্রীদের নিয়ে যাওয়া হয় রানওয়ের দিকে গাড়ির ভেতরেও ভালো লাগার উপকরণ হিসেবে ইউএস বাংলা থিম মিউজিক বাজতেই থাকে।
ওয়াকিটকির মতই গাড়ির ভেতরের সাউন্ড সিস্টেমে আসতে থাকে নির্দেশনা। গাড়ি চালক সে নির্দেশনা মতই শান্ত, দ্রুত গতিতে প্লেনের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে নামার সাথে সাথেই চোখে পড়ে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ইউএস বাংলা এয়ারের নিরাপত্তা কর্মীদের তৎপরতা। সব মিলিয়ে বাইরের সেবাগুলো যখন এমনই ভেতরের সেবা তার চেয়ে আরও গোছানো আরও সন্তুষ্টির হবে সে তো ভেবেই নেয়া যায়।
হাসি মাখা মুখে গেটে দাঁড়ানো কেবিন ক্রু শারমীনের একে একে যাত্রীদের যার যার আসনের নির্দেশনা দেখিয়ে দেয়ার সাধারণ পদ্ধতির মধ্যেও ছিলো আন্তরিকতার চূড়ান্ত প্রকাশ।
যাত্রীরা যখন বসে পড়লেন যে যার আসনে, তখন সিটবেল্ট বাঁধা সহ অন্যান্য নির্দেশনাগুলো সব ফ্লাইটে যেমন থাকে এখানেও তার ব্যত্যয় ছিলো না। তবে ভিন্ন রকম মনে হলো ইউএস বাংলার ভিনদেশী কেবিন ক্রুর ইমারজেন্সি গেট নিয়ে পূর্ব সতর্কতার অংশটুকু।
৭৮ আসনের এই ড্যাশ-৮ প্লেনটি ধীরে ধীরে ভরে গেল। কত জন যাত্রী সে কথা জানতে চাইলে কেবিন ক্রু শারমীন বললেন ‘মাশআল্লাহ, সত্তর জন’। আরও চারজনের টিকিট বিক্রি হয়েছিলো যাত্রীরা আসেননি। এরপর ওড়ার পালা। ঠিক সাতটা ৪০ মিনিটেই ফ্লাইটের চাকা ঘুরতে শুরু করে। আর দশ থেকে পনের হাজার ফুট উচ্চতায় তুলে নিতে খুব একটা সময় নিলেন না ফ্লাইটের ক্যাপটেন। সিটবেল্ট খোলার সংকেত দেখালেন ক্যাপটেন। তবে স্বল্প সময়ের এই ফ্লাইটে সিটবেল্ট না খোলার একটি নির্দেশনা সব যাত্রীরই সিটের সামনে দেয়া রয়েছে। যাত্রীরা সিটবেল্ট না খুললেও উঠে পড়লেন কেবিন ক্রু। দ্রুতই যাত্রীদের আসনে আসনে পৌঁছে দিলেন খাবারের বাক্স ও পানি। ব্যতিক্রমী দিকটি হচ্ছে খাবারের ক্যাটারার ইউএস বাংলা নিজেই। আর তুষ্টির দিক হচ্ছে একটি প্রমাণ সাইজের স্যান্ডউইচ, মুখে দিলেই বোঝা যাবে খাবারটি মান সম্মত। আর একটি জুসি আপেল, বোঝা গেল যাত্রীদের জন্য এই খাদ্য প্রস্তুত ও বাছাইয়েও ইউএস বাংলা বিশেষ সতর্ক থাকে।
এরপর মাত্র পঁয়ত্রিশ মিনিটের সাবলীল আকাশ যাত্রা। হেমন্তের ঢাকার আকাশে সাদা মেঘের ভেলা থাকলেও চট্টগ্রামের আকাশে বৃষ্টিভরা মেঘ তখনও ঝড়ার অপেক্ষায়। ক্যাপটেন ঘোষণা করলেন অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই আমরা চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবতরণ করতে যাচ্ছি।
মেঘলা আকাশ থাকলেও স্বাভাবিকভাবেই ফ্লাইট নিচে নামতে শুরু করলো। পেছনের চাকা বৈমানিকের দক্ষতার প্রমাণ রেখে রানওয়ে ছুলো সামান্য ঝাঁকুনিতে।
এরপর ফ্লাইট থামলো যাত্রীরা একে একে নেমে বিমান বন্দরের দিকে এগুতে থাকলেন। কনভেয়ার বেল্টে লাগেজ পৌঁছে গেল মিনিট পাঁচেকের আগেই। সব মিলিয়ে হেমন্তের শুভ্র সকালে এ ছিলো এক শান্তিময় যাত্রা।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৩০, ২০১৫
আরআই
** নাক চেপে তূর্ণায়!