ঢাকা: সিবিএ’র কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদ। তাই দায়িত্ব নেয়ার একশ’ দিনেও পে-স্কেল ঘোষণা ছাড়া কোন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্বান্ত নিতে পারেনি।
কিন্তু এক বছরের বকেয়া-সহ নতুন পে-স্কেলে বেতন ভাতাদি পরিশোধ করতে কমপক্ষে একশ’ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় করতে হবে বিমানকে। যা লাভের মুখ দেখা বিমানকে ফের লোকসানের মুখে ঠেলে দেবে। রোববারের পর্ষদ বৈঠকেও এমন উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছেন খোদ অর্থ সচিবসহ কজন আমলা।
পর্ষদ সূত্রে জানা যায়- এয়ার মার্শাল ইনামুল বারীর নেতৃত্বে বর্তমান পর্ষদ গত এপ্রিলের শুরুতেই দায়িত্ব গহণের পর বিমানের প্রাণ চাঞ্চল্য দেখা দিলেও দুর্নীতির দায়ে বরখাস্তকৃত মহা-ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে ফের পুনর্বহালের উদ্যোগ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছে বর্তমান পর্ষদ। গ্রাউন্ড সার্ভিসের শত শত কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনায় আমিনুলের দুর্নীতির চিত্র দেখে বিস্ময় প্রকাশ করে তাৎক্ষণিক তাকে বরখাস্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন সাবেক পর্ষদ সদস্য ও প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ। একইভাবে প্রকৌশল শাখার দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ওয়াশিকুর রহমানকেও বরখাস্ত করা হয়েছিলো।
কিন্তু এ ধরনের দুর্নীতিবাজদের পুনর্বহাল করার ফাইল এখন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের টেবিলে। এ বিষয়টি যাতে পর্ষদে না পাঠানো হয়- সেজন্য গোপনে তড়িঘড়ি ফাইল অনুমোদন দেয়ার পাঁয়তারা চলছে। যদিও পরিচালক প্রশাসন বেলায়েত ওই ফাইলে সম্মতিসূচক কোন সুপারিশ করেননি বলে জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে বিমান বহরে নিজস্ব ব্র্যান্ড নিউ সুপরিসর ৪টি ও লিজের ২টি মিলিয়ে মোট ৬টি ৭৭৭ ও ২টি ৭৩৭ উড়োজাহাজ রয়েছে। যাত্রীর অভাবে এসব উড়োজাহাজ অলস বসে থাকার পরও আবারও দুটো ৭৩৭ উড়োজাহাজ লিজে নেয়ার দরপত্র ডাকা হয়েছে। একই ভাবে নিজস্ব উড়োজাহাজ থাকার পরও হজের অযুহাতে নেয়া হয়েছে একটি ৭৪৭ উড়োজাহাজ। অথচ গত বছর বিমান নিজস্ব উড়োজাহাজ দিয়ে ৫৫ হাজার হাজী বহন করে লাভের মুখ দেখেছিল।
এদিকে বর্তমান পর্ষদের ওপর জেঁকে বসেছে সিবিএ। পর্ষদের কাজেও হস্তক্ষেপ করছে সিবিএ। তার বড় উদাহরণ, পে স্কেল সাব-কমিটির সম্মতি না থাকার পরও গত ঈদুল ফিতরের আগে সর্বশেষ ডাকা পর্ষদ বৈঠকের পর মশিকুরের নেতৃত্বে সিবিএ ঘেরাও করে ফেলে চেয়ারম্যানকে। ওই দিন বৈঠকে অর্থ-সচিবের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়- পে-স্কেল নিয়ে পরে চিন্তাভাবনা করে সিদ্বান্ত নেয়া হবে। এ খবর বৈঠকে বসেই মোবাইলেই এসএমএস করে মশিকুরকে জানিয়ে দেন বিমান ম্যানেজমেন্টের একজন কর্তাব্যক্তি।
এতে মশিকুর বাহিনী দলবল নিয়ে বলাকা অভিমুখে রওনা হবার খবর রটে গেলে তড়িঘড়ি বলাকার পেছন দিয়ে গাড়িতে ওঠে বৈঠক ত্যাগ করেন পে-স্কেল সাব কমিটির সভাপতি অর্থসচিবসহ অপর সদস্যরা। কিন্তু চেয়ারম্যান ইনামুল বারী নিজ অফিসেই বসে থাকায় মশিকুর বাহিনী চাপের মুখে বেতনের ৭৫ শতাংশ ঈদের আগেই কর্মকর্তা ও কমর্চারীদের জন্য মঞ্জুর করিয়ে নেন। এ ঘটনায় পর্ষদের অন্যান্য সদস্যদের মাঝেও চরম ক্ষোভের সঞ্চার করে। প্রশ্ন ওঠছে-সিবিএ-এর কাছে কেন জিম্মি হলেন চেয়ারম্যান।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, সিবিএ নেতা সভাপতি মশিকুর রহমানের ছবি আর চেয়ারম্যান এয়ারমার্শাল ইনামুল বারির ছবি সম্বলিত পোস্টারে বলাকা ছেয়ে গেছে। মশিকুর একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারি হয়ে কিভাবে পর্ষদ প্রধানের সঙ্গে এমন সখ্য গড়েন তা নিয়েও কানাঘুষা চলছে বিমান কর্মচারীদের মধ্যে।
চেয়ারম্যান প্রতিদিন যখন অফিসে ঢোকেন-তখন মশিকুরকে দেখা যায় তার দলবল নিয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে। আবার যখন অফিস থেকে বিদায় নেন- তখনও দেখা যায় তাকে উপর থেকে প্রটোকল দিয়ে নিচে গাড়িতে তুলে বিদায় জানানো হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে চেয়ারম্যানের কর্মকাণ্ড নিয়েও।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৮ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৬
জেডএম/