রোববার (২২ এপ্রিল) সোনারগাঁও হোটেলে সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করেছে ইউএস-বাংলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ইমরান আসিফ।
তিনি বলেন, ড্যাশ-৮ কিউ ৪০০ টার্বোপ্রপ এয়ারক্রাফট বিশ্বের সর্বাধুনিক এয়ারক্রাফটগুলোর মধ্যে অন্যতম।
ইমরান আসিফ বলেন, নেপালে দুর্ঘটনার শিকার ইউএস-বাংলার পাইলট ছিলেন ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান। কো-পালিট ছিলেন ফাস্ট অফিসার পৃথুলা রশিদ। ক্যাপ্টেন আবিদ বাংলাদেশের প্রথিতযশা প্রশিক্ষক পাইলটদের একজন। ইউএস বাংলায় যুক্ত হবার আগে তিনি আরো তিনটি বাংলাদেশি এয়ারলাইন্সে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একজন জেট ফাইটার পাইলট ছিলেন। ক্যাডেট হিসেবে গ্র্যাজুয়েশনের সময় উড্ডয়নে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন তিনি। কানাডার মন্ট্রিল থেকে কিছু দিন আগে ড্যাশ-৮ এয়ারক্রাফট ফ্লাই করে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তার সর্বমোট ফ্লাই আওয়ার ৬ হাজার ঘণ্টা। তার ফ্লাইং ক্যারিয়ারে কাঠমান্ডুতেই তিনি তিন শতাধিক ফ্লাইট অবতরণ-উড্ডয়ন করেন।
‘কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিভ্রান্তিকর কিছু ছবি ও তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে দুর্ঘটনায় কবলিত বিমানটি পুরনো ছিল, পাইলটকে জোর করে কাঠমান্ডু পাঠানো হয়, তিনি অবসাদগ্রস্ত ছিলেন। ’
তিনি বলেন, এয়ারক্রাফটের বয়সের সঙ্গে তার উড্ডয়ন যোগ্যতার কোনো সম্পর্ক নেই। ইউরোপ-আমেরিকায় এখানো ৩০ বছরের অধিক বয়সের এয়ারক্রাফট দিয়ে নামকরা এয়ারলাইন্সগুলো যাত্রী পরিবহন করছে। এয়ারক্রাফট নতুন বা পুরানোর ক্ষেত্রে এই ধরনের মেইনট্যান্স প্রসিডিউর মেনে চলতে হয়। একটি নতুন বিমানের ক্ষেত্রে যে নীতিমালা অনুসরণ করা হয়, পুরনো প্লেনও একই নিয়মে ছাড়পত্র পেয়ে থাকে। দুর্ঘটনায় কবলিত এয়ারক্রাফটটি সদ্য সি-চেক সম্পন্ন করা হয়েছিল। এর ইঞ্জিনও ছিল সদ্য পূর্ণাঙ্গ ওভারহল।
‘দুর্ঘটনার পর গণমাধ্যমে ইউএস বাংলার উড়োজাহাজ হিসেবে এমন কিছু ছবি প্রকাশ করা হয়েছে যা আদৌ ইউএস বাংলার নয়। বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারপোর্টে অতীতে ঘটা প্লেন দুর্ঘটনার ছবি বিভিন্ন গণমাধ্যমে ইউএস বাংলার বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১২ মার্চের দুর্ঘটনার প্রকৃত ভিডিও ফুটেজ অদ্যাবধি কোথাও প্রকাশিত হয়নি। ’
ইউএস বাংলার সিইও বলেন, একজন পাইলট আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দৈনিক ১৪ ঘণ্টা ডিউটিতে থাকতে পারেন। রুল অনুযায়ী এর মধ্যে ১১ ঘণ্টা তিনি ফ্লাই করতে পারেন। ক্যাপ্টেন আবিদ ওইদিন কাঠমান্ডু থেকে ফিরে আসলে তার ফ্লাই আওয়ার হতো ৭ ঘণ্টার কম। আর যে কোনো প্লেনের ফ্লাইং অপারেশনের ক্ষেত্রে ক্যাপ্টেনের ইচ্ছাই চূড়ান্ত। একজন পাইলট মাঝ আকাশেও উড্ডয়ন নিয়ে সন্দেহের মধ্যে পড়লে তিনি উড়োজাহাজ ফিরিয়ে আনতে পারেন। অহরহ এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
‘আমাদের রেকর্ড অনুযায়ী শেষ সাত কর্মদিবসে আবিদ ১৫ ঘণ্টা ফ্লাই করেছেন। নেপাল ও বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন জানিয়েছে, দুর্ঘটনা কবলিত এয়ারক্রাফটে কোনো টেকনিক্যাল ত্রুটি ছিল না। ইউএস বাংলার নিজস্ব তদন্তেও কারিগরি ত্রুটি পাওয়া যায়নি। ’
তিনি বলেন, ক্যাপ্টেন আবিদ শারীরিক ও মানসিকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। তার অবসাদগ্রস্ত হওয়া বা জোর করে পাঠানোর প্রশ্নটি অবান্তর। ক্যাপ্টেন আবিদের দুর্ঘটনা পরবর্তী সর্বশেষ মেডিকেল রিপোর্টটিতে তিনি ফ্লাইয়ের জন্য ফিট ছিলেন। তার মেডিকেল রিপোর্ট ছিল ক্লাস ওয়ান। বাংলাদেশের পাইলটদের মধ্যে ১২ জন ডিসিপি পাইলট আছেন, যার মধ্যে আবিদ অন্যতম। ইউএস বাংলার রয়েছে পাইলটদের ফ্লাইয়িং মনিটরিং করার জন্য এফডিএম। এই বিভাগ প্রতিদিনের প্রতিটি ফ্লাইট সুক্ষ্মভাবে মনিটর করে। এফডিএম পর্যালোচনা করে ক্যাপ্টেনের ফ্লাইয়িংয়ের কোনো অসঙ্গতি থাকলে তাকে ব্রিফ করা হয়। প্রয়োজনে ইন্সস্ট্রাকটরের মাধ্যমে আরো ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়।
কো-পাইলট পৃথুলাও কর্মক্ষেত্রে অত্যন্ত সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন জানিয়ে সিইও বলেন, তিনি প্রায় দুই বছর ধরে ইউএস বাংলায় কর্মরত ছিলেন। তিনি ছিলেন ‘অ্যারিরাং এভিয়েশনে’ থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বৈমানিক ও তার ফ্লাইয়িং আওয়ার ছিলো ৪০০ ঘণ্টার অধিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৮
এমআইএইচ/এসএইচ