ইউএস-বাংলার এমন আন্তরিকতায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন হতাহত যাত্রীদের স্বজনসহ সংশ্লিষ্টরা। শেষ পযর্ন্ত ইউএস-বাংলার এমন ভূমিকাই দেখতে চান তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুর্ঘটনার পর থেকে আহতদের সবার চিকিৎসা খরচ চালাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। ঘটনার পরের দিন একটি বিশেষ ফ্লাইটে দুর্ঘটনায় পড়া যাত্রীদের স্বজনদের কাঠমান্ডুও নিয়ে যায় তারা। সেখানে স্বজনদের থাকা-খাওয়ার খরচ, পরিবহন সুবিধাও দেয় তারা। আহত ১০ বাংলাদেশির মধ্যে ছয় জনকে এরইমধ্যে দেশে এনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আরও দু’জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়েছে ইউএস-বাংলারই খরচায়। এছাড়া আরেকজনকে নিয়ে আসা হবে সোমবার (১৯ মার্চ), অপরজনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ভারতে।
আর যে ২৬ বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন, তাদেরও মরদেহ দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া চলছে। ময়না-তদন্ত শেষে সোমবারই মরদেহগুলো দেশে ফেরার কথা।
ওই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তা নাজিয়া আফরিন চৌধুরী। তার মরদেহ নিতে নেপালে অবস্থান করছেন স্বামী প্রকৌশলী মনিরুল হাসান।
ইউএস-বাংলার ভূমিকায় সন্তোষ প্রকাশ করে নাজিয়ার বড় বোন মিলি চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্বজন হারানোর ব্যথা কখনও শেষ হওয়ার নয়। মরদেহ আনতে নেপালে আমাদের আত্মীয়রা রয়েছেন। দুর্ঘটনার পরবর্তীতে ইউএস-বাংলা আমাদের পূর্ণ সহায়তা দিচ্ছে। ওখানে (নেপাল) ওরা (ইউএস বাংলা) যথেষ্ট চেষ্টা করে যাচ্ছে। মিথ্যা কথা বলা ভুল হবে। অনেক যাত্রীর স্বজনদের টাকা-পয়সা দিয়েও সহায়তা করছে তারা। এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ, হোটেলে নেওয়া, ট্যাক্সি ভাড়া, হাসপাতাল টু হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইউএস বাংলার খরচে। আমরা ইউএস-বাংলার পদক্ষেপে এখন পর্যন্ত সন্তুষ্ট। এখনও তাদের কোনো দোষ-ত্রুটি খুঁজে পাইনি। ’
দুর্ঘটনায় আহত যাত্রী সৈয়দা কামরুন্নাহার স্বর্ণার ভাই সৈয়দ আতাউর রহমান পান্না বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমার বোন ধীরে ধীরে ভালো হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ইউএস-বাংলার সহায়তা-আন্তরিকতা রয়েছে। ঢামেকে প্রতিদিনেই খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তাদের একজন প্রতিনিধি থাকে। আশা করি শেষ পর্যন্ত এমন আন্তরিক থাকবে তারা। ’
দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার এফএইচ প্রিয়ক ও তার আড়াই বছরের ফুটফুটে কন্যা তামাররা প্রিয়ন্ময়ী। প্রাণে বেঁচে গিয়ে এখন ঢামেকে চিকিৎসাধীন প্রিয়কের স্ত্রী আলমুন নাহার অ্যানি এবং ফুফাত ভাই মেহেদী হাসান ও তার স্ত্রী স্বর্ণা। শনিবার (১৭ মার্চ) ইউএস-বাংলার একটি প্রতিনিধি দল প্রিয়কের বাড়িতে গিয়ে পরিবারটির পাশে আজীবন থাকার প্রতিশ্রুতিও দেয়।
দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সহায়তার ব্যাপারে ইউএস-বাংলার বিক্রয় ও জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) কামরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘দেশের ইতিহাসে এমন মর্মস্পর্শী ঘটনার শিকার পরিবারের পাশে থাকা আমাদের দায়িত্ব। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমাদের নেই। তবু আমরা সমবেদনা জানিয়েছি। সব ধরনের সহায়তা দিতে পাশে রয়েছি। ’
দেশের বেসরকারি বিমান পরিবহন খাতে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা ইউএস-বাংলা ২০১৪ সালে যাত্রার পর এখন পর্যন্ত ৩৫ হাজারের বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। যাত্রীসেবায় সুনামের কারণে দেশ-বিদেশে ভ্রমণকারী মানুষের পছন্দের এয়ারলাইন্সে পরিণত হয়।
গত ১২ মার্চ কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণকালে বিধ্বস্ত হয় প্লেনটির ফ্লাইট বিএস২১১। প্লেনটিতে চার ক্রুসহ ৭১ আরোহী ছিলেন। দুর্ঘটনায় প্রাণ যায় ৪৯ জনের, যাদের মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি। আহত হন ১০ বাংলাদেশি।
দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে ইউএস-বাংলা। এ বিষয়ে এয়ারলাইন্সটির জিএম কামরুল ইসলাম বলেন, যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে ইউএস-বাংলা খুবই সচেষ্ট। প্রত্যেক যাত্রীর জন্য বিমাসুবিধা নিশ্চিত রয়েছে। তবে বিমার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কিছু প্রক্রিয়াগত বিষয় আছে। আমরা বিমা প্রতিষ্ঠানকে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েছি। ইতোমধ্যে তাদের তদন্ত শুরু হয়েছে। ক্ষয়-ক্ষতি নির্ধারণ করতে তদন্ত টিমও পাঠানো হয়েছে।
বিমা ইন্স্যুরেন্সের আওতায় প্লেন, যাত্রী ও পাইলটদের আলাদা ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পাইলটদের ১ থেকে ২ লাখ ডলার আর যাত্রীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫০ হাজার ডলার ইন্স্যুরেন্স সুবিধা থাকে। এ হিসাবে নিহত প্রত্যেক যাত্রীর স্বজনের ন্যূনতম ৫০ হাজার মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার কথা।
বাংলাদেশ সময়: ২০২১ ঘণ্টা, মার্চ ১৮, ২০১৮
এমসি/এইচএ/