পুলিশের প্রতিবেদন থেকে অব্যাহতি পাওয়ার পর এখন কী হবে তাদের দায়িত্ব, তা নিয়ে সন্দিহান খোদ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ও। যদিও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলছেন, অভিযোগ থেকে খালাস পাওয়া কর্মকর্তাদের বিষয়ে আদালতই এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন।
যোগাযোগ করলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী মেনন বাংলানিউজকে বলেন, অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী উড়োজাহাজে যে যান্ত্রিক ত্রুটি ঘটেছিলো, এটাতো মিথ্যা নয়। আর যন্ত্রে ত্রুটি ধরা পড়া বা বিভ্রাট ঘটলেই যে তা ষড়যন্ত্র নয়, তাও তদন্তে উঠে এসেছে। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে আমরা তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিলাম। তারাও তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছিলো। সেখানে কিছু দায়িত্বে গাফিলতি ধরা পড়ে। গাফিলতির ঘটনা যেহেতু প্রমাণিত এবং তা রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর বহনকারী উড়োজাহাজের ক্ষেত্রে ঘটেছে, তাই তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উঠেছিলো।
মন্ত্রী বলেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে যেহেতু ষড়যন্ত্র প্রমাণিত হয়নি এবং বিষয়টি এখনো আদালতের কাছেই বিচারাধীন আছে, তাই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাও আদালতের। চাইলে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা আদালতের কাছে তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ ও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন। আদালতই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন।
মামলার নথি সূত্রে জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট যাওয়ার পথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানের ‘আকাশ প্রদীপ’ নামের বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজ যান্ত্রিক ত্রুটির কবলে পড়ে। যে কারণে উড়োজাহাজটি মাঝপথে তুর্কমেনিস্তানের আশখাবাদ বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়। ইঞ্জিন অয়েলের ট্যাংকের একটি বি-নাট ঢিলা থাকায় ওই বিপত্তি ঘটে। সেখানে ত্রুটি সারিয়ে চার ঘণ্টা পর বুদাপেস্টের উদ্দেশে রওয়ানা হয় ‘আকাশ প্রদীপ’।
উড়োজাহাজটির ইঞ্জিন অয়েলের ট্যাংকের নাট ঢিলা হওয়ার পেছনে নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল কি-না, তা খতিয়ে দেখতে পরের দিন ২৮ নভেম্বরই পাঁচ সদস্যের কমিটি করে বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়। পরে ঘটনা তদন্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আরও দু’টি তদন্ত কমিটি গঠন করে। ওই দুই কমিটি এরইমধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিয়েছে।
আদালত পুলিশের সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এ এফ এম মনিরুজ্জামান মন্ডল বাংলানিউজকে জানান, তদন্তে নাশকতা, অন্তর্ঘাতী কার্য ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের কোনো উপাদান পাওয়া যায়নি। এ কারণে মামলার অভিযোগ প্রমাণ হয়নি।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এজাহার নামীয় এক নম্বর আসামি সিদ্দিকুর রহমান ও এজাহার বহির্ভূত আসামি নাজমুল হক এবং আসামি শাহ আলম তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথ পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। তারা যদি সঠিক দায়িত্ব পালন করতেন, তাহলে প্রধামন্ত্রীর বিদেশ সফরে নিয়োজিত উড়োজাহাজে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিত না। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর জীবনহানির মতো ঘটনা ঘটলে, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তো। এমন স্পর্শকাতর বিষয়টি গুরুত্বহীনভাবে সম্পন্ন করায় আসামিদের বিরুদ্ধে তাচ্ছিল্য সহকারে যন্ত্রপাতি দিয়ে কাজ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। মামলার সার্বিক তদন্তে এজাহার নামীয় আসামিদের বিরুদ্ধে নাশকতা, অন্তর্ঘাতী কার্য ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগ প্রমাণ হয়নি। তাই আসামিদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি এবং এজাহার নামীয় আসামি সিদ্দিকুর রহামান ও এজাহার বহির্ভূত আসামি নাজমুল হক এবং আসামি শাহ আলমদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ২৮৭ ধারায় প্রসিকিউশন দাখিল করা হলো। ’
গত ৭ ডিসেম্বর তদন্ত কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার মাহবুবুল আলম এ চূড়ান্ত প্রতিবেদন ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে জমা দেন। অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার চার দিন পরই ১১ ডিসেম্বর ওই বিমান কর্মকর্তাদের জামিন দিয়েছেন আদালত।
জামিনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন- বিমানের প্রধান প্রকৌশলী (প্রডাকশন) দেবেশ চৌধুরী, প্রধান প্রকৌশলী (কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স) এসএ সিদ্দিক, প্রধান প্রকৌশলী (মেইনটেন্যান্স অ্যান্ড সিস্টেম কন্ট্রোল) বিল্লাল হোসেন, প্রকৌশল কর্মকর্তা এসএম রোকনুজ্জামান, সামিউল হক, লুৎফর রহমান, মিলন চন্দ্র বিশ্বাস, প্রকৌশলী জাকির হোসাইন, টেকনিশিয়ান সিদ্দিকুর রহমান, ইঞ্জিনিয়ার নাজমুল ও জুনিয়ার টেকনিশিয়ান শাহ আলম।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৮
আরএম/এইচএ