সৈয়দপুর (নীলফামারি) থেকে: সোয়া নয়টার ফ্লাইট ছাড়লো ২০ মিনিট পর। ইঞ্জিনের শব্দে কানে তালা লাগার দশা।
এই হচ্ছে আজ সোমবার সকালে ঢাকা থেকে সৈয়দপুরে নভোএয়ারের ভিকিউ ৯৬১ ফ্লাইটে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা।
নাহ! শুধু লোকাল বাসের মতো সেবাহীনতা নয়, মাঝ আকাশে এয়ারক্র্যাফটের তীব্র ঝাঁকুনিতে ভয় পান যাত্রীদের অনেকেই। শিশুরা কান্না জুড়ে দেয়। মূলত ছোট হালকা ধরনের এই এয়ারক্র্যাফট মেঘের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়াতেই এ ধরনের ঝাঁকুনি দেয় বলে জানান একজন যাত্রী। রুহুল নামে এ যাত্রী নিয়মিত প্লেনে ভ্রমণ করেন দেশে-বিদেশে।
তিনি বলেন, মূলত হালকা বিমানগুলো মেঘের যতো বেশি উপর দিয়ে ওড়ে, ততো ঝাঁকুনি কম লাগে। এক্ষেত্রে বৈমানিকের দক্ষতার প্রশ্ন তুলতে হয়।
নভোএয়ারে হয়রানির শুরু ঢাকায় অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকেই।
গত ১৭ মার্চ থেকে ঢাকা-সৈয়দপুর রুটে যাত্রা শুরু করে নভোএয়ার। তবে বিমানবন্দরে নভোএয়ারের বুথ থেকে শুরু করে চেক-ইনেও রয়েছে অব্যবস্থাপনার ছাপ। সকাল সাড়ে ১০ টায় সৈয়দপুর বিমানবন্দরে নেমে দেখা যায়, একজন যাত্রীর লাগেজে ট্যাগ থাকলেও বোর্ডিং কার্ডে নেই। ফলে লাগেজ হস্তান্তরে সমস্যা হচ্ছে। প্রায় আধাঘণ্টা অপেক্ষা করে লাগেজ বুঝে পান তিনি।
ভিকিউ ৯৬১ ফ্লাইটে উঠতে যাত্রীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দিচ্ছে না কেউ। সবচেয়ে অবাক করার বিষয়, প্লেন টেক অফ করার আগে নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার ডেমো প্রদর্শন করলেন না কেবিন ক্রুরা। এমনকি যাত্রীরা সিটবেল্ট বেঁধেছেন কিনা, সেটিও একবারের জন্যেও চেক করা হলো না। এসব প্রস্তুতি ব্যতিরেকেই মাটি থেকে আকাশে উড়ে প্লেন।
ঢাকায় প্লেনে লাগেজ ওঠানো এবং সৈয়দপুরে নামানো দু'ক্ষেত্রেই অযত্নের ছাপ। ট্রাকে বস্তা ওঠানোর মতোই লাগেজ ওঠা-নামা চলে এখানে। সৈয়দপুরে দেখা গেলো, প্লেন থামার পরেও যাত্রীদের বেশ কিছু সময় বসিয়ে রাখা হলো। কারণ বাইরে তখনও দড়ি দিয়ে মালপত্র নামানোর সীমানা নির্ধারণ করা হয়নি। যাত্রীদের অভিযোগ-এভাবে চলতে থাকলে, খুব দ্রুত নভোএয়ারকে বন্ধ ঘোষণা করতে হবে।
দুজন কেবিন ক্রু ছিলেন নভোএয়ারের এ ফ্লাইটে। প্লেন আকাশে ওড়ার কিছুক্ষণ পরই দেয়া হয় সকালের খাবার। তবে ঠাণ্ডা ডিম আর বন রুটি খেতে কষ্ট হয় যাত্রীদের। বেশিরভাগই নষ্ট হয় খাবার। আর এয়ারক্র্যাফটে স্থান স্বল্পতায় এই পুরো সময় কোন যাত্রীর পক্ষে ওয়াশরুমে যাওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে অনেক যাত্রীই অস্বস্তি বোধ করেন।
প্লেনের ইঞ্জিন চালু হওয়ার পর থেকেই কান ফাটানো আওয়াজ শুরু। এতে যাত্রীরা, বিশেষত শিশুরা ভয় পেয়ে যায়। বাবা-মায়েরা শিশুদের কানে হাত দিয়ে রাখেন। শোয়েব নামে এক যাত্রী বলেন, প্রথমবার নভোএয়ারে ভ্রমণ করলাম। ফ্লাইটে এমন আওয়াজে বাচ্চা ভয়ে কান্না শুরু করলো। এমন জানলে নভোএয়ারে আসতাম না।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৬
এমএন/জেডএম