কয়েকদিন থেকে রাজধানীর বিভিন্ন বাসস্ট্যাণ্ড, রেলস্টেশন, সদরঘাট ঘুরে যে চিত্র দেখা গেছে, তাতে মানুষের চাপ অনেকটাই ‘বোঝা’ হয়ে যাচ্ছে যানগুলোর জন্য। এমন ঘটনাও ঘটছে যে, অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে ট্রেন বিকল হয়ে যাচ্ছে, কিংবা টানতে পারছে না।
অন্যদিকে রেলের শিডিউল বিপর্যয়, লঞ্চে দুর্ঘটনায় আর মহাসড়কের যানজট রীতিমত ভীতির বিষয়। তাই অনেকেই এসব পথ ছেড়ে আকাশপথেই বাড়ি ফিরেছেন, ফিরছেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, সেখানেও যাত্রীদের চাপ। এতো যাত্রী যে বসার জায়গা পর্যন্ত নেই।
সূত্র জানিয়েছেন, এই টার্মিনালে সবমিলিয়ে দৈনিক দুই হাজার যাত্রীকে সেবা দেওয়ার ক্যাপাসিটি রয়েছে। কিন্তু একটি এয়ারলাইন্স-ই দৈনিক দুই হাজার যাত্রী ঢাকা থেকে পরিবহন করছে। চারটি সংস্থা মিলে দৈনিক ঈদযাত্রায় গন্তব্যে আসা-যাওয়া করছেন প্রায় ১০ হাজার যাত্রী। এর মধ্যে ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন ৭ হাজার আর ঢাকায় আসছেন প্রায় ৩ হাজার যাত্রী। যাতায়াতে মানুষের আকাশপথের প্রতি আগ্রহ এতোই বেড়েছে যে এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলো ঈদে টিকিট দিতে পারেনি। এতে অনেক যাত্রীই খালি হাতে ফিরেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দৈনিক দুই হাজার যাত্রী ঢাকার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে। নভোএয়ার প্রায় এক হাজার ৩শ’ জন, রিজেন্ট এক হাজার যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছে। আর রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স প্রতিদিন প্রায় এক হাজার পাঁচশ যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া ঢাকা বাইরে থেকে আসছেন আরো প্রায় তিন হাজারের মতো যাত্রী।
এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, যাত্রীর তুলনায় এয়ারক্র্যাফট কম। চাহিদা প্রচুর কিন্তু সংকুলান হচ্ছে না। এমনকি বোয়িং (১৪৬ আসনের এয়ারক্র্যাফট) দিয়ে পর্যন্ত ফ্লাইট পরিচালনা করা হচ্ছে।
ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন গন্তব্যে ইউএস-বাংলা প্রতিদিন ২০টি, নভোএয়ার ১৬টি, বিমান ১০টি আর রিজেন্ট ৮টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
এই মুহূর্তে আকাশপথে যাত্রীদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ইউএস-বাংলা। কেননা, তাদের ফ্লাইট অপারেশনও যেমন বেশি, তেমনি সেবাও মানসম্মত। এই সংস্থাটির জেনারেল ম্যানেজার (কাস্টমার সার্ভিস) তারিক হাসান বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রতিদিনই চাহিদা বাড়ছে। প্রচুর চাপ। টিকিট দিতে পারিনি বলে অনেকে ফিরেও গেছেন। আরো বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারলে ভাল হতো। ’
শাহজালালের অভ্যন্তরীণ টার্মিনালের সিকিউরিটি সুপারভাইজার মুর্শিদা আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, কোনো ফুসরত পাচ্ছি না। সেই সকাল সাতটা থেকে লাগেজ চেক করে যাচ্ছি। ডমেস্টিকে এতো চাপ আমি দেখিনি।
সবচেয়ে মজার কথা হলো, প্রতিবছর ঈদে নতুন নতুন যাত্রী তৈরি হয়। এবারও রেগুলার যাত্রীর চেয়ে নতুন যাত্রী বেশি। আর একবার যারা ঈদে আকাশ পথে বাড়ি যান, তারা সারাবছরই আকাশ পথেই যেতে চান। তাই এই টার্মিনালের সুযোগ, সুবিধাও বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন বেসরকারি এয়ারলাইন্স সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মকর্তারা বলেন, সবসময় একরকম চাপ থাকে না। কখনো কখনো অনেক বেশি হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়-সকালে চারটি সংস্থাই তাদের যাত্রী নিয়ে যায়। এক্ষেত্রে বোর্ডিং পাসের পর বসার জায়গা পর্যাপ্ত নয়। আটটি বাস এসে তাদের যাত্রী নেয়। বাসগুলো দাঁড়ানোর জায়গা নেই। অন্যদিকে ঢাকার বাইরের এয়ারপোর্টগুলোর উন্নয়নও দ্রুত করা দরকার। ভিজিবিলিটি কম থাকায় বিকেল পাঁচটার পর উড়োজাহাজ নামতে পারে না। তাই সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করলে আকাশপথে দ্রুত পরিবহন খাতের প্রসার হবে।
ঈদে প্রথমবারের মতো আকাশপথে বাড়ি ফিরছেন রংপুরের নূরজাহান আক্তার। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, সড়কে অনেক জ্যাম। আর শরীর ভাল না। তাই একটু টাকা বেশি লাগলেও প্লেনেই যাচ্ছি। সঙ্গে থাকা মেয়েটিকেও বেশ উৎফুল্ল দেখা গেল। তারা সৈয়দপুর নেমে সড়ক পথে রংপুর যাবেন।
ইউএস-বাংলার কর্মকর্তা তারিক হাসান বলেন, চট্টগ্রামের পর যশোর এবং সৈয়দপুরের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। যাত্রী সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। তাই সুযোগ, সুবিধা আরো বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৮
ইইউডি/জেডএস