ঢাকা: ১৯৮২ সালে মাত্র ৩টি উড়োজাহাজের পার্কিং সুবিধা নিয়ে যাত্রা শুরু করে বর্তমান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। সময় গড়িয়ে তিনদশক পার হলেও চাহিদা অনুযায়ী দেশের গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান এ বিমানবন্দরের পার্কিং সুবিধা বাড়েনি।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আকাশ পথে ভ্রমণ। বাড়ছে উড়োজাহাজের সংখ্যাও। বর্তমানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১৪টি নিজস্ব এয়ারক্রাফটের পাশাপাশি চারটি লিজ নেওয়া বিমান রয়েছে। বাংলাদেশে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে মোট ৩৭টি এয়ারক্রাফট রয়েছে। কিন্তু এগুলোর জন্যও নেই পর্যাপ্ত পার্কিংয় সুবিধা। ফলে খারাপ আবহাওয়ায় অনেক বিমান যত্রতত্রভাবে রাখা হচ্ছে বিমানবন্দরে।
তবে আশার কথা হলো এসব সমস্যা বিবেচনা করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের এয়ারক্রাফট (উড়োজাহাজ) পার্কিং সুবিধা বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আর এ সংকট উত্তরণে আরও ২০টা উড়োজাহাজ পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
বর্তমানে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি বেসরকারি তিনটি এয়ারলাইন্স সংস্থা ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক রুটে নিজেদের অবস্থান মজবুত করেছে। ফলে পার্কিং সংকট দেখা দিয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দরে।
এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিমান ও সিএ উইং) আবুল হাসনাত মো. জিয়াউল হক বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু এসব উড়োজাহাজগুলো পার্কিংয়ের তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই। তাই আরও ২০টি উড়োজাহাজ পার্কিং সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে জেনারেল এভিয়েশন হ্যাঙ্গার ও হ্যাঙ্গার এপ্রোন নির্মাণ করা হবে। যাতে করে সরকারি-বেসরকারি উড়োজাহাজগুলোর পার্কিংয়ের সমস্যা না হয়।
এছাড়া ভবিষ্যতে উড়োজাহাজের সংখ্যা আরও বাড়বে ফলে এসব কথা মাথায় রেখে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে বলেও তিনি জানান।
সম্প্রতি তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করেছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। এরই মধ্যে দু’টি বোয়িং যুক্ত হয়েছে তাদের বহরে, যোগ হবে আরও ৪টি এয়ারক্র্যাফট। এছাড়া অন্যান্য এয়ারলাইন কোম্পানিও যোগ করছে নতুন নতুন এয়ারক্রাফট। পর্যায়ক্রমে উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়লেও হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পার্কিং সুবিধা বাড়েনি।
এদিকে বিশ্বজুড়ে যখন বাড়ছে উড়োজাহাজের ব্যবহার। তখন বাংলাদেশে দেশি-বিদেশি সবমিলিয়ে রয়েছে ৩৭টি এয়ারলাইন্স কোম্পানি। দেশীয় কোম্পানির মধ্যে রয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভো এয়ারওয়েজ, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স।
এছাড়া বন্ধ হয়ে রয়েছে ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। ফলে এটি স্থায়ীভাবে আবাসন গড়েছে বিমানবন্দরে। এসব কারণে ঘাটতি দেখা দিয়েছে পার্কিং সুবিধার।
এছাড়া মালয়েশিয়া, থাই এয়ার, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, সৌদিয়া, কুয়েত, কাতার, ইতিহাদ, এমিরেটস, গালফ এয়ার এবং ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের আনাগোনা রয়েছে শাহজালাল বিমানবন্দরে।
এজন্য বিমানবন্দরের ফায়ার স্টেশনের উত্তর দিকে অ্যাপ্রোন নির্মাণ করে অতিরিক্ত আরও ২০টি উড়োজাহাজ পার্কিংয়ের জন্য স্থান নির্বাচন করা হয়েছে।
খারাপ আবহাওয়া থেকে এয়ারক্রাফটগুলোকে রক্ষার্থে কভার্ড পার্কিং ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া দৈনন্দিন সার্ভিসিংয়ের পাশাপাশি ছোট খাটো মেরামতের ফ্যাসিলিটি বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিবছর ৬০ লাখ যাত্রী উঠানামা করছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে। প্রতিনিয়তই যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। ২০১৮ সালে এ বিমানবন্দরে যাত্রী উঠা-নামার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮০ লাখ।
এর পাশাপাশি পোশাকসহ নানা পণ্য পরিবহনে কার্গো ভলিউমের সংখ্যাও আন্তর্জাতিক রুটে বাড়ছে। বর্তমানে প্রতিবছর বিমানবন্দরে কার্গো পরিবহন ফ্যাসিলিটি দুই লাখ টন। কিন্তু কার্গো পরিবহন করা হচ্ছে ২ দশমিক ৫৯ লাখ টন। এ লক্ষ্যে প্রকল্পের আওতায় কার্গো পরিবহন ফ্যাসিলিটিও বৃদ্ধি করা হবে।
৪৩৬ কোটি টাকা ব্যয় করে বিমানবন্দরের পার্কিং সুবিধা বৃদ্ধিসহ কার্গো পরিবহন ফ্যাসিলিটি বাড়ানো হবে। চলতি সময় থেকে শুরু করে আগস্ট ২০১৭ সালের মধ্যেই ২০টি উড়োজাহাজের জন্য অতিরিক্ত পার্কিং সুবিধা বৃদ্ধি করতে যাচ্ছে মন্ত্রণালয়।
অন্যদিকে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, দৈনিক বিমানবন্দরে ২৯ থেকে ৩০টা উড়োজাহাজ পার্কিং সুবিধা রয়েছে। মাত্র ৩টি পার্কিং নিয়ে ১৯৮২ সালে বিমান বন্দরের যাত্রা শুরু করে।
বেবিচক সূত্র জানায়, বর্তমানে দৈনিক সরকারি-বেসরকারি,সামরিক ও বেসামরিক মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৩৫-২৪০টি উড়োজাহাজ উড্ডয়ন ও অবতরণ করে। সামনে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। তবে সেইভাবে বাড়েনি পার্কিং সুবিধা।
বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) সদস্য (অপারেশন্স অ্যান্ড প্ল্যানিং) এয়ার কমডোর মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানউজকে বলেন, বর্তমানে যেইভাবে সরকারি-বেসরকারি মিলে উড়োজাহাজের সংখ্যা বাড়ছে। সেইভাবে পার্কিং সুবিধা বাড়েনি। তাই বিমানবন্দরের ভেতরে আমরা পার্কিং এরিয়া আরও বাড়াবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৭১১ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৬
এমআইএস/এসএইচ